তুষার বরণ হালদার
লেখক পরিচিতি
(তুষার বরণ হালদার নদীয়ার আড়ংঘাটা গ্রাম থেকে স্কুল শিক্ষা শেষ করে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন। পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি পান নদীয়া জেলার অসংগঠিত শিল্প ও শ্রমিকদের ওপর গবেষণা করে । গবেষণা কর্মের ওপর ভিত্তি করে দুটি বই এবং বিভিন্ন গ্রন্থ ও জার্নালে বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ কর্তৃক প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধের জন্য তিন বার পুরস্কৃত হন। এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য। বর্তমানে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দক্ষিণবঙ্গের একটি কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক।)
ভারতবিদ্যা সাধক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যার্ণব (১৮৬১-১৯১৮)
শ্রীশচন্দ্রের কৌলিক পদবী বসু হলেও নামের শেষে প্রাপ্ত উপাধি বিদ্যার্ণব দিয়েই তিনি অধিক পরিচিত। খুলনা জেলার বাসিন্দা পিতা শ্যামাচারণ বসু কর্মসূত্রে অবিভক্ত ভারতের লাহোর শহরে, সেখানেই শ্রীশচন্দ্রের জন্ম ১৮৬১ সালে। অল্প বয়সে পিতৃহারা হয়ে মায়ের অধীনেই তাঁর লেখাপড়া শুরু। মেধাবী শ্রীশচন্দ্র ১৮৭৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় তৃতীয় হন। ১৮৮১ সালে স্নাতক হন। এরপর লাহোরের একটি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা ঘটে। ইতিমধ্যে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মিরাট শহরে আইন ব্যবসায় নিযুক্ত হন।
আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সময় হিন্দু আইন সম্পর্কে জানার জন্য সংস্কৃত শিখে নেন এবং মনু, পাণিনি প্রমুখের আইন বিষয়ক বই গুলি অধ্যয়ন করেন। সেই সঙ্গে জার্মান ভাষাও ভালো করে তিনি জানতেন। ১৮৮১ সালে অস্ত্যাধ্যায়ী ব্যাকরণ ইংরিজিতে অনুবাদ করেন। ফলে একজন প্রাচ্যবিদ্যা পণ্ডিত হিসাবে তাঁর খ্যাতি বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। চলতে থাকে একদিকে আইন ব্যবসা অন্য দিকে ভারতবিদ্যাচর্চা।
এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করতে হয়। গাজীপুরে থাকার সময়ে বিচারের জন্য একটি মামলা এসেছিল যার রায় দেবার জন্য তাঁকে বিভিন্ন মুসলমান প্রধান দেশ গুলোর নানা ধর্ম শাস্ত্র পাঠ করতে হয়েছিল। আরবী ভাষা জানা থাকায় তিনি ওই সব গ্রন্থ মুলে পাঠ করে ছিলেন। মামলাটির মূল বিষয় ছিল সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলিম দের সঙ্গে ওয়াহাবীরা একসাথে নামাজ পড়ার অধিকার আছে কিনা। যেহেতু তিনি ইতিমধ্যেই সব মুসলিম ধর্ম শাস্ত্র গুলি পাঠ করেছিলেন তাই তিনি তার ভিত্তিতে রায় দিলেন সমস্ত ধরণের মুসলিম দেরই নামাজ পড়ার অধিকার আছে। সেদিনের রায় ভারতের আইনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
তিনি পাণিনি কার্যালয় থেকে হিন্দু শাস্ত্রের দুর্লভ সব অপ্রকাশিত গ্রন্থ Sacred Books of the Hindus নামে একটি সিরিজের মাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই সিরিজের বেশিরভাগ রচনায় ছিল তাঁর। দারাশিকোর lekha’ ইবন শাজাহান ‘ তিনি মূল ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। বিরামহীন জ্ঞানচর্চায় অতিবাহিত করে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে ১৯১৮ সালে তিনি মারা যান।