বিদ্যুৎ মণ্ডল
চতুর্থ পর্ব
মাইলি থালের বনফায়ার
মনোজ দা তাওজিদের খুঁজতে যাবার আধা ঘণ্টার মধ্যেই মালপত্রসহ একে একে পাঁচটা খচ্চর ও একটি ঘোড়া নিয়ে রমেশ তাওজি হাজির হয়। তারপর অবশ্যি মনোজ দাও ফিরে আসে কোটলাতে। কিংশুকদা দেরীর কারণ জানতে চাইলে তাওজি জানায় যে কোটলাতে আসার মাঝপথে ছয়টা খচ্চরের মধ্যে থেকে একটা খচ্চর মালপত্রসহ ভল্টি খেয়ে নীচে পড়ে যায়, একেবারে কেলেঙ্কারি কাণ্ড, গড়াতে গড়াতে একদম সে নীচে পাকা রাস্তায় পড়ে পা হাত ভেঙে একেবারে বিদিখিচ্চিরি পরিস্থিতি। খুব ভালোরকম চোট পায় সে। পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েও মরেনি এই যা রেহাই। তবে, একটা পা ভেঙে যায়, সারা শরীরে আঁচড়ের ক্ষত। সেজন্য পুনরায় তাওজি নীচে নেমে খচ্চরটাকে খুঁজে, তার পিঠের মালপত্র একজায়গায় করে অল্প অল্প করে বাকি খচ্চরের পিঠে লোড করতে এত সময় চলে যায়। নয়তো সব নিয়মমাফিকই ছিল। শুনে খুব খারাপ লাগছিল। একটা অবলা প্রাণী বলে তার কষ্টটা কেউ হয়তো বুঝতে পারলো না। প্রথমদিকে তাওজি ঘটনাটি বলতে চাইছিল না। কিংশুক দা জিজ্ঞেস করতে হাসতে হাসতে সে বলছিল, “কুছ নহি বাস চিজোকো দোবারা লোড করনা পড়া, ইসলিয়ে থোড়া দের লগ গয়া।” তাঁকে একটু চাপ দিলে, আসলে কি ঘটেছিল, পরে সেটা জানায়। তাওজি যখন বলছিল তখন খেয়াল করে দেখলাম চোখ জলে ছলছল করছে। নিজের ছেলেমেয়েদের মতো সে তার পোষ্যগুলোকে আগলে রেখেছে এতদিন। কেউ আঘাত পেলে তারও তো আঘাত লাগে মনে। আর সেটাই স্বাভাবিক। তাওজি একটু দুঃখমিশ্রিত মজা করে বলল, “সোচ রহা থা ছুরি কি সাদি করবা দেঙ্গে, লেকিন উসকি তো প্যার টুট চুকে।” সকলে শুনে হো হো করে হাসল।
সেদিনের মতো রাতে ট্রেক করার পরিকল্পনা ইতি রাখতে হল। বাইরে ঠাণ্ডা বাড়ছে বইকি কমছে না। শীতের পোষাক পরিধান করেও পাহাড়ি দমকা বাতাসে দাঁত সিলিয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। মালপত্র আসতে মনোজদা, সন্দিপণ এবং আমি তাঁবু খাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। অন্যদিকে কিংশুকদা আর বুদ্ধিজি কিচেন তাঁবু পেতে রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নির্ধারিত সময়ের থেকে প্রায় দু আড়াই ঘণ্টা দেরি হয়ে যাওয়ায় ঠিক হল যে আলু আর পিঁয়াজের পকোড়া দিয়ে মুড়ি খাওয়া হবে এবং তারসাথে গরম গরম চা। সময় বিকাল চারটে কি সাড়ে চারটে হবে। সেসময় লাঞ্চ করলে রাতের খাবার আর কেউ খেতে পারবে না। অথচ রাতের খাবারটা ভীষণ দরকার এই কারণে যে পরদিন সকাল ছয়টার মধ্যেই কোটলা ছেড়ে পাহাড় চড়া শুরু হয়ে যাবে। কাজেই পাঁচটার দিকে পকোড়া দিয়ে মুড়ি সাটালাম সকলে। কয়েকজন ক্লান্তির কারণে ঘুমিয়ে গেল। আমি ফোটোগ্রাফার হয়ে এদিক ওদিক ছবি তুলে যাচ্ছি আর আমার দুই সাকরেদকে শিখিয়ে যাচ্ছি। এদিকে তাওজি বনফায়ার এর আয়োজন করছে। ছবি পর্ব শেষ হলে দেখি ফোটোগ্রাফারের নিজেরই ছবি নেই কোনো, বাকিদের ছবিতে গ্যালরি ভর্তি। যারা পাহাড়ে যায় তারা ভালোমতোই জানে যে পাহাড়ে দেরিতে সন্ধ্যে হয়, ঘড়িতে তখনও ৭টা বেজে চল্লিশ মিনিট হয়ে গেছে তবুও দিনের আলো উজ্জ্বলমান। ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যেতে হবে নইলে পরের দিন কাকভোরে ওঠা সম্ভব হবে না।
চারিদিকটা একটু ভালো করে ঘুরে নিলাম। রাতে যদি ছোটো বাইরে বা বড় বাইরে লাগে তাহলে খোলা আকাশের নীচে কোনো না কোনো পাথরের আড়ালে সারতে হবে। বনফায়ারের আগুন তেঁতে উঠেছে। জুতো এবং মোজা জোড়া নিয়ে আগুনের পাশে পাথরে শুকাতে দিলাম। সকলে গোল করে বসে পড়ল আগুনকে ঘিরে। র্যাম্বো ফসিলস্ চালিয়ে দিল। আগুনের লেলিহান শিখা আর রূপম ইসলামের আগুন শব্দের আবহাওয়ায় গল্পের আসর জমে উঠেছে, খোলা আকাশ সাক্ষী, দূরে আড়াল থেকে গল্প শুনে যাচ্ছে চাঁদমামা, লজ্জায় মাথা নত করে নীরব হয়ে গল্প শুনছে পাহাড়ও। জঙ্গল নিস্তব্ধ। পাখিদের গানের আওয়াজ বন্ধ, তারা বোধহয় ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বুদ্ধিজি বলল, “কভি কভি ভালু চলা আতে হ্যাঁয় আগকি দুয়ো লেনে কে লিয়ে। রাতমে জঙ্গলোমে যাহা আগ জলতা হ্যাঁয় উধার হি ভালু চলা যাতা হ্যাঁয়।” শুনে কয়েকজন খুব ঘাবড়ে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ইতনা লোগোকে সামনে কভি আতা হ্যায় ভালু? উ ডরতা নহি?” বুদ্ধিজি চোখদুটো বড় বড় গোল্লা পাকিয়ে বলল, “ভালু দুয়ো লেনে আতে হ্যাঁয় লেকিন ইন্সানোকে ডরসে কভি নজদিক নহি আতে হ্যায়। কভি কভি উসকে নজর কিসি শিকার পে আ যাতা তো আপনা শিকার কো দূর সে নিশানা লাগাকে কিসি পেড় পর চড় যাতা হ্যায়। আগার শিকার কো একেলা দেখে তো উঠা লে যাতে হ্যায়।” শুনে গা ছমছম করছে সবার। মনে মনে চাইছিলাম যে এরকম কিছু হোক। গ্রামের বাড়িতে রোজ দশ বিশটা শেয়াল দেখি, তাই শেয়ালে অ্যাডভেঞ্চার পাই না। যদি ভালু বা চিতার দর্শন হয়ে যেত তাহলে পুরো মাখামাখি হয়ে যেত। কিংশুক দাদা বলে দিল কারো টয়লেট যাবার প্রয়োজন হলে যেন একা না যায়, দলে যায়। প্রত্যেকের কাছে টর্চ আছে, প্রয়োজনে একটা লাঠি নিয়ে যায় যেন।
জুতো মোজা জোড়া শুকিয়ে গেলে দেরী না করে রাতের খাবার খেলাম। ঠাণ্ডা জাকিয়ে পড়ছে, বাইরের তাপমাত্রা অন্দাজমতো ৬ ডিগ্রী থেকে ৮ ডিগ্রী হবে। খাওয়া সেরে মিনিট দশ পনের পাইচারি করলাম ভাবলাম রাতের পাহাড় কুমারীকে উপভোগ করি কিছু চোখে পড়লেও পড়তে পারে। কিন্তু না ! ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে স্লিপিং ব্যাগের ভেতর গ্যারেজ হয়ে গেলাম। এই প্রথম স্লিপিং ব্যাগের ভেতর ঘুমাতে হবে। তাঁবু খাটানো হয়েছে সমান জায়গা দেখে। তবু কেমন যেন অসমতল লাগছে। ট্রেকিং ব্যাগটাকে বালিশ বানিয়ে নিলাম। স্লিপিং ব্যাগের ভেতর শুয়ে নিজেকে কেমন যেন শুয়োপোকা শুয়োপোকা লাগছে। মনে মনে ভাবছি ঘুমাতে পারবো কিনা। কখন মুহূর্তেই ঘুম ঢুলে এল তার কিছুটি টের পেলাম না। ভোর পাঁচটায় আর্লাম বাজতেই ঘুম ভেঙে গেল, জেগে গেলাম। বাকি কয়েকজন বিরক্ত হয়ে চিৎকার শুরু করে দিয়েছে যে কেন এত সকালে আলার্ম বাজবে। তৎক্ষণাৎ আর্লাম অফ করে দিয়ে বাইরের অন্ধকারাচ্ছন্ন মেঘাচ্ছন্ন কুয়াশাচ্ছন্ন ঠাণ্ডাতে এদিক ওদিকে ঘুরলাম। পাহাড়ি সবুজ বন্যগন্ধ নাকে আসতেই মনে এক অপার তৃপ্তি গ্রাস করল। পাহাড়ের খুব কাছে না আসলে এ অনুভূতি হওয়া কখোনোই সম্ভব নয়। কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকারের পানে তাকাতেই কে যেন কানে কানে বলে গেল, “কত সহস্র ঘণ্টা অপচয় করেছিস ভুলভাল জিনিসের পিছনে ছুটে”; আগে যদি পাহাড়ের স্বাদ পেতাম, কাশ ! জীবনটাই বদলে যেতে পারতো। কিছু পরেই অল্প অল্প করে দিনের আলো ফুটতেই নিম্নচাপ আসতে লাগল। কিন্তু কি করে এই খোলা আকাশের নীচে সেই কর্ম সম্পাদন করব তা নিয়ে ইতস্তত হচ্ছে। এক এক করে সকলের মহাকর্মাদি সারা হয়ে গেল, আমার আর হল না। অথচ অনেক ভোরেই জেগে গেছি।
এদিকে কিংশুক দাদা সব্বাইকে জাগিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি ব্যাগপ্যাক করে নিতে বলে চলে গেল সকালের নাস্তার তোড়জোড় করতে। ইতিমধ্যে ভোরেই এক পশলা চা পান হয়ে গেছে। এবার শুধু টিফিনের অপেক্ষাই। এদিকে সময় কালস্রোতের মতো ভেসে যাচ্ছে। অনেক দ্বিধা সন্দিগ্ধতা দূর করে পটির উদ্দেশ্যে গেলাম। পূর্বে কখনো এ অভিজ্ঞতার সুযোগ হয়নি। তাঁবু থেকে বেশ কিছুটা দূরে এক পাথরের আড়ালে লজ্জাসরম বোধ সরিয়ে বসলাম অবশেষে। কিন্তু গোলযোগ বাঁধল ফেরার পথে। টিস্যু পেপার সহযোগে শৌচাদি কর্ম সেরে ফেরার পথে নীচের দিকে নামার সময় একটা শিশিরভেজা ঘাসপাথরের ওপর পা রাখতেই পিছলে গিয়ে একেবারে নাস্তানাবুদ। নিজেকে থামাতে গিয়ে পাথরের গায়ে আঁচড়ে ডানহাতের তিনটা আঙুলের বারটা বেজে যায়। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে, সে এক রক্তারক্তি কাণ্ড। এ যাত্রায় কোনোমতে রক্তপাতের ওপর দিয়ে বেঁচে গেলাম। যদি পাথরের সাথে ঘষা খেয়ে খেয়ে নিজেকে রুখতে না পারতাম তাহলে আর কিছু বলার থাকতো না, ছবি হয়ে যেতাম। যাইহোক, রক্ত বন্ধ হলে কাউকে কিছু না বলে ঝরনার জলে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। সঙ্গে গোটা বিশেক ব্যাণ্ডেড ছিল তার কয়েকটিতে কাজ মিটে গেল। আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে হয়তো ট্রেকিং সেখানেই থেমে যেত, নেহাত আমি ছিলাম তাই টুশব্দটিও হয় নি।
সকলের জন্য অপেক্ষা করছে বুদ্ধিজির হাতে প্রস্তুত গরম গরম রুটি, ভাত, ডাল, সব্জি। সকালের আহার সেরে পৌনে সাতটা নাগাদ আবার যাত্রা শুরু হল। আজ অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টার ট্রেক করতে হবে পরবর্তী ক্যাম্পে পৌঁছতে। বুদ্ধিজি শাল গাছের ছড়ি কেটে আমার জন্য একটা খুব সুন্দর ট্রেকিং পোল বানিয়ে দিলেন। সকলকে লজেন্স, জুস, বিস্কিট, চকোলেটের একটা করে প্যাকেট ধরিয়ে দেওয়া হল। ট্রেকিং চলকালীন প্রত্যেকদিনই এমন একটা প্যাকেট দেওয়া হয় পথে এনার্জি যোগানোর জন্য। আমি আর বুদ্ধিজি আগে আগে চলছি, বাকিরা সব পিছিয়ে, বুদ্ধিজি সুযোগ পেলেই আমার তারিফ করছে, আমিও কম যাচ্ছি না। বুদ্ধিজি নিজের জীবনের অনেক কাহিনি অনেক ইতিহাস অনেক অভিজ্ঞতার গল্প শোনাচ্ছেন। ট্রেকিং-এ কোনো কষ্ট অনুভূত হচ্ছে না। দশ/বিশ মিনিট পাহাড় চড়া হয় তো বাকি পাঁচ দশ মিনিট বাকিদের জন্য অপেক্ষা করে কেটে যায়। মাঝে বাবাই দা ও আরো অনেকে আমাকে বলে যায় এত দ্রুত হাঁটার কোনো দরকার নেই, তুমি কোনো যুদ্ধ জয় করবে না। একপ্রকার আমার দ্রুত গতির কারণে আমাকে চেটে যায়। একটু কেমন অস্বস্তি বোধ হয়। সিদ্ধান্ত নিই যে বাকি ট্রেকটা মাঝখানে থাকবো, কারো কোনো লিড লাগলে মেকাপ করে দেব।
যাত্রা শুরুর মিনিট দশকের মধ্যেই কোটলা ছাড়িয়ে আমরা ঘন জঙ্গলের পথ অনুসরণ করে হেঁটে চলেছি। সামনে বুদ্ধিজি, তারপর দেবব্রত দা, অনিরুদ্ধ দা তারপর আমি। আমার সাথে পা মিলিয়ে পাহাড় চড়ছে র্যাম্বো ভাই, সন্দীপন, মেহুল আর অনুশ্রিতা দি। তার পিছনে বাকি সবাই রয়েছে। আজকের রাস্তা একেবারে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রত্যেক মোড়েই অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ মিশে আছে। কোটলার ঝরনা ধরে খাঁড়াই পাহাড়ে ওপরে যে সরু ঘাস কাটিয়েদের রাস্তা দেখা যাচ্ছে সেই রাস্তা ধরেই এঁকেবেঁকে পাহাড় চড়া হচ্ছে। দেড় দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেছে ফোন সেভাবে ব্যবহার হয়নি, চার্জও বেশি নেই। পাহাড়ের রূপকে ছবিবন্দী করা চলছে অনবরত। সন্দিপনের ফোনের ক্যামেরাটা সুন্দর। সে আমাকে সেটা গছিয়ে দিয়েছে। যখন মন চাইছে ছবি তুলে চলেছি, তবে অবশ্যি আমার নিজের নয়, বাকি সবার। আগেই বলেছিলাম ছবি তোলার হাত আমার নেহাত মন্দ নয়। প্রায় সকলেই চাইছে আমি ছবি তুলে দিই তাদের। কারো কারো ছবি না তুলে এগিয়ে গেলে মনখারাপ করছে। এভাবে ঘণ্টা দুয়েক অতিক্রম হল। সিদ্ধান্ত নেওয়া হল একটা বড় গাছের নীচে মিনিট পাঁচেকের আশ্রয় নিয়ে আবার যাত্রা শুরু হবে। বিরাট একটা পাইন গাছের নীচে গা এলিয়ে মিনিট পাঁচেকের বিশ্রাম করা হল। জল বিস্কুট, চকোলেট কাজু কিশমিশ খেয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু হল।
আজ প্রকৃতি আমাদের সহায়। বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। মাঝে মাঝে মেঘেদের দল ভেসে এসে শরীর ছুঁয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, নতুন বৌ স্বামীর সোহাগে লজ্জা পেয়ে যেমন এদিক ওদিক লুকিয়ে পড়ছে এ যেন ঠিক তেমনই। সকলে হেঁটে চলেছি লাইন করে। সামনে এক বিশাল ঘন জঙ্গল। দূর থেকে কিছু ঠাওর করা সম্ভব নয়। শাল, সেগুন, পাইনের বিশাল বিশাল গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, তারাও পাহাড়ের মতো মৌন, অভিমানী। ভিতরে প্রবেশ করতেই বোঝা যাচ্ছে কতবছর রোদের আলো পৌঁছায়নি। গাছগুলোর পাতা ছাওনির মতো একে ওপরের সাথে জুড়ে গিয়ে ছাদ হয়ে আছে। সেই পাতার ছাদ ভেদ করে আলো পৌঁছানোর সাধ্যি কি আছে ! শুকনো পাতা বিছিয়ে সমুদ্র হয়ে আছে। পা দিতেই এক হাঁটু করে ডুবে যাচ্ছে। একেবারে নিস্তব্ধ, শান্ত। মাঝে মাঝে পাখিদের ডাক কানে আসছে। তার ওপর দিয়ে সকলের সারি সারি হেঁটে চলায় খসখস শব্দে জঙ্গলের ঘুম ভাঙছে। মিনিট দশ’পনের সেই পথেই পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের ওপরে ওঠা চলছে। জঙ্গলের পথ শেষ করতে না করতেই সামনে যা দেখলাম দেখে চক্ষুচরকগাছ। কি ভয়নকভাবে বিরাট এক হাড়ের কঙ্কাল পড়ে আছে। সম্ভবত পাহাড়ি গোরু বা মহিষ হবে, ভাল্লুক বা নেকড়ের হাতে বেঘোরে প্রাণ খুইয়েছে। বুদ্ধিজি চোখ দুটো বড়বড় গোল্লা করে বললেন, “বাবু ইসে জরুর ভালুনে খা লিয়া, গাই ইয়া ভ্যাষ নে আপনে টীম সে বিছড় গয়া থা সায়দ। পাহাড়োমে ইসলিয়ে হামেশা টীমকে সাথ মিলজুলকে চলনা চাহিয়ে। নহি তো ভালু ইয়া ভেড়িয়াকো খা যায়েগা।” আরও একটু সামনে যেতেই দেখি বিরাট এক শিং, ভেতরটা ফাঁপা। সম্ভবত মহিষের বা পাহাড়ি গরুর হবে। বেচারা বোধহয় কোনো ভালু বা হায়নার পেটে গেছে। তবে, হাড়ের কঙ্কাল দেখার পর থেকে প্রত্যকের মধ্যে একটু পরিবর্তন দেখা গেল। কেউ আর দলছুট হয়ে এগিয়ে বা পিছিয়ে চলার দুঃসাহস দেখাল না। জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে সামনের প্রবেশ বিস্তীর্ণ সবুজ পাহাড়ি ঘাসের বনের মধ্য দিয়ে, সঙ্গে ফার, জুনিফার গাছের ঝোপ। দূর থেকে মনে হচ্ছিল কেউ যেন সবুজের বিছানা পেতে দিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে বহুবছর ধরে। উপরে ওঠার কোনো পরিচিত রাস্তা নেই। বিছানাটা ঢালু হয়ে ওপরে উঠে গিয়েছে। সেখানে জনমানুষের কোনো পদচিহ্ন নেই। বেশ খানিকটা চলার পথ বাকিদের খুব ক্লান্ত, অবসন্ন দেখাচ্ছিল। অগত্যা কিংশুকদাকে বলে একটু বিশ্রামের ব্যবস্থা করি। মিনিট দশেক বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় পথচলা শুরু। বুদ্ধিজিকে জিজ্ঞেস করলাম, “বুদ্ধিজি হামলোক কাহা ঠেহেরেঙ্গে আজ? অউর কিতনা লাগেগা পৌছনমে?” তিনি তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন, “অউর যাদা নহি, বাস বিস তিস মিনটোমে পৌছ জায়েঙ্গে।”
যত উপরে ওঠা হচ্ছে তত পাহাড়ের প্রতি প্রেম গভীর, গাঢ়, দৃঢ় হয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা, বাতাসের শান্তির শ্বাস, প্রাণ জুরিয়ে যাচ্ছে। সর্বত্র এক অপার শান্তি বিরাজ করছে। বারবার নিজেকে দোষারোপ করে যাচ্ছি কেন যে এতবছর ঘুমিয়ে ছিলাম অজ্ঞতার তিমির আচ্ছাদনে আবৃত হয়ে ! আধাঘণ্টাখানেকের মধ্যে পাহাড়ের একটা ঢালু জায়গায় পৌঁছানো হল অবশেষে, যার কিছুটা ওপরে উত্তরপূর্বদিকে একটা সুতোর মতো ঝর্ণা বয়ে নীচে চলে গিয়েছে। চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল পড়ে যাচ্ছে সেই ঝর্ণাধারা থেকে। নীচে হাতদশেকের মধ্যে পাইন, সিডার ইত্যাদি গাছের ঘন বন। এই জায়গাটিকেই স্থানীয় লোকেরা ‘মাইলিথাল’ বলে অভিহিত করে থাকেন। উত্তরে পাহাড়ের গায়ে পাহাড় ঘষাঘষিলেগে ওপরে উঠে গিয়েছে। সবুঝ ঘাসের পাতা বিছানা সেইদিকেই উঠে গিয়েছে। একে একে সকলে মাইলিথালে পৌঁছালে ঘড়িতে তখন দুপুর দুটো বেজে দশ মিনিট হয়েছে। দেরী না করে তাওজি এবং বুদ্ধিজি একটা জায়গা নির্বাচন করে, আমি মনোজদা এবং সন্দীপ তাঁবু খাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এদিকে বুদ্ধিজি, কিংশুকদা এবং বাবাই দা রান্নার ব্যবস্থা শুরু করে দেয়।
আজকের পরিকল্পনা ছিল দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে পুনরায় ট্রেকিং-এ বেরিয়ে পড়া হবে। কিন্তু, কয়েকজন পায়ে এত ব্যথা পেল যে কিংশুক দাও মেনে নিল। সকলে এবিষয়ে একমত হল যে, মাইলি থাল ভালো করে ঘুরে উপভোগ করা হোক। ঘণ্টাখানেকের অনেক আগেই বুদ্ধিজি গরম গরম খিচুড়ি, সব্জী আর ডিমভাজার আয়জন করে ফেলল। রসনা তৃপ্তি করে খেলাম। দুপুরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী থেকে ১৫/১৬ ডিগ্রী থাকলেও মেঘেদের দল যখন তাঁবু ঢেকে ফেলে তখন হু হু করে পারদের স্তর কমে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রীতে পৌঁছাচ্ছে। বুদ্ধিজির থেকে শুনলাম যে, মাথার ওপর সূর্য ডুবে গেলে তাপমাত্রা কমতে কমতে একেবারে মাইনাসে না পৌঁছালেও তা রাতে ২ থেকে ৪/৫ ডিগ্রীতে পৌঁছায়। যাকে বলে ঠাণ্ডা একেবারে জাঁকিয়ে পড়ে। ছেলেবেলা থেকেই আমার ঠাণ্ডার ধাত, একটুতেই ঠাণ্ডা লেগে যায়। তবে, মজার বিষয় হল, এখন পর্যন্ত ঠাণ্ডা সেভাবে কাহিল করতে পারিনি। সঙ্গে মন্টিকোপ এ নিয়ে রেখেছি, প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে। যেদিন বুদ্ধিজির বাড়িতে পৌঁছেছিলাম কেবলমাত্র সেই দিনেই একটি ব্যবহার করেছিলাম। যাইহোক, গরমের পোষাক চাপিয়ে মাইলিথালের চারিদিকে ঘুরে নিতে হবে; কে জানে “জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা”। তাছাড়া এখনও পর্যন্ত তার আর দরকার হয়নি। বেরোব ভাবছি হঠাৎ চারিদিক দমকা মেঘে ঢেকে গেল মুহূর্তেই। ঘনমেঘের আস্তরণ দূরীভূত হলে তাঁবু থেকে বেরিয়ে দেখি আমি স্বর্গের দেশে। তাঁবুর পশ্চিমদিকটা ঘন জঙ্গলে ঢাকা যার সামনে বিরাট বিরাট মহীরুহের জঙ্গল ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না। কিন্তু বাকি তিনদিকে যা দেখলাম কি বলব, কোনো শব্দপ্রয়োগই ব্যক্ত করতে পারবে না যে কিরকম অপারমার্থিক অনুভূতি হয়েছিল। আশেপাশের সবকয়টি পাহারের মাথায় বরফ ধেকে ফেলেছে। মনে হচ্ছে যেন সবুজের মাথায় কেউ তুলোর পাহাড় বানিয়েছে বিশেষ একপ্রকারে। কি অপূর্ব তার শোভা, কি মাধূর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
বুদ্ধিজিকে একটা আইস কুঠার নিয়ে ঝোপের দিকে এগোতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, “বুদ্ধিজি আপ কাহা যা রহে হো?” বুদ্ধিজি দূরে থেকে উত্তর করল, “জড়িবুটি লেনে যা রহা হু, ইধর পাহাড়োমে বহুত জড়িবুটি মিলতা হ্যায়। হাম যব নীচে যাতে হে গাঁওকা লোক চলে আতা হ্যায় দাবাই লেনে।” আমি তৎক্ষণাৎ বললাম, “হম ভি আপকে সাথ জানা চাতে হে।” আমার কথা শেষ হতে না হতে বাকি সকলে ও একসাথে বলল আমারাও যাব। বুদ্ধিজি শুনেই খুব খুশি। সকলে একসাথে জড়িবুটির সন্ধানে বেরিয়ে গেলাম। বুদ্ধিজি বিশেষ প্রকারের পাহাড়ি ঘাসের গোড়া উপড়িয়ে সকলকে দেখিয়ে বললেন, “এ দাবাই দাঁতো কে লিয়ে। হম সাক্রো সালসে পাহাড়োমে এহি দাবাই ইস্তেমাল করকে আ রহে হ্যায়। জব কিসিকা দাঁত দুকতা হ্যায় ইয়া দাঁত ইধরউধর হো যাতা হ্যায় তব বো ইস মূলিকো শুখাকে ছোটা সা হিসসা ইস্তেমাল করতা হ্যায়।” দেবব্রত দা, অনিরুদ্ধ দা শিকড় তুলতে লেগে গেল। বুদ্ধিজি এক জায়গায় বসে পাহাড়ের গল্প শোনাতে লাগলেন। সকলে মোহিত হয়ে সেই গল্প শুনছে, আমরা কয়েকজন শিকড় তুলছি। বেশ খানিকটা শিকড় তোলা হলে বুদ্ধিজি বললেন, “এ বহত জাদা হো গয়া। চার পাচ সাল ইসসে হো জায়েগা। চলো আপলোক বপাশ চলতে হ্যায়।” সকলে তাঁবুতে ফিরে আসলাম। ততক্ষণে গরম গরম টিফিনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে- পকোড়া, ক্ষীর ইত্যাদি।
খাওয়া সেরে সন্দীপন বায়না ধরল ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। একে একে বাকিরাও যোগ দিল। সকলের ছবি তুলতে তুলতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। দেবুদা তো ছবি পাগল, ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে কতবার করে যে ছবি তুলতে হল তা বলে বোঝানো যাবে না। একসময় বিরক্ত হয়ে বললাম “চলো তো অনেক হল, এত ছবি খাবে কে। তুমি এমনিতেই হিরো, এত পোজ দিয়ে ছবি না তুললেও লোকে খুব খাবে।” দেবুদা লজ্জা পেল। ফিরে এসে তাঁবুর মধ্যে ঢুকে পড়লাম। দিনের আলো তখনও মিশে যায়নি পাহাড়ের আড়ালে। পাহাড়ে বরবরই ভালো করে সন্ধ্যে নামতে আটটা বেজে যায়। তবে, তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। প্রচণ্ড শীতল পাহাড়ি হাওয়া বইছে। মনে হচ্ছে যেন ঠাণ্ডার ধারালো তীর শরীরে বিদ্ধ। এক মিনিট তাঁবুর বাইরে থাকলেই গরম পোষাক পরেও সারা শরীর জমে যাচ্ছে। তাওজি নীচের জঙ্গল থেকে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে অনেক আগেই বনফায়রের আয়োজন করে ফেলেছে। সুরেশ, তাওজিকে সার্বিকভাবে সাহায্য করে চলেছে।
তাঁবুর বাইরে সর্বত্র গাড় মেঘে ঢাকা। কতকগুলি তাগড়াই শুকনো কাঠ জ্বালিয়ে দিল সুরেশ। রান্নার কাজে বুদ্ধিজি, কিংশুকদা এবং বাবাই দা ব্যস্ত। বাকি সকলে বনফায়রকে গোল করে ঘিরে। বনফায়ারের আগুন তেঁতে উঠেছে। আগুনের তাপ গমগম করছে। তাওজি কোমরের গাঁট থেকে দেশি চুল্লুর বোতল বের করে কয়েক ঢোক মেরে তৎক্ষণাৎ গাঁটের মধ্যে লুকিয়ে রাখছে। তরলের রঙ অন্ধকারে ঠিক ঠাওর করতে পারা যায়নি, তবে আগুনের সামনে ধরতেই হলুদ জাতীয় তরল চোখে পড়ল। আমাদের টীমের কয়েকজন আবদার করতে তাওজি গাঁট খুলে বোতলটা এগিয়ে দেয়। দূরে মাঝে মাঝে দু একটা পাখি কিচিরমিচির করে ডেকে উঠছে। আশপাশ একেবারে নিস্তব্ধ। আমাদের গলার স্বর যেন জয়ঢাকের মত বাজছে পাহাড়ে। আগুনের পাশে গোল করে বসে একে অপরের মুখোমুখি। চোখে চোখে অনেকে অনেক কিছু বলে যাচ্ছে, মুখে কোনো কথা বলছে না। তাদের মধ্যে কারো কারো চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, অথচ কাঁদছে না। সম্ভবত নিজের নিজের কাছের মানুষের অভাব অনুভব করছে। আগুনের রক্তিভ আলোতে তাদের মুখ খুব অসহায়, নিঃস্ব লাগছে। কেউ বুঝতে পারছে না যে আমি আড়াল থেকে কমবেশি সকলের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি। আমিও অবশ্যি কিছুক্ষণের জন্য স্মরণ করছিলাম যাদেরকেই আপন করে কাছে টেনেছি তারাই আমার সাথে সুযোগে সদব্যবহার করেছে। মুহূর্তেই ভাবনাকে সরিয়ে বাকিদের মন পড়াতে শুরু করলাম। পরিস্থিতি অন্যরকম দেখে প্রস্তাব দিলাম যে গানের লড়াই হোক, যাতে সকলের মনের পরিবর্তন হয়। শুরুটা হল গানের লড়াই-এর মধ্যে দিয়ে। একদিকে ছেলেদের টীম, অন্যদিকে মেয়েদের টীম। ছেলেরা সংখ্যায় বেশি হলেও মেয়েদের দু তিন জন মেয়ের কাছে পেরে ওঠার নয়। তবে যে পক্ষেরই হোক না কেন সকলে মিলে পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ভেদ করে একইসুরে গান গাওয়া হল। কিছুপর গানের মোড় বদল হল। ডাক্তার সাহেবা একাই গানের আসর জমিয়ে তুলল, আর. জে. ম্যাডামও অবশ্যি সাথ দিল। রান্নাবান্না সেরে এসে বাকিরাও একে একে যোগ দিল। সে এক অদ্ভুদ আনন্দ, এক অন্যরকম আমেজ। তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫/৬ ডিগ্রি হবে হয়তো। গমগমে বনফায়ারের আগুন, যেদিক আগুনের সামনে সেদিক গরম, অন্যদিক ঠাণ্ডাতে বরফ হয়ে যাচ্ছে। তাওজি হিমাচলি ভাষায় গান করছে, আঞ্চলিক গান থেকে শুরু করে আধুনিক, এমনকি অত্যাধুনিক সবরকম সঙ্গীত পরিবেশিত হচ্ছে। ঐ সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরে নিজেকে বড় সৌভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছিল।
বনফায়ারের আগুনে পাহাড়ের স্নিগ্ধতা মেঘেদের শীতলতা, গাঢ় অন্ধকারের গহীনতা সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। গানের মাঝে মাঝে কিংশুকদায়ের মজার মজার গল্প, অভিজ্ঞতা আসরের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছিল। হঠাৎ, এক ভয়ানক চিৎকারের আওয়াজ কানে আসে নীচের জঙ্গল থেকে। আগেই বলেছি তাঁবু থেকে বিশ ত্রিশ গজের মধ্যেই জঙ্গল। আগুন্তক আওয়াজের ভয়ঙ্করতা, বিকটতা এত প্রবল যে ভয় পেয়ে কেউ কেউ তাঁবুর মধ্যে চলে গেল। বাকিদের যারা আগুনের চারপাশে বসে ছিল সকলে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেল। আমিও অবাক কম হয়নি। তাওজিকে জিজ্ঞেস করলাম, “তাওজি এ চিঁখ কিসকি থি?” তাওজি চোখদুটো বড়োবড়ো করে হিমাচলি ভাষায় কিছু একটা বলল। আমার বোধগম্য হল না ঠিক। পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, “কনসি জঙ্গলি জানবর থি বো?”, বুদ্ধিজি তখন বললেন, “স্নো লেপার্ড কি চিঁখ থি। ও সায়দ আসপাস হি হ্যায়, দুয়ো লেনে আয়া। ভালু কে জ্যাসা এ ভি কভি কভি আগ কি দুয়ো লেনে আতি হ্যায়।” কথা শেষ হওয়ার আগেই বাকিদের হৃৎপিণ্ড যেন খুলে বেরিয়ে আসল, দে ছুট। এক লাফে ছুটে তাঁবুর মধ্যে ঢুকে গেল। আমি বরাবরই ডানপিটে সাহসি, স্নো লেপার্ডের নাম শুনেই তাকে দেখার বড় বাসনা হল। কতবার কল্পনায়, স্বপ্নে বাঘের সাথে কুমিরের সাথে লড়াই করেছি। এইবার না হয় মুখোমুখি হওয়া হবে। তাওজিকে বললাম, “তাওজি মেরেকো স্নো লেপার্ড দেখনা হ্যায়। প্লিজ চলিয়ে না একবার।” কিংশুকদা বারণ করল। বারণ মানে কে! দুটো টর্চলাইট নিয়ে যেদিক থেকে আওয়াজ আসছিল সেই দিকেই সুরেশ, তাওজি এবং আমি এগিয়ে গেলাম।
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)