সৌমিতা রায় চৌধুরী

 “নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, 

      বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।”

ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ। বিশালায়তন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ফসল কাটার উৎসব পালন করা হয়। প্রধানত মকরসংক্রান্তির দিনটিকে ফসল কাটার উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। বাংলার নবান্ন উৎসবের মতো সুদূর দক্ষিণে তামিলনাড়ুতে পালিত হয় পোঙ্গল উৎসব। এই পোঙ্গল উৎসবে তামিলরা সেদ্ধ চাল ও গুড় ফুটিয়ে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে। এই ভোগপ্রসাদকে পোঙ্গল বলা হয়। আবার তামিল ভাষায় পোঙ্গল শব্দের অর্থ ফোটানো। 

তামিলদের এই পোঙ্গল উৎসব প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো। তামিল জাতির ঐতিহ্যবাহী উৎসব এটি। প্রধানত সূর্য দেবতার পূজা করা হয়। সূর্যের কিরণেই ফসল পরিপুষ্ট হয়। তাই প্রকৃতির এই দানকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। 

পোঙ্গল উৎসবের সময় তামিল জনগণ নতুন জামাকাপড় পরে এবং উপাদেয় খাদ্য রান্না করে নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। চারদিন ধরে এই উৎসব পালন করা হয়। প্রথম দিনের পোঙ্গলকে ‘ভোগী পোঙ্গল’ বলা হয় এবং এইদিন ঘরদোর পরিষ্কার করা হয়। সূর্যের পাশাপাশি বৃষ্টির দেবতা এবং মেঘের দেবতারও স্তব গাওয়া হয়। বিশেষ আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আগুনের চারপাশে নাচ করে ফসলের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। বাড়ির প্রবেশ দ্বারে রঙ্গোলি তৈরি করা হয়। 

পোঙ্গলের দ্বিতীয় দিনটির নাম ‘সূর্য পোঙ্গল’। মহিলারা এই দিনে মাটির পাত্রে চাল এবং দুধ একসাথে সেদ্ধ করে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য নিবেদন করে। রান্নার জায়গায় হলুদ পাতা এবং মালা দিয়ে সাজানো হয়। এছাড়া আঁখ, কলা, নারকেল এই নৈবেদ্যতে দেওয়া হয়। মহিলারা রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে এবং পুরুষেরা সূর্য নমস্কার ও অন্যান্য আচার অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকে। এইদিন কলাপাতা এবং নতুন ‘পোঙ্গল কোলাম’ দিয়ে ঘর সাজানো হয়। পোঙ্গল প্রস্তুত হয়ে গেলে ভগবান সূর্য এবং প্রভু গণেশের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। 

তৃতীয় দিনের পোঙ্গল উৎসবের নাম ‘মাত্তু পোঙ্গল’। মাত্তুর অর্থ হলো গরু। গরু, ষাঁড়, বলদ কৃষক পরিবারে কৃষি কাজে সহায়তা করে। তাই এই গবাদি পশুকেও এই পোঙ্গল উৎসবে পুজো করা হয়। ঘন্টা এবং মালা দিয়ে তাদের সাজানো হয় ও গায়ে রং লাগানো হয়। এরপর গবাদি পশুদের নিয়ে যাওয়া হয় শহরের কেন্দ্রস্থলে পোঙ্গল খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে। এই অনুষ্ঠানের পর গবাদি পশুর আশেপাশে কোনো অশুভ শক্তি যাতে না আসে, সেই কারণে একটি বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। 

‘কানুন পোঙ্গল’ হলো চতুর্থ দিনের উৎসব। এইদিন তামিল পরিবারগুলো পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলিত হয়। সমস্ত আচার অনুষ্ঠান শেষে হলুদ পাতা বিছিয়ে অবশিষ্ট পোঙ্গল নৈবেদ্য ওই পাতাগুলোর ওপর সাজিয়ে দেওয়া হয়, যাতে পাখিরা সেগুলো খেতে পারে। 

তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল উৎসবের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে এই উৎসব পালন করা হয়। এই মাসটি তামিলদের কাছে অত্যন্ত শুভ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *