উত্তম পুরকাইত

মুসলমান পাড়াকে দাবিয়ে রাখার জন্যই সাধন ঘরামির মিথকে কাজে লাগিয়ে অজয় নাপিত দিলিপের কাছে মন্দির গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। দিলিপ সহজেই টোপটা গিলেছে। ছোটোখাটো তীর্থক্ষেত্র এখন সাধন ঘরামির মন্দির। স্মৃতি স্বরূপ ঘরামির নিজের হাতের ছাওয়া একটা ছোট ঘরকে সারিয়ে মেঝেটাকে সুন্দর করে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরের বাকি অংশ ভেঙে ফেলে সেখানে তৈরি করা হয়েছে শিব-দুর্গার মন্দির। চকচকে সাদা মার্বেল পাথরের বেদীর উপর বসানো হয়েছে মূর্তি দুটিকে। মন্দিরের চারিদিকে টাইলস বাঁধানো থাম। শিব-দুর্গা মন্দিরের পাশেই আবার একটি তুলসি মঞ্চ। দিলিপের পক্ষে সম্ভব ছিল না এমন কিছু করার। অর্থ সাহায্য সব অজয় নাপিতই করেছে। 

     এতদিন ছোট শিবপুরে লোকে পুজো দিতে আসত শুধু কাজীর ডাঙার শীতলাতলায়। আর সুবে বরাতের রাতে মোল্লা পাড়ার সকলে আসত দরবেশের মাজারে বাতি জ্বালাতে। এখন ভিড় জমায় সব ঘরামির উঠানে সদ্যনির্মিত শিব-দুর্গার মন্দিরে। অথচ ছমাস আগে ঘরামির ভিটেতে কেউ আসত না। ঘরামির প্রথম শিষ্য বাঞ্ছা যখন ছিল তখন কিছু ছেলে ছোকরা আসত। দলবল জুটিয়ে আসর জমাত বাঞ্ছা। ঘরামি খুড়ো বিরক্ত হলেও খুড়ির আসকারা থাকায় কিছু বলতে পারত না। বাঞ্ছা উধাও হওয়ার পর তাকে খোঁজ করতে গিয়ে খুড়িও আর ফিরল না, সেই থেকে দিলিপ সরমা ছাড়া কেউ আসত না ঘরামির উঠানে। সেই শূন্য ভিটে এখন পুণ্যার্থীদের ভিড়ে সরগরম। প্রতি বৃহস্পতিবার আর শনিবার মেলা বসে যায়। লোকসমাগম দেখে দিলিপ আবার ছোট একটা দোকান খুলে বসেছে। নানা ধরনের বিস্কুট, কেক, রুটি, চিপস, ক্যাটবেরি, লজেন্স, বিড়ি, সিগারেট, বিমল, শান্তি টুকিটকি এইসবের পাশাপাশি পুজোর সামগ্রীও পাওয়া যায় দোকানে।

   দুমাসে এতকিছু ঘটে যাবার পরেও দিলিপের মনে যেন শান্তি নেই। অজয় নাপিত যতই দিলিপকে দিয়ে ঘরামি খুড়োর স্মৃতিতে মন্দির বানাক দিলিপের সন্দেহ সেই অজয়কে ঘিরেই। দিলিপ জানে শুধুমাত্র সুনাম কেনার জন্য অজয় নাপিত এত টাকা খরচ করেনি। দল পরিবর্তনের বছর দুয়েকের মধ্যে নতুন বাড়ি হাঁকিয়েছে। বিষয় সম্পত্তি কত কিনেছে তার ইয়ত্তা নেই। সর্বদা দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সরকারি কাজের কাঠমানি, জমির দালাল, কনস্ট্রাকশনের দালালের টাকা ভাগাভাগি হয় পার্টি তার অফিসে বসে। রুস্তম মোল্লা হিন্দু পাড়ায় মাথা গলাতে চাইলেও উপস্থিত বুদ্ধির জোরে ঠিক তাকে ঠেকিয়ে রাখে। আসলে সবাইকে কিছু না কিছু পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করে সুযোগ বুঝে নিজেরটা গুছিয়ে নেওয়ার দক্ষতা আছে অজয়ের।  

     দিলিপ তাই ভয়ে ভয়েই থাকে। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়, কেন যে মন্দির গড়ার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল ! বলা যায় না, দলবল সঙ্গে জুটিয়ে এনে মন্দির সুরক্ষার নামে ঘরামি খুড়োর ডাঙা কেড়ে নিতে অজয় নাপিতের কতক্ষণ। চাপে পড়েই দিলিপকে মন্দির গড়ার প্রস্তাব মানতে হয়েছে। না মানলে তার মতো চুনোপুঁটিকে এতদিনে কোনও কারণ ছাড়াই উঠিয়ে দিত। 

     কত নাটক জানে লোকটা। বাঞ্ছার কথা তুলে বলে- সত্যি বলছি দিলিপ, তুই যা করেছিস আমার ছেলে বাঞ্ছা থাকলেও এতটা করত না। মানুষটা সারাজীবন ধরে গ্রামের সবার উপকার করে গেছে। যখন চাষের খড় থাকলেও মজুরি জোগাড় করতে না পেরে কেউ ঘর ছাইতে পারত না তখন বৃষ্টির আগে ঠিক তার ঘর ছাওয়া হয়ে যেত। হয় সাধন খুড়ো নিজে গিয়ে নয়ত বাঞ্ছাকে দিয়ে ঘর ছাইয়ে দিত। সেই মানুষটার নামে একটা মন্দির না করতে পারলে গ্রামের মান থাকবে না। বসে বসে এইসব কথাই ভাবছিল দিলিপ। 

    এমন সময় মাস্টারকে এদিকে আসতে দেখে তার মন আনন্দে ভরে ওঠে। আজ সারাদিন সে মাঠে যায়নি। অনেক দিন পরে একটা খি-জাল বোনার অর্ডার পেয়েছে। ঠিক করেছিল জো তুলে আজ একটা পাটার অর্ধেক অন্তত বুনে রাখবে। কিন্তু হাত আর আগের মতো চলে না। সবই আসলে অভ্যাস। তাছাড়া জাল বুনতে বুনতেও সেই একই ভাবনা ভাবছিল। ভাবছিল অজয় নাপিতের মতলোবটা ঠিক কি ? তবে ওর মতলোব যাই থাক দিলিপ চিরকাল ভরসা করে এসেছে মাস্টারকে। তাই মাস্টারকে দেখে জাল বোনা ফেলে রেখে ছুটে গিয়ে মাস্টারকে প্রণাম করতে যায়। মাস্টার হাত দুটো ধরে ফেলে। বলে, কি ব্যাপার ! আজ কাজে বের হোসনি কেন রে ? কেউ আসবে নাকি ? বা ! খুব সুন্দর মন্দির বানিয়েছিস দেখছি। খুড়ো কি তোর জন্য গুপ্তধন রেখে গিয়েছিল নাকি ? ভাগ্য ভাল বলতে হবে সাধন ঘরামির। শেষ বয়সে তোর মতো এমন শিষ্য পেয়েছিল। 

    বাকিটা আর বলে না মাস্টার। বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, তোর মতো শিষ্য আর অজয় নাপিতের মতো মাতব্বর। 

দুই  

রবীনের চায়ের দোকানে ব্যাপক জটলা। দিলিপের বৌ সরমা গোটা পাড়া বলে বেড়িয়েছে- তাদের ইচ্ছা ছিল না শ্বেতপাথরের মন্দির গড়ার। তাদের সে ক্ষমতা নেই। খুড়োর স্মৃতিতে ছোট্ট একটা মন্দির তারা গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু অজয় নাপিত জোর করে তার পাপের টাকায় মন্দির গড়িয়ে নিজের নাম ছড়িয়েছে। দেবতার কাছে কোনও কিছু গোপন করতে নেই। আগে জানলে তারা কিছুতেই এভাবে মন্দির গড়ায় সায় দিত না। বাঞ্ছাকে ঠাঁই দিলেও ঘরামি খুড়ো অজয় নাপিতকে একদম সহ্য করতে পারতেন না। তাই ঘরামি খুড়োর মন্দিরে খুঁত হয়েছে। মা নিজে এসে তাকে এসব কথা বলে গেছেন।  

     কথাটা সকলে না হলেও কেউ কেউ বিশ্বাস করেছে। বিশেষত মেয়েরা। তাদের সারাদিন এই নিয়েই আলোচনা চলেছে। সন্ধেবেলা সেই ঢেউ এসে লেগেছে রবীনের চায়ের দোকানে। রবীন তো খুবই উত্তেজিত। যে দোকানে ঢুকছে তাকেই বলছে- এই জন্যেই বলে, শালা গরিবের কখনও উপকার করতে নেই। মনে করলে অজয়দা তোদের পোঁদে লাথি মেরে তাড়াতে পারত। তোরা তো শালা ঘরামি খুড়োর কেউ নয়। উড়ে এসে জুড়ে বসে সব দখল করে খাচ্ছিস। মন্দির গড়ে তো ভালই সিদে পাচ্ছিলি। দশ পাড়ার লোক এসে পুজো দিচ্ছে। দুটো পয়সার মুখ দেখতেই অজয় নাপিতের পিছনে লেগেছিস। এখন পারবি তো আটকাতে, অজয়দা যদি পার্টির ছেলেদের নিয়ে খেদায়। সাধে কি আর বলে- খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, ডকে উঠল এঁড়ে বাছুর কিনে ! 

    সন্ধে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত রবীনের দোকানে যারা আড্ডা দেয় সকলেই একই দলের। তাদের নিজেদের মধ্যে কিছু বিরোধ থাকলেও অজয় নাপিত সবাইকে কিছু না কিছু দিয়ে একই ছাতার তলায় বেঁধে রেখেছে। তারা সবাই এও জানে দল পরিবর্তন করে অজয়দা দুবছরে ভালই কামিয়েছে। অজয়দার অনুদান মানেই ঝাড়া টাকা। কিন্তু কেউ কিছু বলে না, বলতে পারে না যে যার স্বার্থে। এখানে সে আলোচনাও করা যায় না। কারণ সবাই জানে রবীন অজয়দার কাছের লোক। যে যাই বলুক রবীন তাতে রঙ চড়িয়ে অজয়দার কানে তুলবেই। তাই রবীনের উত্তেজনা দেখেও সবাই নীরব। সবাই অপেক্ষায় থাকে, দিলিপের বোয়ের কথা রবীনের কাছে শুনে অজয়দা কি প্রতিক্রিয়া দেখায় ! 

   রবীন বুঝেছিল অজয়দাকে নিয়ে এই বিতর্কের সময় রুস্তম মোল্লা ও তার ছেলেরা সুযোগ নিতে ছাড়বে না। হিন্দু পাড়ায় সকলেই যে অজয়দার পক্ষে তা অজয়দাকে দেখাতেই রবীন বারবার কথাটা তুলছিল। ভেবেছিল সকলেই কিছু না কিছু বলবে, একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। অজয়দা আসার আগেই বাতাস একটু গরম করে রাখবে। উত্তেজনা দেখে অজয়দা বেশ খুশি হবে। দিলিপের বোয়ের রটনা যে কেউ বিশ্বাস করেনি তাও বোঝানো যাবে। কিন্তু তার কথায় কেউ উত্তর দেয় না দেখে রবীন আরও একটু রঙ চড়ায়- কি চামার দেখ। উপকারের সময় উপকার নেবে আবার নিন্দেও করবে। শালা মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি। যার তার নামে যাই তাই বললেই হল, দেশে আর মানুষ নেই !  

    কিন্তু রান্নায় কড়া গরম হওয়ার আগে সবজি ছেড়ে দেবার মতোই অজয়দা আগে আগে এসে হাজির। না, চোখে-মুখে কোনও উদ্বেগ বা চিন্তার ছাপ নেই। অথচ এসব কিছুই তার কানে এখনও যায়নি তা হতে পারে না। সকলে ভাবে তবে কি অজয়দা দিলিপের বোয়ের মিথ্যা রটনাকে গুরুত্বই দিতে চায় না। নাকি ব্যবস্থা যা করার সব করে ফেলেছেন, তাই এত নিশ্চিন্ত। কারও পরামর্শের অপেক্ষায় বসে থাকার লোক নয় অজয়দা। যেচে তার কাছে প্রসঙ্গটা তোলা নিছক বোকামি, এই ভেবে সকলেই ইতস্তত করে। অজয়দার কাছে রবীনের মান অপমানের কোনও লজ্জা-সংকোচ নেই। তাই রবীনই কথাটা তোলে। বলে- না অজয়দা, চুপ করে থাকলে হবে না। তোমার নামে যে কুৎসা করবে তুমি কিছু না বললেও আমরা শালার ঠ্যাঙ ভেঙে দেব। আমরা হিন্দুরা যখন সবাই এক হচ্ছি তখন নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কথাগুলো বলার সময় রবীন বারবার নজর রাখছিল মোল্লা পাড়ার কেউ এসে পড়ল কিনা ? এই সতর্কতা রবীন শিখেছে অজয়দার কাছ থেকেই। অজয়দা বলে, মনে রাখবি দেওয়ালেরও কান আছে।

