বাসব দাশগুপ্ত

ঘুমের মধ্যে কতকিছু ঘটে যায়

                            তুমি বুঝতে পারো না 

       মাঝেমধ্যে একটা রাত নারী থেকে পুরোপুরি

                             পুরুষ হয়ে ওঠে , 

       চাহিদা বদলে মনে পড়ে কোনো এক 

                              ক্লান্ত পোতাশ্রয় উন্মাদ হাওয়ায় হাওয়ায়

        ভাসিয়ে দিয়েছে  জাহাজের সুসজ্জিত কেবিন–

                     কোন ফাঁকে তৃষ্ণার্ত ঠোঁটের গায়ে 

         অচেনা স্মৃতির দাগ অতি ধীরে মোহন যন্ত্রণা জাগায়

                     অথচ কাল রাতে সমস্ত নক্ষত্রের আকাশে

          অন্য কেউ , অন্যজন ছিলো না কখনও ।

.

           যতটুকু ভেসে আসে তার সবটুকু নোনা জলে ভরা

           কবে যে প্রখর রোদে জল সব সরে অচেনার ভূমিরূপ

           প্রকাশিত হয়ে লেখা হবে অন্য এক পৃথিবীর বিভিন্ন গান ,

           সুরগুলো হয়তো বা চেনা মনে হবে , মনে হবে শেষবার

           কোথায় শুনেছো , কে কোথায় গান গেয়েছিল , গান নাকি

           বিলাপমুখর ধ্বনি ! বুঝে কিছু প্রতিক্রিয়া জানাবে ভেবে 

           বহুদিন হলো ভুলে গেছো , বিস্মরণ নাকি ইচ্ছাকৃত এড়িয়ে

           নিরবতা দিয়ে চিরতরে মুছে ফেলে উদাস সেজেছো ! 

.

           তুমি কী সকল বোঝো , কেন ক্লান্তি , কেন বা হঠাৎই

                              ঘুম পায় , ঘুম যদি মুক্তি দেবে তবে 

           এত আয়োজন কেন , সমুদ্রের তীরবর্তী এত আলো, এত গাছ

                              মাথা উঁচু করে চিরকাল কাদের দেখেছে –

            ঘুমন্ত মেঘ থেকে বৃষ্টির জল আশা করে যতই প্রতিক্ষায় থাকো

                               দিন শেষে রাত হয়ে যাবে সিক্ত হবার সুখ

                                                            কখনও পাবে না ,

             এখন দিনান্ত যায় , অন্ধকার আসে , আলো আসে 

                       পুনরায় শোনা যায় কেউ তাকে  ডাকে বড় মোহময় স্বরে–

              তুমি ভাব এই ডাকে সাড়া দিয়ে অকুল পাথারে চলে যাবে ।

.

              শোনা যায় , এ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় সমান্তরাল রহস্য পৃথিবী  আছে,

              প্রতিটি মানুষের প্রতিরূপ সেখানে স্বচ্ছন্দে রয়েছে , এরা গান গেলে

              ওরাও গান গেয়ে ওঠে, এ পাশে দুঃখ পেলে ওরা কাঁদে বিষন্ন সুরে ,

              নাচ শুরু হলে দুলে ওঠে ওদের বাগান , তাল দেয় অজানা প্রতিভা–

              আমাদের চেনাজানা বাড়িঘর , লোকজন , প্রিয় বন্ধুস্বজন

              ওপাশে বসত করে , খায়-দায় , বিদ্যুৎ চমকালে ভয়ে সাদা হয়ে যায়

.

              এখন এইসব রহস্যময় উপকথা , লোককথা থাক , বরং স্পর্শ করি

                                            নিজের আঙুল , কোনকালে আংটি ছিলো না,

              যতটা যুক্তি দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় ততটাই চলাচল , তবু কেন

                                             মনে হয় , যা দেখি তার অন্য পাশে কাদের

               বসত বাড়ি , কারা কথা বলে , আনন্দঘন পরিবেশে হাসে

                                             বড় সুন্দর অজস্র শব্দ , এখনও অপেক্ষায়

               ওদের পৃথিবীতে মাটিতে লুটিয়ে আছে আকাশের মেঘ থেকে

                                           নেমে আসা অনাঘ্রাতা আদিম অক্ষর 

                আমি কি কুড়িয়ে নেবো , যত্নে লুকিয়ে রেখে পরে প্রাসাদ বানাবো !

                                 বিস্ময় গগন ছোঁবে , সার্থক লেখা হবে সে সব অক্ষরে ।

.

                আবার জাহাজের কথা বলি , পুনরায় খুঁজে পাওয়া শব্দের

                কথা বলি, কোথায় বসিয়ে রাখি উহাদের , গোপন কুঠুরিতে

                অথবা আকাশগঙ্গার নীচে হেমন্তের নক্ষত্র পতনের গর্তের ভিতরে

               এখানে আমাদের দিন খুব দুঃখে আছে , ততটা ভাবতে পারো

               তার থেকে অনেকটা বেশী , এ বলে ওকে চোর , ও বলে তাকে চোর

                জনতার পাওনা সব পিঁপড়ে খেয়েছে   , চিঠির অক্ষরগুলো বহু দিন 

               পরে থেকে থেকে ম্লান হয়ে ক্রমে মুছে গেছে , এ সব দুর্বল শব্দ দিয়ে

                আমাদের পরাভব বোঝানো যাবে না ,   নতুন অক্ষর চাই–

.

                  তোমাদের বলি ,  আমার দেহের মধ্যে লুকানো জাহাজ বলে  –

                  বর্ষা নেমেছে  , গোপন ডানা এইবার ঝাপটিয়ে উড়ে যাও     

                   উড়ে উড়ে যাও  , মধ্যরাতে যেখানে এখনও সমস্ত জোনাকি

                   আকাশের গায়ে তারাদের প্রতিবেশী হয়ে জ্বলছে নিভছে ,

                   এই জল নয় , অন্য এক আশ্চর্য সারস কেবলই দৃঢ় পায়ে 

                   হেঁটে যায় , ডাক দেয় , বলে এসো , এইখানে হানাহানি নেই ,

                   কেবলই রহস্য সৃষ্টি হয় , মানুষের দল মর্যাদা পায় মানুষের , 

                   হাত দিয়ে ছুঁয়ে থাক , অনেক নতুন শব্দ অপেক্ষায় রয়েছে

.

                 ঘুমের মধ্যে যা  কিছু ঘটে তার কিছু বোঝো আর কিছুটা না জানা ,

                                  জাহাজের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে একজন

                  ভোঁ দিয়ে সাবধান করে যাত্রা করে সুন্দরের দিকে, আমি কেবলই

                                   তাকিয়ে দেখি অনন্তের দিকে , দেখি , দেখে যাই

                                   আকাশের নক্ষত্র পতনের শব্দে কেঁপে ওঠে বৃক্ষরাজি

                          আবছায়া পথ দিয়ে একদিন সে নিশ্চিত আসবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *