আমরা মহাবিশ্বের উদ্ভবের কথা ভাবলেই ‘বিগ্ ব্যাং’ থিয়োরি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত ইনফ্লেশন ইউনিভার্স থিয়োরির কথা ভাবি কেননা এগুলোই বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ধারণা হিসেবে প্রচারিত। এসব পারস্পরিক সম্পর্কিত ধারণা অনুযায়ী তেরশ থেকে দু’হাজার কোটি বছর আগে এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছিল যখন একটি পরা-আণবিক গোলক বিক্ষিপ্তভাবে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সব দিক থেকে স্থান,কাল, বস্তু ও শক্তির ওপর আছড়ে পড়েছিল। এই সবকিছু বা সমগ্র মহাবিশ্বের উদ্ভব হয়েছে এক অসীম গভীরতার প্রাথমিক বিন্দু থেকে, যাকে বলা হয় সিংগুলারিটি বা অনন্যতা—
স্থান-কালের এমন একটি বিন্দু যেখানে স্থান-কালের বক্রতা অসীম হয়।
সময়কালের বাইরের অবস্থানে থাকা এই বিন্দু হঠাৎ যেন কোন কারণ ছাড়াই কোথা থেকে উদ্ভূত হয় শুধুমাত্র হঠাৎ বিস্ফোরণ শুরু করার জন্য। মোটামুটি দশ বিলিয়ন বছরের ওপর এই নতুন সৃষ্ট স্থান-কাল- বস্তু-শক্তির বিকাশ হয় সুগঠিত সুনিয়ন্ত্রিত কর্মপদ্ধতির নক্ষত্র, ছায়াপথ, উপগ্রহ ও আমাদের বিশ্বের মধ্যে। অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্বন্ধে কি মতবাদ ব্যক্ত করেছেন?
নাসা বলেছে যে দশ বিলিয়ন থেকে কুড়ি বিলিয়ন বছর আগে এই মহাবিশ্বের উদ্ভব হয় এক পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে যা বস্তুজগতকে সব দিক থেকে ধাক্কা মারে।
ইউ সি বার্কলে বলেন, বৃহৎ বিস্ফোরণ তত্ত্ব বলে দূরবর্তী অতীতে কিছু সময় ধরে কিছুই ছিল না। ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন বা শূন্যতায় চাঞ্চল্য বলে যে প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল তাকে অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্টরা (যারা নক্ষত্রের রাসায়নিক ও পদার্থতত্ত্বগত বিদ্যা নিয়ে কাজ করেন) বলেন অনন্যতা বা সিংগুলারিটি। এই অনন্যতা থেকে, যার আকৃতি একটি মুদ্রার মতো, আমাদের মহাবিশ্ব জন্ম নেয়।
মিচিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে প্রায় পনের বিলিয়ন বছর আগে এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণের ফলে মহাবিশ্বের প্রসারণ শুরু হয়। এই বিস্ফোরণ বৃহৎ বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং নামে খ্যাত। এই সময়ে সবরকম বস্তু ও শক্তি একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। এর আগে ঠিক কি ছিল তা একেবারেই অজানা এবং সম্পূর্ণ অনুমানের বিষয়। এই ঘটনাটা কোন সাধারণ বিস্ফোরণের মত ছিল না, বরং একে অপরের দিকে ধাবমান সবরকম ক্ষুদ্র পদার্থের অংশগুলো মহাশূন্যকে ভর্তি করে দিয়েছিল এই বিস্ফোরণের ফলে।
পিবিএস-এর মতে প্রাথমিক পরমাণু যা কিনা মহাবিশ্বে সব রকম বস্তুকে ধারণ করেছিল তার একটা প্রথমদিকে বিস্ফোরণ ঘটে।
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যড্ভান্সমেন্টস্ সায়েন্স-এর মতে কিভাবে মহাবিশ্বের বিবর্তন হলো সেই সম্বন্ধে সহমতের ভিত্তিতে গত পঞ্চাশ বছরে প্রচুর পরিমাণে তথ্যপ্রমাণ সংগৃহীত হয়েছে। এই মতবাদ অনুযায়ী বৃহৎ বিস্ফোরণের পরে মহাবিশ্বের এক স্ফীতি হয় যা ক্রমশ প্রসারিত হতে থাকে—- যা আজও চলছে এবং এখনও মহাবিশ্ব বর্ধিত হয়ে চলেছে।