    সকলেই তাকিয়ে আছে। অজয়দা কি বলে ? অজয় নাপিত ভাবছে অন্য কথা। ভাবছে, লোকে বলে বটে কাক কাকের মাংস খায় না, কিন্তু তাদের দলের শত্রু এখন তাদের দল। প্রতিদিন চলেছে এলাকা দখলের রাজনীতি। বোমাবাজি, খুনোখুনি, পাড়াছাড়া করা সর্বক্ষণ চলেছে। এম.পি-র অনুগামীদের সঙ্গে এম.এল.এ-দের অনুগামীর লড়াই, আদিদের সঙ্গে নতুনদের লড়াই, প্রবীণদের সঙ্গে যুবদের লড়ায়ে প্রতিটা এলাকা এখন উত্তপ্ত। সেদিক থেকে রুস্তমের হাত অজয়ের থেকে উঁচু স্তরে। শালা সর্বদা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। একটা না একটা চেলাকে রবীনের দোকানে বসিয়ে রাখে। শুধু মুসলিম ছেলে নয়, আজকাল আবার পয়সার লোভ দেখিয়ে হিন্দু ছেলেদেরও বসিয়ে রাখছে। সবাইকেই এখন সন্দেহ হয় অজয়ের। তাই এসেই আগে সকলের মুখের দিকে ভাল করে তাকিয়ে নেয়। মনে হয় না, সন্দেহ করার মতো কেউ এখানে নেই। তবু নিশ্চিন্ত হতে পারে না অজয়। তার নামে এত বড়ো একটা বদনাম রটানো হয়েছে সুযোগ না নিয়ে কি রুস্তম বসে থাকবে ! শালা এমনিতেই ব্লক সভাপতিকে শুনিয়ে রেখেছে,- অজয়দা দুহাতে কামাচ্ছে। পার্টির দুর্নাম করে ছাড়বে। তখন অজয়দাকে আর পাবেন না।– এই টুকুই তো সভাপতি বলল, আরও কি লাগিয়েছে কে জানে ! 

     তবে অজয়ও ছেড়ে কথা বলবে না। রুস্তম মোল্লার দলবল আছে তার নেই ! পরিস্থিতি বুঝে ঘরামি খুড়োর ডাঙায় দিলিপকে দিয়ে শিব-দুর্গার মন্দির বানিয়ে হিন্দু ঐক্য একটা গড়ে তুলেছে। এখন আশপাশের হিন্দু গ্রাম গুলোতেও তার শিব-দুর্গায় মন্দিরের নাম ছড়িয়ে পড়েছে। আর যারাই আসছে মন্দিরে পুজো দিতে তারাই দেখে যাচ্ছে মন্দিরের গায়ে পাথরে খোদাই করা ঘরামি খুড়োর নামের নিচে জ্বলজ্বল করছে মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অজয় নাপিতের নাম। বেশ কিছু নতুন ছেলে যারা এতদিন চুপচাপ থাকত তারা সক্রিয় হয়ে দলে যোগ দিয়েছে। 

    শুধু ছেলেরাই নয়, অজয়ের বাড়িতে এখন সকাল, সন্ধে ভিড় বাড়ছে ভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মেয়েমানুষদেরও। বাড়ির বৌ, শাশুড়ি, ননদ, মা, মেয়ে আসে সরকারি নানা প্রকল্পের সাহায্যের দরবার করতে। মোল্লা পাড়া থেকেও আসে। বুঝতে পারে রুস্তম মোল্লাকেও মুসলমান পাড়ার সকলে ভাল নজরে দেখে না। অজয় এদেরকে আগে সাহায্য করে, হাতে রাখতে তৎপর হয়। বোর্খা পরা মুখ ঢাকা থাকায় অজয়ের চিনতে একটু দেরি হয়। কথা বলার সময় মুখের পর্দা সরালে বয়স চেনা যায়। যুবতী সুন্দরী দেখলে আজকাল অজয় নাপিতের কোমরের সুড়সুড়ি বেড়ে যায়। মনে মনে বলে, আহা ! কী সুন্দর খাসা মাল। ঠিকমত টোঁপ দিলে দু-একটাকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ কিংবা কাছাকাছি দীঘায় একরাত দুরাতের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়াই যায়। কিন্তু সাহস হয় না ওই শালা রুস্তম মোল্লার জন্যই। অথচ তার চোখের সামনে রুস্তম মোল্লা বোর্খা পরিয়ে কালো কাচে ঢাকা গাড়িতে কারও না কারও বাড়ির মেয়ে, বৌকে নানা টোঁপ দিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ব্লক সভাপতি জেনেও যেন কিছু জানে না।

    সে যাইহোক, ইদানিং দলীয় মিটিং মিছিলে তার লোক রুস্তমের লোককে টেক্কা দিছে। দলবল বেড়েই চলেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, রুস্তম মোল্লা বলে বেড়াচ্ছে- মানুষ আমাদের দলের পক্ষে থাকলেও অজয়দার মতো কিছু নেতা গোপনে গোপনে হিন্দুদের এক করে সাম্প্রদায়িক দলে যোগ দেবার মতলোবে আছে। তবে রুস্তম মোল্লা অভিযোগ জানালেও এতগুলো হিন্দু ভোট হাতছাড়া হবে এই আশঙ্কাতেই ব্লক সভাপতি এখনও কিছু বলতে পারে না। 

   তবু নিশ্চিন্ত থাকা অজয় নাপিতের পক্ষে সম্ভব নয়। রবীনের কথায় কান না দিয়ে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে- হ্যারে রবীন, ও পাড়ার নতুন কেউ আজ এদিকে এসেছিল ? 

   রবীন জানায়, না দাদা। দুদিন হল রুস্তম চাচা, কাদের মোল্লা, রহমত, রওসন, হালিম কাউকেও এদিকে আসতে দেখিনি। আমাদের ছেলেদের চাপ থাকায় মোল্লা পাড়ার ছেলেরা বড়ো একটা এদিকে ঘেঁষছে না। শালাদের মনে বোধহয় ভয় ঠূকেছে। 

   মাত্র দুদিন মাত্র গ্রামে ছিল না। জরুরি কাজে শহরে গিয়েছিল। এসেই দিলিপের বোয়ের কথাটা শুনেছে। শুনে তখনি অজয়ের মনে হয়েছে পিছন থেকে চালটা খেলছে নিশ্চয়ই শালা মাস্টার। সে-ই সব করাচ্ছে দিলিপ আর তার বৌকে দিয়ে। মাস্টারের প্রতি পাড়ার মেয়েদের এই গায়েপড়া ভক্তি সহ্য হয় না অজয়ের। 

    মাঝে মাঝেই শালা মাস্টারের প্রতিবাদের বাই ওঠে। এবার একটা নারীঘটিত বদনাম দিয়ে গ্রাম ছাড়া না করলেই নয়। তার আগে রুস্তমের অবস্থানটা ভাল করে জানতে হবে। সেই জন্যেই রবীনের দোকানে আসা। তাছাড়া নবীনের পাড়াবেড়ানি বৌটার সম্পর্কেও একটা খোঁজ নেওয়া দরকার। 

    রবীন জানে অজয়দা আসা মানে সকলের এক রাউন্ড চায়ের অর্ডার। সকলকে চা দেবার পর তবে অজয়দাকে চা দিতে হবে। রবীন অজয়দার হাতে চা ধরিয়ে দিয়ে কিছু শোনার অপেক্ষায় থাকে। অজয় বলে- ভাল কথা রবীন, নবীনের বৌ কি এখনও সন্ধেবেলা তোর ছেলেদুটোকে মাস্টারের বাড়ি আনতে যায় ? কথাটা এত আস্তে বলে যাতে অন্য কেউ না শুনতে পায়। এসব ব্যক্তিগত কথা সকলের সামনে জিজ্ঞেস করতে অজয় নাপিত এখনও লজ্জাবোধ করে। তাছাড়া কে কোথায় কি ভেবে বসবে ! 

   রবীন জানায়, আগের মতো হামেশাই নয়, আসলে আমার তো ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। তাই ছোটবৌই যেতো। আর ঝন্টু-মন্টু তো ওকে ছাড়তেই চায় না। আমার সঙ্গে তো কথা নেই, অথচ ছেলেদুটোকে কী জাদু করে রেখেছে কে জানে ! তবে এখন আর মাস্টার আগের মতো রাত করে পড়ায় না। সন্ধের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়।   তাছাড়া আজ দুদিন হল নবীন বৌকে নিয়ে কলকাতায় গেছে। ভাই তো বিয়ের পর থেকেই নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু কিছুতেই যেতে চাইতো না। বলত ঝন্টু-মন্টুকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। এবার নাকি আবার নিজে থেকেই গেছে। রবীনও কথাগুলো খুব আস্তে আস্তে অজয়দার কানে কানে বলে। 

    তিন চার চুমুকে চা শেষ করেই সকলে দেখে অজয়দা বেরিয়ে যাচ্ছে। দিলিপের বোয়ের রটানো কথায় অজয়দার প্রতিক্রিয়া জানতেই অনেকের এতক্ষণ বসে থাকা। সকলেই তাই হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে রবীনের দিকে।  

 তিন  

রাতটুকু ভয়ে ভয়ে কাটিয়ে ভোরের আলো ফুটতেই রবীন সকলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। ঢুলু ঢুলু চোখে ঝন্টু মায়ের এবং মন্টু বাবার হাত ধরে ছুটছে। সকলের চোখে মুখে আতঙ্ক। যেন ঘুমের মধ্যেও গত সন্ধের ঘটনা-দৃশ্য ওদের তাড়া করছে। ছুটতে ছুটতে এসে সকলকে নিয়ে সেই যে রবীন ঘরে ঢুকেছিল আর বের হয়নি। না, মোল্লা পাড়ার ছেলেরা গ্রামের ভিতরে ঢোকেনি। নতুন রাস্তার মোড়ে সদ্য গড়ে ওঠা দোকানগুলোর উপর আক্রমণ চালিয়েই ফিরে গেছে। তবু সাহস হয়নি রবীনের ঘর থেকে বেরিয়ে আর কারো কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা দেখে আসার।

   অনেকক্ষণ পরে যখন মনে হয় অজয়দার কাছে গিয়ে সব জানাবে ততক্ষণে শুধু অজয়দা কেন বোধহয় গ্রামের সবাই জেনে গেছে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে অনেকে। বলাবলি করছে এর একটা প্রতিবিধান করতেই হবে। মুসলমানদের এই বাড়-বৃদ্ধিকে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। রবীন খুঁজছিল অজয়দাকে। ভাবছিল অজয়দাও হাত গুটিয়ে বসে থাকার লোক নয়। বদলা একটা নেবেই। 

      আর ঠিক তখনই শুনতে পায় পুলিশের ভারী বুটের আওয়াজ। জানালা দিয়েই দেখে কাকে যেন ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কে হতে পারে ! একটু দূরে যেতে পিছন থেকে ভাল করে তাকাতেই বিস্ময়ে হতবাক রবীন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারেনি। অজয়দাকে! অজয়দাকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ! এমেলের ডান হাত অজয়দা, থানা পুলিশ তো তার পকেটে ! পুলিশের কী চাকরির ভয় নেই ?

     মোল্লা পাড়ার ছেলেরা তাদের দোকান ভেঙেছে। ভয়ে সব ছেড়ে পালিয়ে এসেছে সবাই। যেভাবে সব অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বেরিয়েছে পাড়ায় ঢুকলে আরও কিছু ক্ষতির আশঙ্কা তারা করেছিল। সামনা সামনি কেউ পড়ে গেলে খুন-খারাপি একটা হলেও হতে পারত। কিন্তু তাই বলে এত বড়ো ক্ষতি ! রবীন ভাবতেও পারেনি।  

     আতঙ্কে সারারাত গুটিয়ে থেকেছে। ভেবেছে নিশ্চয় পুলিশ এবার তাকেও তুলে নিয়ে যাবে ! তার নামেও অভিযোগ করেছে রুস্তম মোল্লা ! নিশ্চয়ই জানিয়েছে, এর দোকানে বসে, এরই মদতে অজয় নাপিত পরিকল্পনা করে লোকের জায়গা-জমি দখলের রাজ চালিয়ে যাচ্ছে ! চা দোকান চালালেও সমস্ত খবরা-খবর এ-ই রাখে ! এটা দোকান নয়, অজয় নাপিতের পার্টি অফিস। আরও বড়ো অভিযোগ করতে পারে। অজয় নাপিত হিন্দুদের নিয়ে নতুন দল গড়ে মুসলমানদের জব্দ করতে দাঙ্গা বাধাতে চায়। এই দোকানে বসে মুসলমানদের গালিগালাজ করা হয়, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয় ! মুসলমানরা এই দোকানের পাশ দিয়ে একা একা যেতে পারে না, আরও কত কি অভিযোগ জানাতে পারে। হয়ত সেই আশঙ্কাতেই মোল্লা পাড়ার ছেলেরা আগে তাদের দোকান কটা ভেঙেছে। সারারাত ভয়ে ভয়ে জেগে কাটিয়েছে । 

     আগে অবশ্য হিন্দু-মুসলমান সবাই সকাল-সন্ধে আড্ডা দিত তার দোকানে। এমনকি অজয়দা ও রুস্তম মোল্লা একসঙ্গে বসে কত আলোচনা করেছে। হাঁটতে হাঁটতে মাস দুয়েক আগের কথা মনে পড়ে রবীনের। অজয়দা আর রুস্তম মোল্লা সকালে চা খেতে খেতে গল্প করছে। হঠাৎ অজয়দা তাকে দেখিয়ে রুস্তম মোল্লাকে বলল- আরে তোমাকে আর কি বলব। এই যে রবীন, দিনরাত আমাদের দলের হয়ে খাটছে অথচ দেখ, নিজের ভাইটাকে এখনও বোঝাতে পারল না! গ্রামের এত উন্নতি হল তবু ওর ভাই নবীন সে আমাদের কথা শোনে না, মাস্টারের কথা শোনে। আর ঐ হচ্ছে আর এক হারামি। আচ্ছা আমাদের দলে কি মাস্টার নেই ? তারা কি কেউ লেখাপড়া করেনি ! কত করে বললুম, মাস্টার দলে ভেড়। দেখবে আখেরে তোমারই লাভ হবে। কাজীর ডাঙায় নাই বা হল, খেলার মাঠ নিয়ে কথা তো। সে একটা ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আমাদের সরকারও এখন খেলাধুলার প্রতি খুব জোর দিয়েছে। ছেলে-পুলেদের নিয়ে একটা ক্লাব গড়ে তোল, সরকার তো ক্লাব প্রতি দু লাখ, পাঁচ লাখ দিছে। তা শালা এক গোঁ ধরে বসে আছে। বলে, আমাদের দলটা নাকি অগণতান্ত্রিক, সরকারী কাজকে দলের বলে চালানো হচ্ছে।          

    সুযোগ বুঝে রুস্তম মোল্লাও খোঁচা দিতে ছাড়ে না। বলে- অজয়দা, রাজনীতি তো অনেক দিন করছেন, মানুষ কি কখনও কারো কেনা গোলাম হয় ! তুমি দল বদল করেছে তোমার স্বার্থে। মানুষ সব দেখে, তুমি ভুলে গেলেও মানুষ এত সহজে সব ভোলে না। তুমি এলে অমনি তোমার সঙ্গে সব মানুষ দল বদল করে চলে আসবে তা কখনো হয়! মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। জনসংযোগ বাড়াও অজয়দা। না হলে দেখবে তোমার হিন্দু পাড়ায় ঐ মাস্টারের হাত ধরেই বিরোধীরা আবার শক্তিশালী হবে।

    অজয়দা মুহূর্তে অস্বীকার করে। বলে- না, না, সে সুযোগ তপন মাস্টার পাবে না। হয় ওকে আমাদের দলে ভিড়তে হবে, নয়ত….। নিজেকে সামলে নেয়।  

    রুস্তম মোল্লা তাও বলে -ওসব বললে হবে না অজয়দা, দলের উপর তলার নির্দেশ, সকলকেই আমাদের দলে আনতে হবে, বিরোধী- ফিরোধী রাখা চলবে না। 

      এভাবে অজয়দাকে অপমানিত হতে দেখে লজ্জা পেলেও রবীন ভাইকে এব্যাপারে কিছুই বলতে পারেনি। বিয়ের পর থেকেই ভায়ের আলাদা সংসার। কলকাতায় সোনার দোকানে পালিশের কাজ করে। রোজগার তার থেকে কিছু কম নয়। তাও ভাইকে সে হয়ত বলতে পারত। কিন্তু ছোট বৌ ঝন্টু-মন্টুকে নিজের ছেলের মত ভালবাসলেও তাকে যে বিশেষ পছন্দ করে না রবীন তা ভালই বুঝতে পারে। তাই বলব বলব করেও বলতে পারেনি। আর ভাইটাও হয়েছে তেমনি, বোয়ের কথায় ওঠে বসে।  

     গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব থাকলেও দুই নেতা ও তাদের অনুগামীরা রবীনের দোকানেই বসত। তবে দু দল দুদিকে। হঠাৎ পুরানো দল থেকে মাল পাড়ার একটা অংশ ভেঙে অজয়দার দলে যোগ দিতে অজয়দার শক্তি গেল বেড়ে। অজয়দার দাপটে মোল্লা পাড়ার ছেলেরা শেষ কদিন একপ্রকার দোকানে আসা বন্ধ করে দিল। দু-একজন কেউ এলেও দল বেঁধে আর কেউ আসছিল না। এখন বুঝতে পারে রবীন তারা ঠিক চা খেতে আসত না, রুস্তম মোল্লাই এক-আধ জনকে পাঠাত অজয়দার খোঁজ-খবর নিতে। এদিকে মোল্লা পাড়ার ছেলেরা না থাকায় অবাদে তাদের নিন্দা গালিগালাজ করা হত।  

    অজয়দাকে কেন্দ্র করে হিন্দুরা একজোট হচ্ছে দেখে বীভৎস একটা আনন্দ রবীনকে পেয়ে বসেছিল। কারণ ছেলেবেলা থেকে রবীন দেখেছে, দু-একজন ভাল শিক্ষিত মুসলমান থাকলেও অধিকাংশই শালা একগুঁয়ে, ক্যাচাল বাধানো, মার-দাঙ্গা বাধানো পার্টি। ন্যায়- অন্যায় যাই করুক সব ব্যাপারে শালারা একজোট। তাই মনে মনে উত্তেজিত হচ্ছিল এই ভেবে যে, পাড়ার আর কোন ব্যাপারেই মুসলমানরা নাক গলাতে পারবে না। হিন্দুরা এভাবে একজোট হলে এবার অজয়দার নেতৃত্বে মোল্লাদের পুণ্যি পুকুরে গিয়ে হিন্দুরা পূজা দিয়ে আসবেই। বস্তুত মোল্লা পড়ার ছেলেরা না আসায় পান, বিড়ি, গুটকা, সিগারেট, বিমল বিক্রি কমে গেলেও রবীন ব্যাপারটা গায়ে মাখেনি। ভাবলে এখনো কেমন উত্তেজিত লাগে রবীনের। 

 গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে গোলমালের একটা আশঙ্কাও ছিল। তাই অজয়দার পাশাপাশি তার নাম যে জড়াবে সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই। আজ না হয় কাল। তা সে যাই হোক শেষমেষ পুলিশ কাল রাতে এদিকে আসেনি। কিন্তু পরের দিন নিশ্চয়ই আবার রেড হবে। তখন তো তার নাম জুড়ে দিতেও পারে। তাই এখানে আর নয়। ভাবতে ভাবতে রবীনের হাঁটার গতি হঠাৎ বেড়ে যায়। 

   ওদিকে বাবা মায়ের হাত ধরে হাঁটলেও ঝন্টু মন্টু সর্বদা খুঁজছে তাদের কাকিমাকে। ভয় পেয়েছে ওরাও তবু ভাবটা এমন যে, কাকিমা কাছে থাকলে ওদের কেউ কিছু করতে পারবে না। কাকিমাকে ফোন করা হয়েছে, কাল সকালেই চলে আসবে-এই আশ্বাস পেতে তবে গত রাতে ঘুমিয়েছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই খোঁজ করেছে। একটু আগেও খোঁজ করেছে। শেষে কলকাতায় কাকিমার কাছেই ওরা যাচ্ছে, বলতে তবে দুজনে জামা পরেছে। 

    নতুন রাস্তার মোড়ে এসে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রবীন একবার তাকায় তার দোকানটার দিকে। আট দশ খানা দোকানের মধ্যে তারটাই ছিল সব থেকে জমাটি। তার দেখাদেখি বাকিরা দোকান দিয়েছিল। কিছুই রাখেনি, সব কটাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে গেছে একেবারে। 

      বেশি কিছু জিনিশ ছিল না যদিও কারও। ফাঁকা জায়গায় দোকান, ক্যাশ বেচাকেনা রোজ সবাই বাড়ি নিয়ে যেত। তার তো আবার চায়ের দোকান, কি আর দামি জিনিশ থাকবে ! প্রতিদিনের বেচা-কেনার হিসেব প্রতিদিন করে ফেলে। তাও রুটি, কেক, ঝুরি ভাজা, বিস্কুট, চানাচুর, বিমল, গুটকা ইত্যাদি নিয়ে টুকিটাকি জিনিশপত্র যা ছিল তা কিছুই সরাবার সুযোগ দেয়নি। আচমকা জনা কুড়ি ছেলে এসে লাঠিসোটা নিয়ে ভাঙাভাঙি শুরু করে দিল। দোকানে তখন তিনজন মাত্র খদ্দের। ওরা উঠলেই দোকান বন্ধ করবে। জিনিশপত্র গোছাতেও শুরু করেছিল। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে যে যেদিক পারে ছুটে পালিয়ে বেঁচেছে। 

      দোকানটার জন্য কষ্ট হয় রবীনের। কত স্বপ্ন ছিল দোকানটা নিয়ে। অজয়দার সঙ্গে কথা একপ্রকার পাকা হয়ে গিয়েছিল। বাঁধের ধার, খালের নিচ থেকে বিম তুলে জায়গাটাকে বড়ো করে পাকা দোকান করবে। চায়ের সঙ্গে দুবেলা রুটি, পরোটা, আলুরদম, মাংসের ব্যাবস্থা করলে মন্দ চলবে না। অজয়দাকে দিয়ে থানাকে ম্যানেজ করতে পারলে একেবারে দেশী না হোক রাম, বিয়ার, হুইসকি রাখাও যেত।

      অ্যারেস্ট না হলে এর একটা বদলা অজয়দা নিতই। তাই অপেক্ষা করা ছাড়া রবীনের উপায় নেই। অশান্তি থামলেও অজয়দা ফিরে না আসা পর্যন্ত দোকান খুলতে পারবে না। যতই রুস্তম মোল্লা একই দলের হোক একবার যখন বাগে পেয়েছে ব্যাটা অতি সহজে ছাড়বে না। 

    বাবা তাকিয়ে আছে দেখে মন্টুও তাদের ভাঙা দোকানের দিকে তাকিয়ে থাকে। দোকান ভাঙার কথা কাল সন্ধেই সে শুনেছিল। কিন্তু কে বা কারা তাদের দোকান ভেঙেছে সেকথা তাকে কেউ  বলেনি। সবাই কেমন ভয়ে ভয়ে কথা বলছে না কাল থেকে তাই কথাটা জিজ্ঞেস করতে সাহসও পায়নি। এখন বাবাকে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মন্টু বলে- আমাদের দোকান ভাঙল কেন বাবা ? পুলিশ ওদের ধরবে না ?      

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *