শরদিন্দু সাহা

বাংলা কথা সাহিত্যের সুপরিচিত লেখক শরদিন্দু সাহা। লেখক সত্তা ও জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে তিনি অভ্যস্ত নন। নিছক লেখক হওয়ার জন্য তিনি কলম ধরেননি, সামাজিক দায়বদ্ধতাই তাঁকে সৃষ্টিকর্মে উদ্বুদ্ধ করে। শৈশব থেকে সৃষ্টিশীল মন লালন করে প্রস্তুতি পর্ব সারলেও নয়ের দশকের গোড়া থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। এ-পর্যন্ত শতাধিক গল্প, গোটা কয়েক উপন্যাস এবং অন্যান্য গদ্য মুদ্রিত হয়েছে। দশটি উপন্যাস আর সাতটি গল্পগ্রন্থ সহ মোট গ্রন্থের সংখ্যা ষোলো। ১৯৯৮ সালে ‘কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগার পুরস্কার’ পান। ২০০৪ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত সোমেন চন্দ পুরস্কার’ পান। ওই  বছরেই কাটোয়া লিটল ম্যাগাজিন মেলা কর্তৃক সংবর্ধিত হন। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘হল্ অব্ ফেম’-এ সম্মানিত করেন। ২০০৫ সালে ‘ভাষা শহিদ বরকত স্মরণ পুরস্কার’ পান। ২০০৭ সালে সাহিত্য আকাদেমি’র আমন্ত্রণে গৌহাটিতে বাংলা-অসমীয়া গল্পকার সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে ‘আমি’ পত্রিকা তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বিশেষ সম্মান দেন। প্রসার ভারতী’র আমন্ত্রণে নানা সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিলিয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রে ও ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। ইতিমধ্যেই নিজস্ব এক ঘরানা সৃষ্টি করে তিনি পাঠকের মন জয় করেছেন।

(নিত্য সমাজ সংসারের যে স্রোত আমরা চাক্ষুষ করছি তার অন্দরমহল জুড়ে ঘুমিয়ে রয়েছে কত তো কথাকাহিনী, যার পরতে পরতে  তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে গোপনে কত তো নারীর জীবনযন্ত্রনা, ধারক বাহক হয়ে গোটা সমাজকে যাঁরা ছাতার মতো আগলে রেখেছে, নিজের পরিচয় খুঁজে নিয়েছে, সকল ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে দিচ্ছে মুক্তি যুগ যুগ ধরে। কয়জনের কথাই বা আমরা মনে রাখি। তাঁদের গোপন ব্যথা, অনুচ্চারিত কথা গুমড়ে মরে যায়, চোখের জল কেউ মুছিয়ে দেয় না, গণ্ডীবদ্ধ শৃঙ্খলিত জীবনই তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। এমনই এক সাধারণ গ্রাম্য নারীর কথকতা ও চেতনায় চেনা জীবন ও সমাজপিষ্ট অব্যক্ত যন্ত্রনার পাঁচালি ‘পঞ্চমীর বারমাস্যা’  উপন্যাস।)

ছোট হোলা নদের নিমাই

ভাবের তার অন্ত নাই

লোকে কয় পাকিস্তান

আঁর ছোট বইন কদ্দিন ধরি কয়, ‘তোর কী মন চায় না আঙ্গ বাড়ি তুন ঘুরি আইতে?’ কার না মন চায় কদিনের লাই বেড়াই আই, ঘর সংসার হোলাপাইন হালাই যাই ক্যামনে ক । কতবার যে ওরে না কইরছি, শেষমেশ কইল, ‘তোর বাড়ি আর আঁই আইতাম ন।’ এই কতা তুই কইতি হারলি সুধা! এমনিই জীবনটা সংসারের জোয়াল টানি টানি হুকনা রসকস ছাড়া মরা গাছের মতো হই গেছে, এরপরে যদি তোরা এমন তিতা কথা কস, তা হইলে হরানটা ওষ্ঠাগত হই যাইব, এমনটা তোরা চাস। আঁর কতা হুনি বোনের মুয়ে আর কথা নাই। মন খারাপ করি হোলামাইয়ারে লই চলি গেল। এবার ঠিক কইরছি বোনেরে আর কষ্ট দিতাম না, যত সমস্যাই থাউক, সুধার বাড়ি যাইয়ুমই যাইয়ুম। আঁর স্বামীরে কইলাম, আমনে কদিন হোলামাইয়াগুনরে সাইমলান, বড় মাইয়ারে কইলাম ভাই বইনরে দেই রাইচ, আঁই এই অবসরে তোর মাসীর বাড়ির তুন ঘুরি আই। ঘুরি আই বইললে তো যাওন যায় না, কতকিছু গুছাই গাছাই যাইতে হয়। কন্নাই চাল, কন্নাই ডাইল, কন্নাই তেল, নুন, মাইয়ার কাম নি এগুন খুঁজি খুঁজি বার করার, রান্নাবান্নার কাম, রসুইঘর, উনুন লেপাপোঁছা, হাঁড়িকুড়ি ধোয়াহালা করা এও তো কম বড় কাম নয়। মাইনছি একঘর লোক রইছে, হক্বলে মিলিমিশি করে, তবুও চিন্তা তো কম হয় না। হক্বলে তো জানে জেঠি আছে, যাকে বুঝি বুঝি ভাগাভাগি করি কামকাজ দিব, কারও মাথায় কোনও চিন্তাও নাই, ঘাড় নাড়ি মানি লইব, আঁর জায়েরাও অমত করে না। না হইলে এত বড় বাড়ি, এত বড় উঠান, গোয়ালঘর,  কাঁচারিবাড়ি এত আম জাম শব্জি বাগান, এতকিছু সামলানো কী মুয়ের কথা! সাপখোপ, হোকামাকড়ের জ্বালা যন্তনাও তো কম নয়। হক্বলগুন তো আবার হমান নয়, এর এটা চাই ওর ঐটা চাই, হাতের কাছে না হাইলে গোঁসা। মাইনছি দেশের অবস্থা অন আগের চাই শান্ত। দেশ তো ভাগ হই গেছে কিছুদিন হইল। মাইনষের মনের অবস্থা কার কী রকম কে কইব। আঙ্গ গ্ৰামের অবস্থা তেমন খারাপ ন, লোকের ওই নি তেমন মাথাব্যথাও নাই, দেইখলে মনে হয়, তেমন দেশখানা ছিল তেমন দেশখানাই আছে, চোরচোট্টা আগে যেমন ছিল, তেমনিই আছে, ভালা মানুষদের মনও তেমনি কোনো হাল্টায়নি আর চাষাভুষা গরীব গুরবো মানুষরা দুবেলা হেঢ ভরি দুমুঠো খাইতে পারলেই সন্তুষ্ট। দেশভাগ লাভের অংশিদারী কে হইব, এইডা ভাবি ওরা কী কইরব। এর কারবারী  কোনো কালেই কি ওরা ছিল? যেমন মৌলবী পুরোহিতরা ধর্মের নাম করি কইছে তেমন চইলছে, অন দেশের হর্তাকর্তাদের কথাই তো শেষ কথা, আঙ্গ কথা আর কে শোনে ? শুধু তো পাকিস্তান ন, পূর্ব আর পশ্চিম, তাইতেই একদল লোক এখন আহ্লাদে আটখানা। হেথাগো লাভ লোকশান হেথারাই বোঝে।

বইনের বাড়ি তো যাইমু ঠিক কইরছি। ক্যামনে যামু? একলা একলা যাইতে ডর লাগে। ঘর তুন বার হইলেই মাইয়া মাইনষের কত জ্বালা। মাটির রাস্তার দুধারে কচি কচি ঘাস। বরো ধানের নাড়া বিছাই রইছে গোটা রাস্তায় যিয়ান তুন রিকশা ধরি যাইত হয় দুই আড়াই মাইল। নাড়া মাড়াই হাঁটতেই থাই, মচর মচর শব্দ হয়, ওই শব্দ কানে বাইজলে কী ভালা যে লাগে, কী আর কমু। ঘর তুন ত সচরাচর বার হই না। দুনিয়াটা খোলামেলা লাগে, কার লগে যে ভাগ করি লইয়ুম এই আনন্দ, উথলি উথলি উডের মনের ভিতরটা। মাঝে মাঝে মনে হয় জানেন নি মনের ভেতরেও আর একটা জীবন আছে, সেঢাও কথা কয় আঁর লগে চুপি চুপি, আঁই জানি না, ওই জীবনের মধ্যে কারা কারা আছে, সংসারের মানুষ আছে, আবার ভাবি ভাবি অস্থির হই সংসারের বাইরেও তো কত মানুষ আছে, ওদের চেহারাগুলা তো যায় আর আসে, আঁই ওগোরে ধইরত হারি না কেন। হারুম ক্যামনে! মাইয়া মাইনষের জীবনে স্বামীর লাই টান, হোলামাইয়ার লাই টান,  কী যে এমন টান ওরাই জানে। এই যে ঘরে হালাই আইছি, কত না দেখার কষ্ট, তাই বলি কী বাপের বাড়ির আত্মীয়স্বজনকে ভুলি থাইকতি হারি, কইতন বুঝি, হৌরবাড়ির আমোদ আহ্লাদে মত্ত হই রক্তের সম্পর্ক মুছি ফালাইছি দিনে দিনে। কেউ কেউ কইতে ছাইড়ত ন মাইয়া মানুষ স্বার্থপরের জাত, কিন্তু এই কথাটাই তো বোঝেন ন, কত কষ্ট করি ওদের স্বার্থপর হইতে হয়। একটা কথা দূর তুন ভাসি আইয়ের, আঁর হোলার ডাক, কোন ফাঁকে হলাই আইছে, যদি হায়ে কাঁটা হুটি যায়, তন কী হইব। ‘মা আঁইও যাইয়ুম, আঁরে হালাই যাইয়েন না। রিকশার ঘন্টিটা তনও কিরিং কিরিং আবাজে বাইজতে থায়, আঁই হক্বল কতা হুইনতাম হারিয়েন না, খালি মা শব্দটা হুনিই হিছন হিরি তাকাই দেই হোলাটা আঁর রিকশার পেছন দিই নেংটা হই ঝুইলছে। কারে কী কইয়ুম, নিজের কপাল চাপড়ানো ছাড়া অন আই কী করুম। কনডাই হাইয়ুম জামা, কনডাই হাইয়ুম প্যান্ট, মাইনষে কী কইব, অমুক বাড়ির তমুকের হোলা নেংটা পোদে ঘর তুন বার হই চলি আইছে। উডি আয়, উডি আয়, মারে ছাড়া বুঝি এক দুদিনও থাওন যায় না। হোলার চোয়ের জল দেই কাপড়ের খুঁটি দিই নিজের চোয়ের জল মুইছলাম। রিকশাওয়ালা কয়, ‘কাঁন্দেন ক্যান, কাঁদিয়েন না, আঁর কাছে হুকনা একখান গামছা আছে, হোলারে হরাই দেন।’  শরমও লাইগল। হরের জিনিস ক্যামনে লই। তবুও হাত বাড়াই লইলাম, হোলাগা আঁর কী খুশি! রিকশার চাকা গড়ায় আঁর মনও গড়ায়। উঁচানিচা মাটির রাস্তায় চাকা লাফাই উইঠলে হোলা আঁর ভয়ে লাফাই ওঠে। রিকশাওয়ালা হিরি হিরি চায়। ‘হোলারে কোলে লই বইয়েন। চিন্তা করিয়েন না, শক্ত করি ধরি রান, আস্তে আস্তে চালাইয়ুম এবার। রাস্তা সারাইবার লাই কারও মাথাব্যথা আছে দেয়েননি। সরকার তো নিজের গদি আঁকড়াই আছে, গরীব মাইনষের কথা ভাবে কজন। আঙ্গ যে কারো হেডে ভাত নাই,  রোগে ঔষধ নাই, মাথার উপরে চাল নাই, কার খেয়াল আছে কন।’ মিঞা আমনের সন্তানাদি কজন। ‘সেই দুঃখের কথা জিগান কিয়ের লাই ভাবিজান। কলেরা ভেদবমি হই হোলামাইয়া দুইটার ইন্তেকাল হইছে, আল্লাহ মুখ তুলি চাইছে, আলহামদুলিল্লাহ আঁর বিবির কোল জুড়ি আর যমজ হোলা আই সেই দুঃখ, সেই জ্বালা খানিকটা হইলেও মুছাই দিছে। মাইয়ার শোকটা ভুইলতাম হারিয়েন না কিছুতেই।’ চিন্তা করিয়েন না মিঞা দিন তো হুরাই যায় নি অনও, ফুটফুটে মাইয়া আবার জনম লইব আমনের ঘরে। ‘ফুল চন্দন হড়ুক আমনের মুয়ে। মাইয়াডা খোদার পেয়ারা  হইবার হরে মনে আঁর সুখ নাই। মনে হইড়লে বুকের ভেতরে চিন চিন করে। আঁর বিবির মুয়ের দিকে তাকাতাম হারি না।’ চোয়ের জল হালাইয়ের না মিঞা, হোলাগুনের অমঙ্গল হইব। ‘কত কষ্ট করি যে সংসার চালাই, সে কতা আমনেরে ক্যমনে কমু, নুন আইনতে পান্তা হুরায়। যা রোজগারপাতি হয় দুবেলা ভাতের জোগাড় কইরতেই চলি যায়, কাপড়চোপড় কিনি দিমু কী, ছিঁড়া প্যান্ট হরি ঘুরি বেড়ায়। বিবি মুখ ফুটি তো কিছু কয় না, আঁই বুঝিও কিছু কইরতাম হারিয়ের না। মনের দুঃখে কত কতা কইলাম, কিছু মনে করিয়েন না যেন।’ আমনে পাগল হইছেন নি, মাইনষে মাইনষের লগে কথা কই মনের জ্বালা জুড়াইব না তো কার কাছে কইব। ঠাঁ ঠাঁ মাইরা গরমে জান যায়, গা হুড়ি যার একটু জিরাই লই ভাবী, দর দর করি ঘাম হড়ের। আঙ্গ দেশের লোকজন কত কষ্ট করি মাথার ঘাম হায়ে ঝরাই সংসার চালায়। ঘরের বার না হইলে কী জীবন চিনন যায়! কত মাইনষের কত রকমের লড়াই। রিকশাটা ফের চইলতে থায়। মাইলের হর মাইল যায়, আঙ্গ বাড়িঘর কত যে দূরে চলি যায়, তালগাছ হার হয়, খেজুর গাছের রস বাই বাই হড়ে। কন যে যাই পৌঁছাইয়ুম, সেই চিন্তায় মরি। হোলাঢার ক্ষুধা লাগি গেছে। রিকশা আই থাইমল। মানুষজন গিজগিজ করের। একজন আঙ্গুল তুলি দেখাই দিল লম্বা রেললাইনের দিকে, সোজা লম্বালম্বি চলি গেছে উত্তর দিকে। 

হুশ করি একটা রেলগাড়ি চলি গেল, কয়লার ইঞ্জিনের ধোঁয়ার গন্ধটা আঁর নাকে আঁই লাইগল। মাইনষে হুইনছি নাক চাপি ধরে, সহ্য কইরত হারে না, আঁর মন্দ লাইগল না, নাক দিই টানি লইলাম, গাড়িটা তো ঝিকুর ঝিকুর আওয়াজও তুইলল। আঁই খানিকক্ষণ চাই রইলাম। মনে হইল এই গাড়ি কত মাইনষেরে কত জায়গা তুন উডাই লই আই আবার যিয়ানে যাইত চায়, হিয়ানে নামাই দেয়। লতাহাতা, ঝোপ জঙ্গল বোবার মতো ধুলা ধোঁয়া যে উড়ায়, সব গায়ে মায়, মাইনষের মতো ওরাও তো কত ঘটনার সাক্ষী হই রই বাঁচি আছে আঁর আদর কইরতে ইচ্ছা করে। হোলারে কোলে লই হাঁঢিয়ের তো হাঁঢিয়ের, রাস্তাখান আর ফুরাইতে চায় না।  ইস্টেশনে হা দিই দেখি একটা ট্রেন আইতেছে। ইস্টেশন মাষ্টারেরে জিগাইলাম ট্রেনটা লাকশাম যাইব নি? কইল, ‘কুমিল্লা যাইবার ট্রেন, উইঠা হড়েন, স্টপেজ দিব হিয়ানে। হড়বড় করিয়েন না, বাচ্চা পোলা, কন কী বিপদ হয়!’ জানালার পাশে বই  হোলাঢারে বুকে জড়াই ধইরলাম। কয়লার গুঁড়া আই চোয়েমুয়ে লাগের। ইঞ্জিনের হাশের বগিখানা খালি ছিল বিধায় তড়িঘড়ি করি হিয়ানেই উইঠলাম কিনা।  নামি দেই এই কী অবস্থা! কিছুই চিনতাম হারিয়েন না। কী হইব অন! একটা দোকান তুন জামাপ্যান্ট কিনি হরাই দিলাম। শেষমেশ খালটার দেয়া হাইলাম, আগামাথা দেওন যায় না। মাঝে মাঝে দুই একখান বড় নৌকা এপার ওপার করে। বইনের বাড়ি গঞ্জের হাশে। কত আগে আইছিলাম। দেইখতে দেইখতে যে এমন করি হালটাই যাইব, স্বপ্নেও তো কল্পনা করি ন। বইনের জামাইয়ের ব্যবসার উন্নতি  হইছে।  গুদামঘরখাইন আড়েবহরে বড় হইছে, লাগোয়া গদিঘরখানা দেইখলে মন জুড়াই যায়, কনডাই ছিল, কনডাই আইছে, লক্ষ্মীর ঘড়া উঠছি হড়ে। বোনপো গদিতে বই দোয়াইত কলম লই কাঠের বাক্সের উপর হিসাবের খাতায় বিক্রিবাটার হিসাব লিখছিল। আঁরে দেই লাফাই উইঠল, ‘মাসী, তুই ক্যামনে আইলা? একটা খবর তো দিবা, আঁই যাই লই আইতাম।’ আইয়া পড়লাম মন চাইল, ভাইবলাম তোগরে চমকাই দিমু। ‘খুব, ভালা করছ। চল,চল বাড়ি চল।’ বেগ্গাইন ঠিক আছে তো? তোর বাপেরে দেইখছি না, কনডাই গেল! ‘বাবা, তাগাদায় গেছে। কে কনডাই আছিস, বাজার তুন ভালা চাই একটা নারায়ণগঞ্জের বড় দেই চার কেজি ওজনের একটা ইলিশ মাছ কিনি লই আগে বাড়ি পৌঁছাই দে, বড় দেই তেলা কইও সঙ্গে লইচ বুইঝলি, বাজারের ভালা মাছগুন কিনবি, কি দিলুম। আঁর মাসি কদ্দিন বাদে আইছে। মা দেইখলে কত খুশি হইব। আঁর ভাইটার লাই চকলেটও কিনিস, মনে থাইকব ত! 

ধেই ধেই করে নাইচতে নাইচতে আঁইও মনের আনন্দে বইনের বাড়ি আইলাম। এলাহি কান্ডকারখানা দেই তো আঁর চক্ষু চড়কগাছ! আঁর আবার এত জাঁকজমক হচন্দ হয় না। দামি দামি সেগুন কাঠের দরজা জানালা। আঙ্গ জীবন চলে হ্যারিক্যানের আলোয়। এদের ইয়ানে ফটাস করি কাঠের বাক্সে কালা কালা সুইস টিপলেই আলো আইয়ে, সুইস নামায় দিলে আলো চলি যায়, শোয়ার ঘরে হাখা বনবন করি ঘোরে। আঙ্গ বাড়িতে ঘরে ঘরে তালপাতার হাখা। কী আদর আপ্যায়ন, দেখি দেখি মন ভরি যায়। নিজেরে বড় ছোট ছোট লাগে। আঁর বইন আঁরে জিগায়, আঁর ভালা লাগেন নি! কী কমু কন চাই। বইনের মনে কষ্ট দেন যায়। তার চাই ওরা সুখে আছে এটা দেই তো আঁর আনন্দ। উঠানের ডাইন হাশে এত্ত বড্ডা মন্দির। দেই চোখ জুড়ি যাই। মন্দিরে ঢঙ ঢঙ করি ঘন্টা বাজে। অন্য বাড়ির বুড়া বুড়িরা আই পাটি হাতি গোল হই বয়। হরি সংকীর্তন করে। আঁই যাই এক হাসে বই। আঁরে দেই একজন আঁর বইনেরে কয় ‘তোঁর বড়া দিদি বুঝি, কটা হোলাপাইন? কন আইছে, থাইকব বুঝি কদিন?’ বইন আঁর মাথা নাড়ে। ‘বইনের জামাই আইয়ে ন?’ ‘ওনার কত কাজ, সময় হায় নি। আরও তো হোলাপাইন আছে, হড়ালেখা আছে, কেমনে আইব কন?’ আঁর  বইনের বড় মাইয়া আইছে বেড়াইতে। ওর গভ্ভে সন্তান আইছে। অন কিছুদিন ওর মার কাছে থাইকব। এই মাইয়ার আবার অনেক গুণ। গলায় সুরের নদী আছে যেন, মধু মাখি দিছে। কীত্তনও গায়, পল্লীগীতিও গায়। কোথায় রে কাঙালের হরি– একবার দেখা দাও আমারে। আমার সাধের ধন চিন্তামণি– না হেরিলে প্রাণ ফিরে।। যে সুখে রেখেছেন গৌরাঙ্গ, দিবানিশি তুষানলে জ্বলিছে অঙ্গ; তোমার প্রেমবারি বরষিয়ে– দয়াল, সুশীতল কর আমারে।। আহা! মনটা গলি যায়। হুনি আঁর গর্বে বুকটা হুলি ওঠে। হক্বলে মুগ্ধ হই হুইনল, ধন্য ধন্য কইরল। থুতনি ছুঁই একটু আদর করি দিছি। বোনের হৌরি আইজ দুই বছর হইল বিছানায়। হাগা মুতাও বিছানায় সারে। মাথার ব্যামোতে ভোগের বছর দুই তিন ধরি। শোধ বোধ নাই, কথা কইত হারে না, হুঁ হাঁ করে। আঁই কাছে যাই মাথায় হাত দিলে চোখ মেলি চায়। জিগাই মাসি আঁরে চিনতে হারেন নি? আর বইনে কয়, ‘বড়দি, তুই হাগল হইছত নি, ঢোক গিলতে কষ্ট হয় যার, তোরে চিনব কেমনে! ঈশ্বরের কী লীলাখেলা, যে মানুষটা এত বড় সংসার সামলাইত, আজ এমন দশা। যে যার কামকাজ লই এদিক ওদিক ছোটে, কেউ ডাক খোঁজও করে না। আপন হর হিসাবের খাতাটা বড় ছেঁড়াবেঁড়া। আঁর বোন আই কয়, চল খাইতি চল। আঁর হোলাগারে লই বইনের বাড়ির কী আনন্দ! বেগগুনে হেথেরে মজার মজার কথা হুনায়। আর ও খিলখিলাই হাসে। হক্বলের আদর হাই ও তো আঁর কাছেই ঘেঁষতে চায় না। আঁর বইনের জামাই কয় ‘হোলাডারে কয়দিনের জন্য আঙ্গ বাড়ি রাখি যান দিদি। হক্বলের কেমন মায়া হড়ি গেছে এই কয়দিনে।’ ওর কত রকমের বায়নাক্বা, চাইলেই হাতের কাছে চলি আয়ে। ইয়ান তো আঙ্গ মতো গ্ৰাম নয়, হোল হার হইলেই এত্ত বড় বাজার। গঞ্জের বাজারের কত জৌলুস, চোখ ধাঁধাই যায়, কোনোদিন এরম দেইখছেনি এর আগে। যা-ই দেয়, অবাক হই তাই থায়। আঁর বোনের জামাই ব্যস্ত মানুষ, চালের গাড়ি আই থাইমলে দম হালাইবার সময় হায় না। আঁর হোলার হাগলামিতে মাথা ঘামানোর সময় কন্নাই। আঁর হোলাও কম শয়তান ন। ছেলেধরার ভয়ডর নাই।  বাঁশীর তালে তালে সাপুড়ে সাপখেলা দেখাইলে ও মজা হাই হাততালি দেয় আর আবোলতাবোল কইতেই থাকে। সাপুড়ে কয়, ‘পয়সা দাও, খেলা দেয়াইলাম।’ হেথে দৌড়ি চলি যায় গদির কাছে। সোলার কান্ডকারখানা দেই হক্বলে হো হো করি হাসে। হেথের মেসো দোয়ান তুন জামা প্যান্ট কিনি দিছে। আঁরে আই দেখায় আর আনন্দে লাফায়। কী কইয়ুম বোনঝি আনি আঁর হাতে দুইখান শাড়ি দিই কয় ‘ আমনের লাই আর বোনের লাই।’ রাগ কইরব বিধায় কিছু কইতামও হারিয়েন না। ওগো ট্যায়া পয়সার অভাব নাই ঠিক কতা, তবুও শরম লাগের। তিন দিনের লাই বেড়াইত আই সাত দিন কাটি গেল, ওরা ছাইড়ত চায় না, ফিরি যাই হেথেনেরে কী জবাব দিমু, বুইঝলাম কপালে শনি নাচের। 

খবর আইয়ের কী লই জানি দেশে আবারও গণ্ডগোল লাগের। দেশটা ভাগ হইছে কটা দিন আর হইল। আবার এত গোলমাল! বোনপোরা গালে হাত দিই বসি পইড়ল। ঢাকা তুন হুরু হইছে। ময়মনসিংহ, সিলেট আর রাজশাহী কোনো জায়গােআর বাদ যান না। কত মাইনষের নাকি গলা কাটি হালার, বাড়িঘর হোড়াই দের, মাইয়া মানুষের ইজ্জত লই টানাটানি। আঁই তো হড়ছি বিপদে। রেল স্টেশনে যাইতেও তো ভয় লাগে। এই দেশে থাউন কেমনে! নিজের দেশ তুন আঙ্গরে মারিধরি তাগড়াই দিব? এই দেশে কী বিচার আচার ধম্ম বলি কিচ্ছু নাই? ‘কীয়ের ধর্ম?’ কেন! হিন্দু মুসলমানের ধম্ম বাদ দিইও যদি, দেশের ওতো একটা ধম্ম আছে। এমন কেউ কী নাই দেশের ধম্মটা মান্য করে। দেশটা পাকিস্তান হই গেছি বলে যা ওগো মন চায় তাই কইরব। এইঢা আবার কোন দেশী আইন! ‘ মাসী আমনের কথা ওগো কানে পৌঁইছত ন। পাকিস্তান করি করি ওরা হাগল হই গেছে। ভালা মাইনষেরে উসকাই রক্ত গরম করি দের। হুইনলাম আঙ্গ আড়তদার হিন্দু হর লাই চাঁটগায় ওগো গুদাম লুট করি সর্বশান্ত করি দিছে। মোসলমানদের হর্তাকর্তা গোছের দুই একজন এই অন্যায় মাইনত হারে ন বলি বাধা দিছে, হেথেনেরে বাঁশ দিই পিটাই মাথা ফাটাই দিছে।’ কী কছ রে ইগাইন! আঁই তো বিশ্বাস কইরতে হারিয়েন না। ‘ আরও যে কত কিছু ঘটের আমনে হুইনলে মুচ্ছা যাইবেন।’ মাইনষের মনের মধ্যে এত হিংসা রেষারেষি কেমনে যে বাসা বাঁধি রইছে, ঈশ্বর জানে। ধম্ম ধম্ম করি পুরা দেশটা একদিন রসাতলে যাইব, এই আঁই কই দিলাম। এই ধম্মের কারবারীরা মাইনষেরে মিলত দিত ন। এমন একদিন আইব দেশটা ভাঙি আরও দুই টুকরা হই যাইব। একটা কথা বুইঝতাম হারি না এই খুনোখুনি করি আখেরে কী লাভ হইব, কার লাভ হইব? এক ধম্মের মানুষ অন্য ধম্মের মানুষের চড়াও হই কী সুখে শান্তিতে থাকতে হাইরব? জোর খাটাই দল ভারি করি যদি লাভ হইত, না জানি না হুনি হুজুকে হরি ছুরি কাঁচি রামদা, ভোজালি দিই কোপাইলে নিজের ধম্মরে অচ্ছদ্দা করা হইব, এটা কেউ বুঝেন না। ‘মাসি, আমনে বুঝি বুঝি কথাখান কন, কিন্তু এর মর্ম বুঝে কজন। মা কয়, আমনের মাথাটা বরাবরের সাফ।’ ধুর পাগল, আঁর মনে যা আইয়ে আঁই তা কই, কেউ হোনে কেউ হোনে না। রাইত হই গেলে আর ঘুম আইয়ে না। কাইল ভাগ্যে কী আছে কী জানি। হরদিন দুইটা খবর হুনি মাথায় বাজ ভাঙি হইরছে। তেভাগা আন্দোলনে আঁর দূর সম্পর্কের এক ভাই ছিল, পাকিস্তানি পুলিশ হেথেরে গুলি করি মারি খালের জলে হালাই দিছে। অন্য খবরটা হুনছি আঁর রোমকূপ খাড়া হই গেছে, বুকের ধুকধুকানি শুরু হই গেছে।  ফেণীতে আঁর মাসতুতো ভাইয়ের পোলারে রামদা দিই কোপাই ধড় তুন মুণ্ডু আলাদা করি দিছে। হেথাগো বাড়িতে আগুন লাগাই ছাই করি দিছে। পাকিস্তানি পুলিশ আর আনসার বাহিনী আগাই আইয়ের, স্থানীয় মুরুব্বিরা হেই লগে যোগ দিছে। আঁই তো খুবই চিন্তায় হড়ি গেলাম বাড়ি যামু ক্যামনে। একবার যদি কোনরকমে স্টেশনে নাইমতাম হারি তা হইলে আর চিন্তা নাই। চেনা মাঝি দেইখলে আঁরে ঠিক পৌঁছাই দিব। ভয়ে ভয়ে বোনপোরে হঙ্গে লই স্টেশনে তো হৌঁছালাম। ফট করি এক দল লোক আই আঁর হোলাটারে লই আঁর হাত তুন ছিনতাই লই গেল। আঁর বোনপোর হরিচিত লোকজন আঁর চিৎকার হুনি দৌড়ি আই ওদের হাত তুন রক্ষা কইরল, না হইলে আঁর হোলার যে কী দশা হইত কে জানে। গাড়ি আইল, স্টেশনে নামালাম। চারদিকে শুনশান। সাহসে ভর করি হাঁটা শুরু করি ঘাটে আইলাম। একটাও নৌকা নাই, কী যে করি। ভাগ্যদেবী সাথ দিছে। আঙ্গ বাড়ির দিকের তুন আলাউদ্দিন মাঝি আই নৌকা ভিড়াইল। আঁরে দেই ডাকি নিই নৌকায় তুইলল। কত কথাই তো কানে আইছে, মাঝিরা অন হিন্দুদের নৌকায় তোলে না। তাইলে কী আঙ্গ গ্ৰামের লোকেরা এসব কথার আমল দেয় ন। নিজের দেশটা কখন যেন হর হর হই যার। আঁই পাগল না ওরা হাগল কী জানি। মনের মধ্যে একটা খটকা লাগি গেল। আলাউদ্দিনের মাথায় পাকিস্তানের ভূত চাপেনি তো! যদি নৌকাটা ঘুরাই অন্য দিকে লই যায় কী হইব। হোলাটারে জাপটাই ধরি ছই-এর নিচে দম বন্ধ করি বই রইলাম। আলাউদ্দিন যন কইল আইয়া পড়ছেন জেঠি, ওই তো আঙ্গ গ্ৰামের সাঁকোটা দেয়াই যায়। মনটা শান্ত হইল। মঠের চূড়া দেই হরানটা জুড়াই গেল। আলাউদ্দিন বুইঝত হারছে আঁর মনের অবস্থা। ‘ ভয় করিয়েন না জেঠি। জেঠারে এত বছর ধরি নৌকা করি ভোর রাইতে লই গেছি, হাশাহাশি গ্ৰামের লোক, বেঈমানি কইরতাম ন। দেশ লই মাইনষে মাইনষে ভাগাভাগি আঙ্গ কাম ন। যাগো এসব করি লাভ লোকসান হইব, তারা দিনরাত এইসব লই হিসাব কষের।’

আঁর স্বামী আঁরে দেই ভূত দেয়ার মতো চমকাই উইঠল। চিন্তায় চিন্তায় হেথেনের চোয়ে দুই দিন ধরি ঘুম নাই। এত চিন্তা করেন কিয়ের লাই, এই নেন আমনের হোলারে। আঁর মাইয়াটার কান্না দেই নিজেরে আর ধরি রাইখতে হাইরলাম না। মা বেটি দুইজন দুইজনেরে জড়াই ধরি কিছুক্ষণ কাঁইনলাম। এই কদিনে বাড়ির মানুষগুলান কেমন হালটাই গেছে। মনে ভয়, খালি ভয়, এই বুঝি এক দল লোক আই কোতল করি দিব। মাইয়াগুলার চোয়ের দিকে তাকাইতাম হারিয়েন না। ওরাও তো ভৈরব ব্রীজ, সীতাকুণ্ডর অত্যাচারের গল্প হুইনছে। কেন্নে কেন্নে ওরা যে হুনি ফালাইছে ওরাই জানে। কাঁদি কাঁদি কয়, ‘জেঠিগো আঙ্গরে যদি ধরি ধরি মুসলমান করি হালায়। বিয়া করি নেয়।  শরীল লই খাবলাখাবলি করে আঙ্গরে কে বাঁচাবে কও।’ আফজল আলি আঁরে কইছে ‘ ভাবি এই গ্ৰামে যদি একটা হিন্দুর মাইয়ার মান সম্মান লই টানাটানি হয়, তবে আল্লার কসম যেই হাত দিই ওরা এই কুকাম কইরব, সেই হাতখানা কাটি হালাইয়ুম, আমনেগো কোন চিন্তা কইরত হইত ন। ওরা আঙ্গরে চাচা কয়, আঙ্গ মাইয়ার মতো।’ তোরা নিশ্চিন্তে ঘুমা। আর স্বামী বাড়ির যুবক হোলাদের কয়, ‘ কওয়া তো যায় না, হঠাৎ করি যদি কেউ আক্রমণ করে, তোরা রামদা বটি কুড়াল শাবল খন্তা লই পাহারা দিবি, মইরলে মরবি, যুদ্ধ করি মরবি, গ্ৰামের হক্বল বাড়ির যুবক পোলাদের একই কথা কইছি। ভয় পাইলে চইলব না, দেশটা আঙ্গও, তাড়াই দিব, কইলেই হইল।’ পাকিস্তানি পুলিশও আইয়য়ে ন, আনসার বাহিনীও আয়ে ন। রাত তো হুরোয় না। একটা হাতা হড়াড় শব্দ হইলেই গা ছমছম করে। এই বুঝি সব সাবাড় করি দিল। ঘুম তো আর আইয়ে না। দিনের আলো হুটলেই দুই একখান নৌকা আই ঘাটে ভিড়ে। বাহিরের তুন লোকজন আই নামে। গাছের আড়াল তুন, খড়ের গাদার হিছনে থাই চোখ বড়বড় করি উঁকি মারি চায় কারা আইল, কারা গেল। হিন্দু মোসলমান নৌকার যাত্রীরা হক্বলে চেনাশোনা আঙ্গ গ্ৰামের লোক। যুগী বাড়ির তাঁতিরা আধমাইল হেছনের গ্ৰাম। হিয়ানে ঢুইকতে চাইলে মুশকিল আছে। চারদিক ঘিরি হালাইব। কই গেছে তেমন বুইঝলে আঙ্গরে খবর দিয়েন। মাইয়া আর ছোট হোলাগুনরে হার করি দিমু। ওরা দিনে তিন চারবার করি হালা করি খবর লই যায়। ডরে ডরে দিন কাটি যার। পূর্ব পাকিস্তানের কাটাকাটি লই দেশ বিদেশে কথা চালাচালি শুরু হইছে। এই নিই কত কানাকানি বলাবলি। হরিস্তিতি কতকটা ঠাণ্ডা হইলে আঁর স্বামী শহরমুখী হইবার লাই ছটফট করে, আঁর কথা কানেই তোলে না। কত কত কতা লই হেথেনে নাড়াচাড়া করে ‘ মাইনষের মধ্যে এমন অমানুষের ভাবগতিক দেখি আঁর বাঁইচতে ইচ্ছা করে না।, কনডাই যামু কও চাই। মানুষ খুন করা ছাড়া হেথাগো অন্য কোনো কাম নাই। সমাজ তো উচ্ছন্নে যাইব গই। মনের মধ্যে এত ঘেন্না হুষি রাই জীবনরে চিনত হারে কেউ, উপরওয়ালা তো দূরের কথা? আঁই তো বুঝতেই হারিনা কিয়ের লাই এত শত্রুতামি? জোর করি ঘর হালটাই দিলে মানুষটা কি হালটাই যাইব, জবাব তো চাইব একদিন। বোকার হদ্দ, আস্ত বলদ, না হইলে সংখ্যা দিই কনও সমাজের মাইপত চাই ! হায় হায় হায়রে দেশটার কী দশা হইল? বাঙালিরা বুইঝত হারেন না, পাকিস্তানিরা আজ না হয় কাইল ঝোপ বুঝি কোপ মাইরব হেদিন ওরা হিন্দু মুসলমান বুইঝত ন। ধম্মের দোহাই পাড়ি  হাত মিলাই লাভ হইত ন এই দেশের লোক যত তাড়াতাড়ি বুইঝব তত ভালা, দল ভারি করার খেলা খেলি আখেরে পশ্চিমাদের হাতের পুতুল হইব। যেমন খুশি ওরা নাচাইতে চায়, তেমনে নাচাইব। নাইচত না চাইলে গুলি করি মাইরব, ধম্ম তন কোনো কামে আইত ন।’ আঁর স্বামী এই সকল কতা লই বিড়বিড় করে। খোলা মনের মানুষ তো, হক্কলরে নিজের মতো করে দেখে, তাইতে কষ্ট হর। মানুষ দিনে দিনে চোয়ের সামনে পশু হই যার, সহ্য কইরত হারেন না। শহরে যাইব কি মনস্ত কইরছে, হিয়েল্লাই আঁর এত ভয়।

(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *