তাপস সরকার

লেখক পরিচিতি 

( সৃজনশীল সাহিত্য কর্মে নিয়োজিত কিশোর  বয়স থেকেই। প্রথম পঠিত গ্রন্থ রামায়ণ, মহাভারত ও গীতা। গদ্যসাহিত্য ও উপন্যাসেই সাবলীল। যদিও শতাধিক গল্প ও দশ-বারোটি উপন্যাসের রচয়িতা কিন্তু সেসব হারিয়ে গেছে অপ্রীতিকর কারণে। প্রিয় বিষয় মহাকাশবিদ্যা। কল্পবিজ্ঞান ও কিশোর সাহিত্য প্রিয় লেখা।কিছু গল্প নব্বইয়ের দশকে বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত। উন্মীলন নামে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকায় নিজের গল্প ও দুটি উপন্যাস ছাপা হলেও সেই উদ্যোগ থেমে যায়।প্রতিভাস সাহিত্য ম্যাগাজিন চলছে পনের বছর যা মায়ের নামে। সেখানে মায়ের উদ্দেশ্যে নিবেদিত লেখা স্মৃতিচিত্রণ ও বেশ কিছু ছোটগল্প। নব্বইয়ের দশকে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে কিছুদিন লিটল ম্যাগাজিন গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থেকে জেলায় জেলায় সাহিত্য আসরে ঘোরাঘুরি। বিশ্বকে নিজের ঘর বলে ভাবতে অভ্যস্ত। মায়ের মৃত্যুর পর অবসাদে দীর্ঘদিন লেখায় বিরত। তারপর আবার লেখা শুরু কিশোর সাহিত্য ‘গাছবাড়ির বাসিন্দা ‘ দিয়ে। পাঁচ বছরের প্রচেষ্টায় কোভিড পরিস্থিতিতে লেখা ইংরেজি ভাষায় ‘ইটস মাই আইল্যান্ড ‘ প্রকাশের অপেক্ষায়। স্বউদ্যোগে প্রকাশিত একমাত্র উপন্যাস ‘অন্তরালোকে ‘ নিজের জীবনের এক বিশেষ অধ্যায় ও মাকে নিয়ে লেখা। ভারতীয় প্রাচীন দর্শনের ওপর একনিষ্ঠ বিশ্বাস ও আধুনিক প্রযুক্তির ওপর বিরক্তি  ‘অনন্ত জীবন ‘ উপন্যাসের পাতায় পাতায় প্রতিফলিত। পেশায় অর্থনীতি বিষয়ের অধ্যাপক। ) 

মূলাংশ       

(মরজগতে মানুষ চলেছে অমরত্বের সন্ধানে। অনাদি অতীত থেকে তার এই যাত্রারম্ভ। অনন্ত জীবন তারই এক প্রকাশ। তাই অমৃতের অধিকার নিয়ে সুরাসুরে এত অশান্তি, কারণ অমৃত নাকি অমর করে। অমরত্বের ব্যাখ্যা আবার দ্বিধাবিভক্ত, দৈহিক অমরত্ব এবং আধ্যাত্মিক অমরত্ব। দানব ও সর্বসাধারণ বোঝে প্রথম মতবাদটিকেই। কোনটি সঠিক? সবাই ছোটবেলায় হারিয়ে যায় মানুষের মেলাতে, সেখানে সে বন্ধু খুঁজে পায় যাকে সে তাকে হাত বাড়িয়ে দেয়, বোঝাতে চায় মানুষ ও বিশ্বজগতের উদ্দেশ্যবিধেয়। যে তাকে চেনে সে বোঝে সব। শৈবাঙ্কন আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতাকে অস্বীকার করে চলে যায় স্পিতি ভ্যালিতে। সেখানে সে আবিষ্কার করে সর্বজনীন ভাষা যাতে বাক্যালাপ চালাতো সনাতন মুনি-ঋষিরা কীটপতঙ্গ, পাহাড়-পর্বত, নদী-জঙ্গল, পাথর-প্রান্তর এবং অদৃশ্য দেবতাদের সঙ্গে। স্পিতি ভ্যালির পটভূমিকায় স্পিতি নদী ও প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ এবং মানুষের সঙ্গে কথোপকথনে সে খুঁজতে থাকে অনন্ত জীবন বা অমরত্ত্বের ব্যাখ্যা। কী পেল সে শেষ পর্যন্ত ? )

অধ্যায় : ষোল 

শহর কাজাতে একটি হোটেলে থাকল তারা সেই রাত। পরদিন ভোরবেলাতেই কুয়াশাঢাকা শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে গাড়ি রওনা দিল। তাবো পৌঁছতে খুব একটা বেশি সময় লাগল না। স্পিতি নদী চলল সমান্তরালে জাতীয় সড়কের ডান ধার দিয়ে। তাবো গ্রামে ঢোকার মুখে রঙচঙে ব্রিজ পার হল গাড়ি, সার সার বৌদ্ধ পতাকা দিয়ে ছাওয়া শান্ত সমাহিত পরিবেশ। ব্রিজ স্পিতি নদীর ওপর যদিও, আসলে সেটি স্পিতির এক উপনদী তাবো যা মূল নদীর বাঁ ধারে গিয়ে মিশেছে। রাস্তার দু’ধারে বেশ কিছু হোম স্টে, হোটেল ও গেস্ট হাউস। এই মরশুমে পর্যটকের দল রয়েছে অনেকগুলিতেই। মনাস্ট্রির খুবই কাছে মূল সড়কের ডানধারে হোটেল মৈত্রেয় রিজেন্সিতে গিয়ে উঠল তারা। আরও খানিকটা দূর দিয়ে ডান ধারেই প্রবাহিত স্পিতি নদী। সকালের মধ্যেই তারা এসে গেল চোস-খর মঠে যার পরিচিত নাম তাবো মনাস্ট্রি। লামারা তখন মঠে বন্দনাগীত ও তন্ত্রাচার সাঙ্গ করে প্রাত্যহিক ছকে বাঁধা কাজকর্মে লিপ্ত হতে শুরু করেছে। চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জন লামা থাকে মঠের আবাসনে, আর রয়েছে নানা স্থান থেকে আগত শিক্ষার্থী। মঠাধ্যক্ষ একজন প্রধান লামা, রক্তবস্ত্র পরিহিত শান্ত সৌম্য চেহারা এবং মূলত তিব্বতের বাসিন্দা। দর্শনার্থী ও পর্যটকদের জন্য মঠের দরজা সবসময়ই খোলা থাকে। মঠাধ্যক্ষের কণ্ঠে ও ব্যবহারেও সেই সমাদরের আভাষ পেল তারা। সবচেয়ে বড়কথা, তাকে মঠাধ্যক্ষ এবং অন্য অনেক লামাই চেনে যেহেতু আগে কয়েকবার সে এখানে এসেছিল, থেকেও ছিল। সমস্ত কিছু ঘুরে দেখাবার জন্য গাইড হিসেবে একজনকে বাছাই করে দেওয়া হল যদিও মধুর হেসে তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন মঠাধ্যক্ষ,  

‘তুমিই তো গাইড হতে পারতে। তোমার তো সবই জানা এখানকার। তবুও……’

যে লামা তাদের গাইড হয়ে এলো খুবই ভদ্র তার আচরণ, বয়স খুব একটা বেশি নয়। সে প্রথমেই সবিনয়ে সবাইকে বলল,

‘মঠের ভিতরে বা বাইরে ছবি তোলার নিয়ম নেই। মোবাইল আর ক্যামেরা জমা রেখে যেতে হবে। তোমরা অনেক পিকচার পোস্টকার্ড কিনতে পাবে যেখানে সবকিছুই পেয়ে যাবে।’

তারা কেউ অবাধ্য হল না যেহেতু বহু জায়গাতেই এমন নিয়ম প্রচলিত দেখে এসেছে সবাই। অভ্যন্তরে তাদের নিয়ে ঢোকার আগে তরুণ লামা সবকিছুর একটা ভূমিকা করে রাখল এভাবে,

‘তাবো গ্রামে এই মঠ প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিব্বতীয় বৌদ্ধ লোৎসাওয়া বা মহান অনুবাদক রিংচেন জাংপো, তাঁর অন্য নাম মহাউরু রামভদ্র। তিনি সংস্কৃত ও পালি থেকে বৌদ্ধ গ্রন্থসমূহ তিব্বতীয় ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর শিক্ষা ও পড়াশুনা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাশ্মীর থেকে নির্মাতা এনে এই মঠ বানান তিনি তৎকালীন পশ্চিম হিমালয়ের অন্তর্গত গুজ রাজ্যের মহান রাজা ইয়েশি-উ-র ইচ্ছানুক্রমে ও আনুকূল্যে। রাজার দুই পুত্র নাগরাজা ও দেবরাজারও বিশেষ অবদান রয়েছে এই মঠ নির্মাণে। তাঁদের চিত্র রয়েছে মঠের দেয়ালে, দেখতে পাবে। দেয়ালে লিখিত রয়েছে প্রচুর লিপি বা ফ্রেসকো যেখানে বর্ণিত আছে সহস্রাধিক বৎসরের নানান কাহিনী ও সমাচার। রাখা আছে অমূল্য সব থাংকা বা গোটানো চিত্রকলা, মূল্যবান পাণ্ডুলিপি, পুঁথিপত্র, মাটি ও ধাতুর তৈরি প্রচুর মূর্তি এবং ম্যুরাল—- সমস্ত অভ্যন্তরের দেয়ালেই আছে নানা চিত্রকলার পাশাপাশি এসব সম্পদ। কালের আবহে অবশ্য কাষ্ঠনির্মিত গঠন ও চিত্রকলা অনেক আজ মলিন, তবুও যা আছে তাই দুর্মূল্য। উনিশশ’ পঁচাত্তরে কিন্নর জেলাতে প্রবল ভূমিকম্প হয়েছিল, এই অঞ্চলও তাতে বিদ্ধস্ত হয়। উনিশশ’ তিরাশি সালে নতুনভাবে নির্মিত হয় দু-কাং বা সম্মেলন কক্ষ, কালচক্র ভবন। তখন চতুর্দশ দালাই লামা এখানে এসে কালচক্র উৎসব করেছিলেন, আবার আসেন তেরো বছর পর মঠের সহস্র বৎসর পূর্তিতে। হাজার হাজার লামা ও বৌদ্ধদের সমাগম হয়েছিল তখন সেইসব অনুষ্ঠানে।’   

স্পিতি নদীর বাঁ ধারে তাবো গ্রাম, তিব্বত সীমান্ত থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে। উত্তরে লাদাখ, পশ্চিমে কুলু ও লাহুল, পূর্বে কিন্নর জেলা। বাটিসদৃশ সমতল উপত্যকায় গ্রামের অবস্থান, যার তলদেশেই রয়েছে মঠ। উপত্যকার অন্যান্য অঞ্চলের মঠগুলি সবই পাহাড়ের ওপর, ব্যতিক্রম তাবো। আগে ছিল তিব্বতের মধ্যেই। শুষ্ক, রুক্ষ, শীতলতম পার্বত্য এলাকাটির সর্বোচ্চ অংশ প্রায় দশ হাজার সাতশ’ ষাট ফিট। উপত্যকা ঘিরে রেখেছে সুউচ্চ পাহাড়ের গম্ভীর ঢাল, ছায়া বিলিয়ে রেখেছে গায়ে। বরফে ঢেকে যায় চূড়াগুলি শীতকালে। পাথুরে পাহাড়ের দেয়ালগুলি লেপে রেখেছে পলি ও কাদামাটি আর কাদা দিয়েই তৈরি গ্রামের ঘরবাড়ি। এমনকি, সমগ্র মনাস্ট্রি কমপ্লেক্সের বাড়িগুলির বাইরের গা-ও কাদায় লেপা এবং দেয়ালগুলি কয়েক ফিট চওড়া কাদা ও ইট দিয়ে তৈরি। মোটা মোটা স্তম্ভ এবং ছাদও তৈরি কাঠ দিয়ে। যদিও রুক্ষ-শুষ্ক অঞ্চল, গ্রামে রয়েছে সবুজের সমারোহ, সবজি জমি। আর এখানে আছে সুস্বাদু আপেলের বাগান। তরুণ লামা গাইড তাদের উদ্দেশ্য করে জানাল, 

‘আগেই বলেছি, ন’শ ছিয়ানব্বই সালে বৌদ্ধ রাজা বা লামা ইয়েশি-উ এই মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রপৌত্র জাংচুব উড ছেচল্লিশ বছর পর সংস্কারের কাজে হাত দেন। প্রাচীন তিব্বতীয় রাজতন্ত্রের বংশধর তাঁরা ছিলেন পুরাঙ গুজে রাজ্যের রাজা যাঁদের আমলে বাণিজ্য ও মঠনির্মাণ লাদাখ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ভারতীয় মহাজন বৌদ্ধবাদ তাঁরা তিব্বতে ছড়িয়ে দেন যা বজ্রযানের পরই বহুল প্রচলিত। একাদশ শতাব্দীতে তাঁদের তৈরি তাবো মঠ এক বিশাল কাজ। এই মহান কাজ ইয়েশি-উ  রাজার তরফ থেকে করেন মহান অনুবাদক রিনচেন জাংপো, যাঁর কথা বলেছি একটু আগেই। তাঁরই নেতৃত্বে মঠের ভিতরের দেয়ালে আঁকা হয় ছবি, লিপিমালা, ভাস্কর্য। সপ্তদশ থেকে ঊনবিংশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে বহিরাগতদের অনধিকার আক্রমণে মঠের কিছু দেয়ালের ইতিহাস বিনষ্ট হয়। তবে ব্রিটিশ আমলে এখানে মোটামুটি শান্তির পরিবেশ ছিল। উনিশশ’ পঞ্চাশের দশকে ভারত-চীন যুদ্ধের সময় একটু অশান্ত ছিল অঞ্চল। এর আগে কালচক্র উৎসবের কথা বলেছি তোমাদের, উনিশশ’ ছিয়ানব্বই সালের সহস্র বৎসর উদযাপনের কথাও শুনেছ, আর দু’হাজার ন’ সালে দালাই লামা আবার এই মঠে আসেন কালচক্র স্তূপ উদ্বোধনের জন্য। মূল মন্দিরের চিত্রমালা দশম-একাদশ শতকের, স্তূপগুলি নির্মিত হয় ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকে, অন্যান্য মঠ তৈরি হয় পঞ্চদশ থেকে বিংশ শতকের মধ্যে।’ 

মঠের ইতিহাস অল্প কথায় বলে লামা গাইড তাদের নিয়ে এলো মূল মন্দিরের ফটকে। প্রবেশদ্বার খুবই সাদাসিধে, কোনও জাঁকজমক নেই। মূল মঠের তিব্বতীয় নাম ৎসুগ লা খাঙ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এখানে চলে ভোটি ভাষায় বাক্যালাপ, তবে ইংরেজি আর হিন্দিও জানে সবাই যেহেতু শুরু থেকেই এটি একটি বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র, ছিল প্রথমে কদমপা স্কুল পরে যা বিকশিত হয় গেলুগপা স্কুল হিসেবে। উনিশশ’ নিরানব্বই সালে এখানে তৈরি হয় সেরকং স্কুল। প্রায় তিনশ ছাত্র এখানে পড়াশুনা করে, পাঁচ থেকে চোদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে। ভাষা ছাড়াও শেখানো হয় সমাজবিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা, অঙ্ক ও সাধারণ জ্ঞান। হালে যুক্ত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি, সংস্কৃত ও কলাশাস্ত্র। সমগ্র মনাস্ট্রি কমপ্লেক্সের আয়তন আটষট্টি হাজার বর্গ ফিট এবং উঁচু মাটি ও ইটের দেয়ালগুলি বেশ শক্তপোক্ত। সন্ন্যাসীদের বাসগৃহের পাশাপাশি একটি বাসস্থান রয়েছে ভিক্ষুনীদের জন্যও। 

‘চল, এবার আমরা ভিতরে ঢুকি,’ হাসিমুখ তরুণ লামা গাইড তাদের নিয়ে এগিয়ে চলল, ‘এটি হচ্ছে মূল মঠ এবং এটি তার নবনির্মিত প্রবেশগৃহ বা গো খাং। দেখ ওই দক্ষিণ দিকের দেয়ালের ছবি, উনি হলেন মঠের প্রতিষ্ঠাতা লামা রাজা ইয়েশি-উ এবং পাশের দু’জন তাঁর দুই পুত্র নাগরাজা ও দেবরাজা। চারপাশের দেয়ালে যেসব চিত্রকলা আর লিপিমালা দেখছ সবই ঊনবিংশ আর বিংশ শতকের তৈরি। পুরোনো প্রবেশগৃহে যে চিত্রকলা রয়েছে সেসব হাজার বছরের পুরোনো, এখনো আছে দেখতে পাবে। আমরা এবার যাব সম্মেলন কক্ষ দু খাং-এ। পুরোনো প্রবেশগৃহ দিয়ে চল, পৌঁছব গিয়ে সম্মেলন কক্ষে, এটিও নবনির্মিত।’

লামা গাইডের পিছু পিছু পুরোনো প্রবেশগৃহ ধরে যেতে যেতে তারা দেখল দেয়াল জুড়ে আঁকা হাজার বছর আগের সব চিত্রকলা, মলিন হয়ে এলেও অনেকটাই স্বমহিমায় ভাস্বর, সবই কাশ্মীর থেকে আগত শিল্পীদের অনবদ্য সৃষ্টি। তারপর তারা ঢুকল এসে সম্মেলন কক্ষে যেখানে রয়েছে বজ্রধাতু মণ্ডল, যার মূল দেবতা ভৈরোকানা উপবিষ্ট পদ্মাসনে পিছনের দেয়ালে, মণ্ডল ঘিরে রেখেছে বত্রিশ জন অন্যান্য সব দেবতার কাদায় তৈরি ভাস্কর্য যা চিত্রকলার সঙ্গে মিশে আছে নান্দনিক দৃশ্য রচনা করে। রক্ষাকারী দেবতা হলেন দোরজি চেনমো বা উই-নিয়ু-নিন, গাইড তাঁকে দেখিয়ে দিল। বজ্রধাতু মণ্ডল হল বর্গাকার বহুস্তর বিশিষ্ট প্রাসাদের দৃশ্য যেখানে পাঁচজন তথাগত বুদ্ধকে ঘিরে আছেন হাজার বোধিসত্ব। পঞ্চদশ থেকে ষোড়শ শতকে নির্মিত চিত্রকলা সমূহ উজ্জ্বল বর্ণের এবং স্পষ্ট এখনো। দেয়ালে লিপিমালায় বর্ণিত রয়েছে এইসব সংরক্ষণের বিবরণ। সংরক্ষণের হোতা ইয়েশি-উ রাজার প্রপৌত্র রাজকীয় লামা জাংচুব ওডের চিত্রকলা দেখিয়ে সব বুঝিয়ে দিল গাইড তাদের। সমগ্র সৃষ্টিকর্মের বাঁ ধারে দেখানো হয়েছে তাবো মনাস্ট্রিকে। 

মঠের পবিত্র কক্ষে এলো এবার তারা। বিশাল প্ল্যাটফর্মে সেখানে সুরক্ষিত তিনটি প্রমান আকারের ভাস্কর্য। প্রত্যেকেরই চারপাশে আঁকা জোড়া দেবীর চিত্রকলা। সিংহাসনে আসীন বুদ্ধমূর্তি একটি যার ভিত্তিমূলে ময়ূরের পরিবর্তে রয়েছে দুটি মুখোমুখি সিংহের ভাস্কর্য। মূল মন্দিরের মূল কক্ষে ও সম্মেলন অঞ্চলে কাষ্ঠফলকে খোদিত রয়েছে লিপিমালা দেয়ালে ঝুলন্তভাবে। মূল কক্ষে আলো প্রবেশ করার জন্য আছে একটি আকাশের জানলা, তাতে যে আলো ঢোকে ঘরে তা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে ঘর। ভিতরের চত্বরে বৌদ্ধ ও হিন্দু দেবদেবীর বর্ণময় ফ্রেসকো। তার পাশে একটি ছোট ঘরে রক্ষত পবিত্র নাচগানের পোশাকপত্র। মূল কক্ষের কেন্দ্রস্থলে বহু মূর্তিসমূহের মধ্যমনি পদ্মাসনে আসীন বুদ্ধদেব। তামায় তৈরি লামাদের মূর্তিও আছে তাঁকে ঘিরে অজস্র। ঝুলন্ত কাপড়ের পর্দা বা ট্যাপেস্ট্রি ঘিরে রেখেছে সমস্ত দেয়াল, স্তম্ভ ও দরজা এবং রয়েছে বৌদ্ধ জাতকের বহু চিত্রমালা যা শুরু সিদ্ধার্থ থেকে পাঞ্চেন লামাদের নিয়ে। মূল কক্ষের পিছনের দেয়াল জুড়ে অন্তত পঞ্চাশটি কাদামাটির পূর্ণাবয়ব মূর্তি দেবতা ও দানবদের। পবিত্র পুঁথি আছে এ কক্ষে একশ’ আটটি। লামা গাইড এক এক করে সব তাদের বর্ণনার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিল। 

মূল মন্দির ঘুরে দেখতে অনেকটা সময় লেগে গেলেও তারা কেউ ক্লান্তিবোধ করছিল না, বরং উৎসাহে টগবগ করে ফুটছিল যদিও লামা গাইড তাদের খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে নেবে কিনা জানতে চেয়েছিল, চা বা কিছু খাবার খাবে কিনা। উত্তরে তারা আগ্রহই দেখাল না। লামা গাইড বলল,

‘চল তাহলে, এবার অন্যান্য মন্দিরগুলি দেখে নাও। পরে দেখবে নতুন নির্মাণগুলি। আছে তারপর তেইশটি স্তূপ, পাহাড়ের গায়ে গুহা আর পাথরের দেয়ালচিত্র। মাঝখানে মধ্যাহ্নভোজন সেরে নেবে। চল এবার।’

প্রথম মন্দিরটিতে ঢোকার মুখে গাইড জানাল,

‘এটি স্বর্ণমন্দির জিসের খাং। এটি সত্যিই একসময় সোনায় মোড়া ছিল। ষোড়শ শতকে এটি নতুনভাবে বানান বিখ্যাত রাজা সেঙ্গে নামগিয়েল।’

মন্দিরের দেয়াল আর ছাদ বৈচিত্র্যময় ম্যুরালে ঢাকা। আছে অন্যান্য বহু মূর্তি এখানে। দেখতে বেশি সময় লাগল না। দ্বিতীয় মন্দিরটি বোধিসত্ব মৈত্রেয় মঠ যা মূল মঠ তৈরির একশ’ বছরের মধ্যে নির্মিত। কাঠের তৈরি দরজার কাঠামো। কথিত আছে, এটি ছিল দ্বিতল। বোধিসত্ব মৈত্রেয়র মূর্তি এখানে কুড়ি ফিট উঁচু। ম্যুরাল রয়েছে সর্বত্র। সুদৃশ্য পাথরের স্তম্ভের ভিত্তি সিংহমূর্তি। দীক্ষা মন্দিরে রয়েছে ভৈরোকানা দেবতার বিশাল ছবি যাঁকে ঘিরে আছে আটজন বোধিসত্ব। অন্যসব দেয়ালে মণ্ডলের চিত্র। এখানে ভিক্ষুদের দীক্ষাদান হয়। 

অতীশের এক প্রধান শিষ্য ড্রোমটন বানিয়েছিল ড্রোমটন মন্দির। এটিকে বৃহৎ ট্রোম-টন মন্দিরও বলা হয় যাতে আছে আটজন চিকিৎসক বোধিসত্বের ম্যুরাল। মন্দিরভূমিতে বর্ণিত আছে শাক্যমুনি বুদ্ধের জীবন। সপ্তদশ শতকের এই মন্দির। তান্ত্রিক ক্রিয়াকর্মের জন্য আছে একটি ছোট মণ্ডল মন্দির যা তৈরি প্রথমদিকেই। ছোট ট্রোম-টন মন্দির জুড়ে চিত্রকলা ও কারুকাজ যা ত্রয়োদশ থেকে চতুর্দশ শতকে তৈরি। প্রবেশদ্বারেই রয়েছে এসব। অষ্টাদশ শতকে নির্মিত সন্নাসীনিদের ছোট মন্দিরটি কম্পাউন্ডের পিছনদিকে যার চিত্রকলা তেমন প্রশংসনীয় নয়। 

নতুন মন্দিরগুলির মধ্যে আছে চিত্রকলা সম্পদ মন্দির ও ধবল মন্দির। কমপ্লেক্সের সর্ববৃহৎ মন্দির সম্মেলন কক্ষের পরই হল ড্রোমটন মঠ যার কাঠের ছাদ কারুকার্যখচিত ও দেয়ালে চিত্রমালা। আর রয়েছে মহাকাল বজ্র ভৈরব মন্দির যার দেবতা এতটাই হিংস্র যে মন্দিরে ঢোকার আগে ধ্যানমন্ত্র জপ করতে হয়। লামা গাইড করল তা তাদের হয়ে। 

দুপুর এসে গিয়েছিল। কিন্তু মধ্যাহ্নভোজনের আগেই তারা স্তূপগুলি দেখে নিতে চাইল। একটু বাইরের দিকে সেসব, চারটির ভিতরে রয়েছে চিত্রকলা। সর্বমোট তেইশটি স্তূপ থাকলেও সবগুলিতে প্রবেশ করা যায় না নানা কারণে। তাই খুব একটা বেশি সময় লাগল না এসব দেখতে। 

হিমালয়ের অজন্তা বলা হয় তাবোকে। তারও একটি বড় আকর্ষণ হল গুহা। মঠপ্রাঙ্গণের বাইরে পাহাড়ি দেয়ালের গায়ে তাদের অবস্থান, অন্তত ছ’ থেকে সাতশ’ ফিট উঠে যেতে হবে ওপরে। গাইড খেয়ে নিতে বলল সবাইকে। আগ্রহ ছিল এতই  তাদের যে দশ-পনের মিনিটের মধ্যেই সামান্য কিছু খেয়ে নিল সবাই। হোটেলেও যেতে চাইল না কেউ ভালোমত খাওয়ার জন্য। গাইডকে বলল, গুহাতে নিয়ে যেতে।

তাবো গ্রামের দিকে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পলিকাদা মাটিতে লেপা ধূসর শ্যাওলা রঙের পাহাড়ি দেয়াল, সেখানেই রয়েছে গুহাগুলি একের পর এক। হাজার বছরের পুরোনো মনাস্ট্রি কমপ্লেক্সের একটি অংশবিশেষ হিসেবে বিবেচ্য বা আরও বেশি প্রাচীন। বলা যায় যে প্রাগৈতিহাসিক যুগের এইসব গুহা, পাহাড়ের দেয়ালে যারা স্পষ্ট দর্শনীয়, একসময় ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বাসগৃহ। শৈত্যপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে গুহাবাসী হত প্রাচীন যুগে সেইসব বৌদ্ধ শ্রমণরা। গুহাগুলির প্রবেশদ্বার একেকটি প্রায় গোলাকার হাঁ-মুখ এবং সংকীর্ণ। গুহার বাইরে রঙবেরঙের বৌদ্ধ পতাকা শোভিত ছিল। প্রথম দর্শনে বোঝা শক্ত যে এগুলি প্রাকৃতিক নাকি মানুষের তৈরি। তবে কাছে গিয়ে ভালোমত দেখলে বোঝা যাবে যে সব গুহাই কৃত্রিমভাবে মানুষের বানানো। কিছু কিছু গুহা আবার বহুতলবিশিষ্ট। হাজার বছর আগে কোন পর্যটক এলে তাকে এসব গুহাতেই থাকতে হত। পাহাড়ের দেয়াল জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গুহাগুলি, কোন-কোনটির ঢোকার মুখ আবার অনেকটা ঠিক গাড়িবারান্দার মত। সমস্ত গুহাতে যাওয়ার উপায় নেই বা পৌঁছনোর পথ বলতে কিছু না থাকায় যাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিছু গুহা দেখলে মনে হবে বুঝি পাহাড়ের দেয়াল খুঁড়ে তৈরি। কোন গুহাতে কোন বাসিন্দা বা আশ্রিত কেউ আছে কিনা তা বোঝা যেত গুহামুখ থেকে ধোঁয়া বার হতে দেখা গেলে। এখানে গ্রামে বসবাস শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এসে গুহাগুলিতে আশ্রয় নিত। একটি বড় গুহা তাবো মঠের অধীনস্ত যা ধ্যান বা সাধনার স্থান হিসেবে ব্যবহার করে সন্ন্যাসীরা। পাহাড়ের গায়ে গায়ে পথ ঘুরে ঘুরে উঠে গেছে সেখানে, লামা গাইডের সঙ্গে তারা এগিয়ে যাচ্ছিল। অনেকগুলি সিঁড়ি ধরে যেতে হবে ওই গুহাতে যেখানে আছে একটি ছোট্ট মন্দির। যেতে যেতে উত্তেজনায় ভরপুর হয়ে যাচ্ছিল তাদের অনুভূতি। গুহাতে ঢুকে তারা ছোট মন্দিরের পর গেল একটি কক্ষসদৃশ চেম্বারে যেখানে প্রার্থনা ও অন্যান্য ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম হয়ে থাকে। গাইড বলে দিচ্ছিল সেসব। মাটির তৈরি এই গুহাতে রয়েছে একটি রান্নাঘরও যেখানে ভিক্ষুরা তাদের রান্নাবান্না করে। গুহার দেয়াল এতটাই মাটিমাখানো যে গায়ে লাগলে পোশাকে ভরে যাবে সেই মাটি। গুহাগুলির ছাদে রয়েছে বড় বড় গর্ত হাওয়া চলাচলের জন্য। সেই গুহার দরজা দিয়ে পাহাড়ের তলদেশে ছবির মত দেখা যাচ্ছিল তাবো গ্রাম ও মঠের দৃশ্য আর অদূরে বয়ে চলা অপরূপা স্পিতি নদী। সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল সেই স্বর্গীয় শোভা দর্শনে। অন্য আর কোন গুহাতেই তাদের নিয়ে যাওয়ার কথা বলল না গাইড যদিও সেসব গুহা একই পাহাড়ি দেয়ালে। তবে পৌঁছতে হলে অসমান পাহাড়ি দেয়াল বেয়ে উঠে যেতে হবে অনেকটাই দূরত্ব, যাওয়ার জন্য না আছে কোন পথরেখা না কোন সিঁড়ি। রক ক্লাইম্বিং-এর অভিজ্ঞতা না থাকলে যাওয়া যথেষ্ট মুশকিল। তবুও পর্যটকদের আবদার মেনে বেশ কিছুটা পাহাড়ের গা বেয়ে লামা গাইড তাদের ঘুরিয়ে আনল আরও দু’-একটি গুহা।  

পাহাড়ি গুহা অভিযান শেষ করে নিচে গ্রামে নেমে আসতে আসতে দুপুর গড়িয়ে গেল। সারাদিনে এতকিছু দেখল তারা যে প্রত্যেকেই অসীম পরিতৃপ্তি বোধ করছিল। এবার বাকি ছিল আর একটি বিষয়, শিলাচিত্র বা রক কারভিং দেখা। গাইড জানাল যে সন্ধে নামার আগে সেটাও সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে তার কথা অনুযায়ী, যেতে হলে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তাতে কেউই অরাজি না থাকায় লামা গাইড তাদের নিয়ে হেঁটে চলে গেল গ্রামের স্কুলবাড়িটির পিছনে এক সরকারি ভবনে। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে পড়েছিল নানা জাতীয় বিশাল বিশাল পাথর অনেকটাই অযত্নে। আগাছা ভরা ঝোপঝাড় দিয়ে চলার কোন পথই নেই। বিশাল শিলাখণ্ডের গায়ে দেখা গেল প্রাগৈতিহাসিক যুগের আঁকা ও খোদাই করা চিত্রমালা। দেখলে প্রাণ ভরে যায়। কালোবর্ণ পাথরের বুকে খোদাই করা হালকা বাদামি বর্ণের আঁকাআঁকি, মনে হচ্ছিল যে খোদাই করার পর সেসব পোড়ানো হয়েছিল। নানা পশুপাখি ও তাদের শিকার করার দৃশ্য খোদাই করেছিল আদিম যুগের মানুষ এইসব পাথরে। প্রায় প্রত্যেক শিলার গায়েতেই ছিল স্বস্তিক চিহ্নখোদাই করা, ধর্মীয় প্রভাব যাতে স্পষ্ট। ওঁ চিহ্নটিও ছিল কিছু কিছু শিলাতে। গাইড তাদের এইসব শিলাখণ্ডে খোদাই করা চিত্রমালা সম্বন্ধে তেমন কোন তথ্য জানাতে পারল না নিজেও জানত না বলে। তবে বিকেলের ম্লান আলোয় তারা যা দেখল তাতে তাদের প্রাণমন আপ্লুত হয়ে গেল, মনে হচ্ছিল বুঝি তারা চলে গেছে সেই অনাদি অতীতে, আদিম যুগে, যেখানে বর্তমান সভ্য মানুষজনের দাপাদাপি নেই। পৃথিবী নিশ্চল নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সেই বিকেলে তাদের আবেগমথিত দৃষ্টির সামনে তাবো গ্রামের পিছনদিকের জঙ্গলে। এই দৃশ্যাবলী ঘোষণা করে যে সভ্যজগতের এতসব হৈ-চৈ কতই না অকারণ, ঘোষণা করে যে পূর্বপুরুষের সম্পর্ক কতটা নিবিড় ছিল প্রকৃতির কোলে আর মনে পড়ে কোথায় ছিল আমাদের শিকড়, কোথা থেকে বর্তমানের এই অবতরণ। 

হোটেলে ফেরার পথে লামা গাইড তাদের জানাল যে প্রতি তিন বছরে একবার সেপ্টেম্বর থেকে অক্টবর মাসের মধ্যে উদযাপিত হয় চখর উৎসব যা সবার জন্য শান্তি ও সুখের কারণে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ধর্মীয় মুখোশ নৃত্য, বৌদ্ধ সংগীত ছাড়াও অন্যান্য বিষয় সাড়ম্বরে পালিত হয় তাতে। এছাড়া আরও অনেক ধর্মীয় উৎসব নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে মঠপ্রাঙ্গণে। তিব্বতীয় সন্তরা তাদের প্রথাগত বৌদ্ধ ও স্থানীয় নৃত্যগীত পরিবেশন করে হামেশাই। তার কিছু উদাহরণ সন্ধেবেলা মঠের চৌহদ্দিতে তারাও দেখল সেদিন সৌভাগ্যক্রমে। 

পরদিন ভোরে ছ’টার সময় হোটেলে থেকেই তারা শুনতে পেল নতুন মঠ কমপ্লেক্স থেকে ভেসে আসা লামাদের অপূর্ব প্রার্থনাসংগীত এবং মন্ত্রোচ্চারণের ধ্বনি। শুনে কান ভরে উঠল আনন্দপ্লাবনে। সূর্য দেখা দিল তারও অনেক পরে। তারা ঠিক করেছিল যে সকালেই রওনা দেবে হোটেল ছেড়ে স্পিতি ভ্যালির পথ ধরে। সেভাবে সকালের খাবার খেয়ে নিল সবাই ন’টার মধ্যে। রোদ উঠে গেছে ততক্ষণে। গতকাল প্রায় এসময়েই তারা এখানে এসে পৌঁছেছিল। আজ তারা যাত্রা করবে সুমদোর দিকে, যতটা যাওয়া যায়। পথে যেতে যেতে থামবে প্রায়ই উপত্যকার স্বর্গীয় শোভা উপভোগের জন্য। 

তাবো মনাস্ট্রি কমপ্লেক্স সকালে গাড়ি নিয়ে বার হওয়ার মুখে আরও একবার ঘুরে এলো তারা। উদ্দেশ্য মঠাধ্যক্ষের সঙ্গে যদি দেখা হয় তো বিদায় নিয়ে আসা হবে। তাদের উদ্দেশ্যপূরণ হয়ে গেল। সুমধুর হেসে মঠাধ্যক্ষ তাদের কাছে জানতে চাইলেন, সব ঠিকঠাক দেখা হয়েছে কিনা। তাদের ইতিবাচক উত্তর শুনে তিনি খুশি হলেন, আবার আসার আমন্ত্রণ জানালেন সবাইকে। আর তাকে বললেন,

‘তোমাকে আর কী আসতে বলব ? তুমি তো আমাদেরই একজন। প্রায়ই আসো।’

তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল লামা গাইডেরও। বিদায় জানাল তারা তাকেও। প্রচুর পিকচার পোস্টকার্ড কিনে নিল সবাই স্মারক হিসেবে। মাত্র একদিন এক রাত থাকা, অথচ মনে হতে লাগল যেন কতদিন থাকা হল। হোটেল ছেড়ে গাড়িতে উঠল সবাই। গাড়ি চলতে লাগল। এবার আবার স্পিতি ভ্যালির বুক ধরে এগিয়ে চলা। 

(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *