শরদিন্দু সাহা
বাংলা কথা সাহিত্যের সুপরিচিত লেখক শরদিন্দু সাহা। লেখক সত্তা ও জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে তিনি অভ্যস্ত নন। নিছক লেখক হওয়ার জন্য তিনি কলম ধরেননি, সামাজিক দায়বদ্ধতাই তাঁকে সৃষ্টিকর্মে উদ্বুদ্ধ করে। শৈশব থেকে সৃষ্টিশীল মন লালন করে প্রস্তুতি পর্ব সারলেও নয়ের দশকের গোড়া থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। এ-পর্যন্ত শতাধিক গল্প, গোটা কয়েক উপন্যাস এবং অন্যান্য গদ্য মুদ্রিত হয়েছে। দশটি উপন্যাস আর সাতটি গল্পগ্রন্থ সহ মোট গ্রন্থের সংখ্যা ষোলো। ১৯৯৮ সালে ‘কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগার পুরস্কার’ পান। ২০০৪ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত সোমেন চন্দ পুরস্কার’ পান। ওই বছরেই কাটোয়া লিটল ম্যাগাজিন মেলা কর্তৃক সংবর্ধিত হন। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘হল্ অব্ ফেম’-এ সম্মানিত করেন। ২০০৫ সালে ‘ভাষা শহিদ বরকত স্মরণ পুরস্কার’ পান। ২০০৭ সালে সাহিত্য আকাদেমি’র আমন্ত্রণে গৌহাটিতে বাংলা-অসমীয়া গল্পকার সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে ‘আমি’ পত্রিকা তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বিশেষ সম্মান দেন। প্রসার ভারতী’র আমন্ত্রণে নানা সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিলিয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রে ও ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। ইতিমধ্যেই নিজস্ব এক ঘরানা সৃষ্টি করে তিনি পাঠকের মন জয় করেছেন।
(নিত্য সমাজ সংসারের যে স্রোত আমরা চাক্ষুষ করছি তার অন্দরমহল জুড়ে ঘুমিয়ে রয়েছে কত তো কথাকাহিনী, যার পরতে পরতে তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে গোপনে কত তো নারীর জীবনযন্ত্রনা, ধারক বাহক হয়ে গোটা সমাজকে যাঁরা ছাতার মতো আগলে রেখেছে, নিজের পরিচয় খুঁজে নিয়েছে, সকল ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে দিচ্ছে মুক্তি যুগ যুগ ধরে। কয়জনের কথাই বা আমরা মনে রাখি। তাঁদের গোপন ব্যথা, অনুচ্চারিত কথা গুমড়ে মরে যায়, চোখের জল কেউ মুছিয়ে দেয় না, গণ্ডীবদ্ধ শৃঙ্খলিত জীবনই তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। এমনই এক সাধারণ গ্রাম্য নারীর কথকতা ও চেতনায় চেনা জীবন ও সমাজপিষ্ট অব্যক্ত যন্ত্রনার পাঁচালি ‘পঞ্চমীর বারমাস্যা’ উপন্যাস।)
কারে কয় স্বাধীন, মাইনষে হয় হরাধীন
বাঙালি আর কই, হিন্দু আর মুসলমান
দু’চোখ যদ্দুর যায়, হিন্দুস্তান আর পাকিস্তান
আমনেগো দু’চোখে জল হড়ে নি, আঁর চোখ দিই হড়ে। না, আঁই যাই ন, শত চেষ্টাতেও যাওনের লাই মন চায় ন। আঁই জানি না, এর জন্য কে দায়ী, কে ষড়যন্ত্র কইরছে, তবে এইটা জানি মাইনষে মাইনষে এই ভাগ মন তুন মানন যায় না, কিছুতেই মানন যায় না। দেশের লোকেদের লাই কি আমনেদের মনে একটুকু মায়া দয়া নাই, খালি হিন্দু মুসলমান দেইখলেন, আর কিছু দেয়েন ন। এখন যন দেয়ন ন, আর কোনোকালেও দেইখতেন ন। আঁই কই যাইয়ের, চাই চাই দেইখবেন, দেশটা এই ভাগাভাগির লাই একদিন রসাতলে যাইব। আমনেরা কি মনের দরজায় খিল দিই রাইখছেন, ধম্মের জন্য লড়াই করি মইরতে চান যন মরেন, কে আমনেদের বাঁচাইব, কেউ বাঁচাইতে আইত না। যাঁদের আমনেরা আপন ভাইবছেন, খোঁজ করি দেহেন, ওরা অনেক দূরের মানুষ, নিজেদের আখের গুছাইতে ভাই ভাই সাইজছে। মন তুন ভাগ হইতে দিয়েন না ভাই, অনও সময় আছে। আঙ্গ দেশের নাম তো এয়ন পূর্ব পাকিস্তান, হুইনলাম মহাত্মা গান্ধীরে কারা গুলি মারি হত্যা কইরছে, আঙ্গ জাতির পিতা জিন্নাহ আর হেতাগো জাতির পিতা মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধী। এই মানুষটাই তো বছর দুই আগে দাঙ্গা থামানোর লাই ইয়ানের আইছিল, দুই ধম্মের লোকদের এক হওয়ার মন্তর দিছিল। এমন নিঠুর হইতে হারাল ওরা। আমনেরা হয়তো কইবেন অন্য দেশের মাইনষের লাই আঁর এত দরদ কেন? এত চট করি হর করি দন যায় না যে। ভাইবলে কেমন লাগে না, ধরেন বছর দুই আগে আমনের হোলার এন্তেকাল হইছে, হাইরবেন মন তুন মুছি ফেলতে, হাইরতেন ন ত, ভালা মাইনষের লাই এমনটাই হয়। বিধির বিধান আঁর দেওরের যুবতী মাইয়াটার অসুখ নাই, বিসুখ নাই, মরার কথাও ছিল না, কিন্তু মরি গেল, কার উপর দোষ চাপাইয়ুম, ভাগ্যের উপর ছাড়ি দন ছাড়া উপায় আছে নি। জীবনটা তো অকালে চলি গেল। জলজ্যান্ত মাইয়া, হাসি খেলি এঘর ওঘর করি হুরা বাড়ির কোনায় কোনায় ঘুরি বেড়াইত। দাঙ্গার সময়, দেশভাগের সময় আগলাই আগলাই রাইখছি, শেষরক্ষা করতি হাইরলাম না। হক্বলে ভাগ্যের দোহাই দিল। এইভাবেই কি ভাগ্যের উপর সবকিছু উপর ছাড়ি দেওয়া যায়, না দেওয়া উচিত। আমরা তো ঠিক সময়ে চিকিৎসা করাইতে হারি ন, আগেই হয়তো রোগটা বাসা বাঁধি ছিল, আমরা বুঝতামই হারি ন, দেরি করি ফালাইছি। যন মরা শরীলটারে আত্মীয়রা মিলি কাঁধে করি লই যার, তন বুঝলাম হারানের জ্বালা কী ! আরও বুইঝলাম, যন মরা শরীরটা কাঠের আগুনে ঘিয়ের গন্ধে দাউ দাউ করে জ্বলের, জ্বালাটা আরও দ্বিগুন বাড়ি গেল, আর ত কোনোদিন হিরি হাইতাম ন। আঁর মনে তনই আর একটা কষ্ট আই জোরে জোরেই ধাক্বা মাইরল, আর তো পুরাতন দেশটা কোনোদিন হেরত আইত ন, নতুন একটা দেশ আইয়ের ঘাড়ে চাপি বইছে, এর চেহারা সুরত কী হইব আঁই কিচ্ছু জানি না। আচ্ছা যদি এরকমই কোন জাদুকর আই আঙ্গ গ্ৰামটারে কোনোদিন হালটি দিই চলি যাই তন আঙ্গ কী অবস্থা হইব।
আঙ্গ বাড়ির আঠারো ঊনিশ বছরের দু’তিন জন যুবক হোলাপাইন ভ্যাবাচ্যাকা খাই ঠিক করি হালাইল কইলকাতায় চলি যাইব, এইদেশে আর থাইকত ন, ওগো মনে এমন চিন্তা ঢুইকল যেন নিজেদের দেশে হরবাসী। বাড়ি বাড়ি ঘুরি ঘুরি কারা যেন একতারা বাজাই গান করে ‘ওরে আর রইত ন সোনার বাংলা, পালা পালা ওপারে পালা, চন্দ্র সূর্যের গ্ৰহণ লাইগছে, হিন্দু মুসলমান দুভাগ হইছে। আর তো বাঁচার উপায় নাই, না হয় কলমা হড়ি জাত খোয়াই। এসব কথা হুনি সঙ্গে মুড়ি চিড়ার হোটলা বাঁধি, দুই চাইরখান জামাকাপড় টিনের ট্রাঙ্কে লই ঘরে ট্যাঁয়া মা ছিল প্যান্টের পকেটে হুরি ওরা রাতের অন্ধকারে লুকাই দেশ ছাড়ে। হতে হতে বিপদ, কে কন ঘাপটি মারি বসি আছে, কন যে চোলাই লই যাইব কে জানে। মনে মনে ভাবে একবার যদি কোনরকমে ওদেশে যাই হৌঁছতে একবার হারি, হরে হরে বাবা মা ভাই বইনদের লই যামু। জমিজমা ঘরবাড়ি হড়ি থাক, হরানে বাঁচলে তো বাপের নাম। মনটা দুকুর দুকুর করের, কিছু করার তো নাই। দিনকাল যা হইড়ছে, চারদিকে খালি অবিশ্বাস, শুধুই হরষ্পরে ঘেন্নাপিত্তা, জানে মারি হালাইলে শান্তি, হিন্দূর মাইয়া ঘরে তুইলতে হারলে তো আরও শান্তি, এমন একটা হরিবেশে কতকাল বাস করা যায়! চলি যাইতে হারলেই হরানটাও বাঁইচব, ধম্মও বাঁইচব। আঙ্গ গ্ৰামে এত হিংসাহিংসি হুরু হয়নি, চারইধারের ঘটনা যা কানে আইয়ের, ইয়ানে আইতে কতক্ষণ, ছোঁয়াচে রোগের মতো বাতাসে ছড়ার, আজ একটা, কাল একটা, এরকম করি তো বাড়ের, থামার কোন জো নাই। উলটা কথাও হুনিয়ের। ওইদেশ তুন মোসলমানরাও চলি আইয়ের এই দেশে জমিজমা হালটাহালটি করি। কারে মে কী কমু, কে যে আত্মীয় আর কে যে অনাত্মীয়, কে যে শত্রু, কে রে মিত্র, বুঝতাম হারি না। মুসলমানরা ভাইবছে পাকিস্তানে আই জাতভাইদের হঙ্গে গলাগলি করি আরামে থাইকব, যা যা চাই বাঁচতি গেলে সব পাইব। আর হিন্দুরা ভাইবছে হিন্দুস্তানে গেলে সুখই সুখ। আবার নিজের দেশ ছাড়ি যাইবার যন্তন্নাও ষোল আনা, কিন্তু থাকিত না ডার্লিং কী আর কইরব, অসহায় এক অবস্থা দুপক্ষেরই। আঁর একটা প্রশ্ন আইয়ের মনে মনে দেশভাগের কষ্টটা কী খালি এইপার ওইপারের বাঙলা কথা কওয়া হিন্দু মুসলমানের, আর কারও না, খেসারত কি খালি এগোরই দিতে অর! এত বড় দেশ যে ছিল, হক্বলে কী আরামসে আছে। হুইনতেছি আঁর স্বামীর কাছ তুন পাঞ্জাবেও খুনোখুনি রক্তারক্তি করি দূর্দশার অন্ত নাই। বুইঝলাম, এই দেশের লোকেদের কপালে শান্তি নাই, লাফালাফি ঝাপাঝাপিই সার। কে কত বড় হিন্দু হইব, কে কত বড় মুসলমান হইব এসব নিয়াই মজি থাই হারাদিন। মাথার উপরে চাল নাই, হেঢের ভাতের জোগাড় কেমনে হইব, সে চিন্তা নাই, জ্বর জারির, কলেরা, বসন্তের ঔষধের আকাল চারদিকে, ডাক্তার বদ্যি নাই পাকিস্তান পাকিস্তান করি মাথা খাই হালার। আরে বাবা হিন্দু তাড়াইলে তো রাতারাতি সব সুখ আই চুঁইয়ে চুঁইয়ে হইড়ত ন। কী আমনেরা কন চাই হইড়ব নি? গরুর মাংস আর কাছিমের মাংস খাওন লই কত অশান্তি। এত তো গলা ফাটায়, কই কারও মুয়ে তো রবিঠাকুর আর নজরুলের কবিতার একটা লাইন বইলতে হুনি না। এরা কী সব হুদা হুদা লিখি গেছে। উলুবনে মুক্তা ছড়াই লাভ আছে নি, কন না।
আস্তে আস্তে একজন দুজন করি দেশ ছাইড়তে আরম্ভ করিল। আঁর এক দেওরও চলি যাইব ঠিক কইরল। কইল, ‘বড়বৌদি, আমনের বড় হোলারে আঁর লগে দিবেন নি।’ ভাইবলাম এত ছোট্ট হোলাঢারে ক্যামনে এত দূরদেশে পাঠাই। আঁর দেওর সরকারি কর্মচারী। চাকরি হাইলটায় এদেশ তুন ভারতে যাওনের সুযোগ আছে। কয়দিন ধরে ভাইবলাম, মনঢারে শক্ত কইরলাম। পোলারে জিগাইলাম, বাবুলের কাকার লগে যাইবি নি ভারতে? কিছুক্ষণ চিন্তা করি কইল, ‘যামু কিন্তু ওইদেশে কিয়ের লাই যামু?’ কত কিছু দেওনের আছে কইলকাতায়। চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আরও কত কী, আঁই যা হুইনছি, তাই কই, সব কী আঁই জানি। কইলকাতা নাকি অনেক বড্ডা শহর, বড্ডা বড্ডা দালানকোঠা, তাক লাগি যায়, চোখ হিরান যায় না। রাস্তার উপর দি ট্রাম যায়, ঘোড়ার গাড়ি ঠক ঠক করি ছোটে। তোর বাবা তো ওই শহরে আইন পড়ত। অন না হয় ওইটা ভেন্ন দেশ হইছে। ‘ক্যান হইছে?’ তুই অন বুইঝতি ন, বড় হইলে বুঝবি। তুই তোর বাবারে জিগাইস্, ভালা করি বুঝাই কইব, আঁই কি এত সব বুঝি। হোলার চোয়ে যেন স্বপ্নের ঘোরে লাইগল। ওর মন হিরাইবার লাই কতগাইন বানাই বানাইও কইলাম, হাঁচামিছা মিলাই মিলাই। দুনিয়ার লোক কয় এমন শহর আর নাকি নাই, মাইনষে কাঁদে, মাইনষে হাসে, কত কাম, কত চিল্লাচিল্লি, কত নাকি মাঠ ময়দান, খেলকুদের বিরাম নাই, কত যে পাগলামি কত যে মান অভিমান, খুনখারাবি দাঙ্গা হাঙ্গামা এসবের কতা যত কইয়ুম, শোকে দুঃখে হরান হাঁঢি যাই। মাইনষের ঢল রাস্তাঘাটে, ল্যাঙরা খোঁড়া কমতি নাই। তুই অনও ছোঢা হোলা, হক্বল কতার অর্থ বুইঝতিন, নিজের চোয়ে দেখগে যা। তোরে কী কুইয়ুম, নিজের চোয়ে তো দেই ন কিছু, এই সবই যা হোনাইলাম, সবই তোর বাবার চোখ দিই দেয়া। তাহইলে বোঝ নিজে দেখালি কত কিছু জানতি বুইঝতি হারবি। ‘ তাহলি আঁই যাইয়ুম, আঁর নতুন নতুন দেশ দেখইতে খুব ভাল লাগে।’ আঙ্গ লাই তোর কষ্ট হইত ন। বাড়ি ছাড়ি থাইকতি হারবি তো। ‘আচ্ছা মা মুসলমানরা হিন্দুর হোলাদের মালাওনের বাচ্চা কয় ক্যান?’ আমরাও তো কম যাই না, ওগোরে কত কতা কই। মুসলমান বলি ঘরে ঢুকতি দিই না। ভালোবাসার কথা উঠলি কই না, মোছলমানের মুরগি পোষা। আরও অনেক ঘেন্নার এমন কতা দুই সম্প্রদায়ের লোকেরা হরষ্পরেরে কয়। এরকম কেন কয় আঁই তোরে কইতে পারি। দোনো সম্ম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু লোক আছে, যারা উস্কানি দেয়, তাতায়, যার যিয়ানে জোর বেশি, হিয়ানে ওরা অন্যেরে দাবায় রাখতি চায়। আমরা হিন্দুরা এইদেশে কম, তাই আঙ্গরে তাড়াইতে হাইরলে সম্পত্তি দখল কইরতে, বাড়িঘর কব্জা কইরতে সুবিধা হইব। ‘মালাওন শব্দের অর্থ কী?’ ঈশ্বরের করুণার তুন বঞ্চিত। এইটা এমন খারাপ শব্দ নয় কিন্তু কে কখন কী উদ্দেশ্য নি কয়, কীভাবে কয়,কেন নয়, কারে কয়, ভালোবাসি কয়, না ঘেন্না করি কয়, না খোঁচা দিই কয়, হের উপর খারাপ ভালা বোঝা যায়। ‘মা, খালের ধারের গ্ৰামের লোকেরা মোসলমান কেন হইছে, আঙ্গ গ্ৰামের লোকেরা ক্যান হিন্দু, ওরা মসজিদে নামাজ হড়ে ক্যান, আর আমরা ক্যান মন্দিরে হুজা করি, মোসলমানরা আল্লাহ কেন কয় আর আমরা ঈশ্বর ঈশ্বর করি? কিন্তু আঙ্গ চেহারাগুন তো এক? কাজি কেন আঙ্গ বিয়াসাদি দেয় না, পুরোহিত কেন ওগো বিয়া দেয় না।’ আঙ্গ নিয়ম আচার আঁর ওনাগো নিয়ম আচার ভেন্ন তাই। ‘আঁর ইসকুলের বন্ধু বেল্লাল কেন আঙ্গ ঘরে আইয়ে না? আঁর নাম কেন ফারুক হয় না, ওগো নাম কেন সুবোধ হয় না? ইয়েল লাই কী ওরা আঙ্গরে তাড়াইতে চায়? ক্যান তাড়াইব? আঙ্গ বাপ ঠাকুরদাদা তো এইদেশের মানুষ, বছরের পর বছর ধরি এই গ্ৰামে বাস, আর কত বছর বাস কইরলে এমন করি যাইবার কথা উইটত ন। মা, আমনে কইলেন কালেমা হড়াই আঙ্গরে জোর করি মুসলমান করি হালায় ওরা। আচ্ছা, এইঢা কন চাই কি হইড়লে মানুষ হওন যায়, কই এই কতা খান তো ইসকুলে শিখায় না ?’ চুপ, চুপ থাক, এইসব কথা জোরে জোরে কইতে নাই। তোর এত এত হশ্নের উত্তর তো আঁই জানি না, ক্যমনে দিমু। আর আঁই তো কনও তোর মতো করি ভাবিন। ‘ তাইলে কারে জিগাইমু কও?’ তুই ওইদেশে যাই কবি নজরুল ইসলামের কাছে চলি যাইস, উনি এসব কথার উত্তর জানে। কইলকাতায় থায়, উনিই ঠিকঠাক কইত হাইরব।
আঁর হোলাঢা কেন যে মন মরা হই আছে কদ্দিন ধরি। দেশ ছাইড়বার কথা হোনার হর তুন কাঁদি কাঁদি বুক ভাসায়। ছোট্ট হোলার কচি মন, ক্যামনে ছাড়ি যাইব মা বাবা ভাই বোনদের। মনটা তো খারাপ হইবার কতা। কইলাম, যা তো যা, রওশন চাচির ঘর তুন ঘুরি আয়। চাচিদের কইস, ‘মা পাঠাইছে পাঁচটা হাসের ডিম আর পাঁচটা মুরগির ডিম দিবার লাই।’ দেখবি তোরে দেই চাচি খুশি হই যাইব। আঁর হোলারে হিড়িতে বইসত দিল, ভালামন্দের কথা জিগাইল। ঘুরি আই কইল, ” মা, চাচিদের ঘর দেইখলাম, খড়ের চালে হুঁই শাকের ডাল ভরতি হই আছে, সবুজ, লাল রঙের দানা, চালটা দেয়ন যায় না। গোবর দিই লেপা হর্মূলের বেড়া। চালের উপরে ঘরের কোনায় ঢেউয়া গাছ। চাঁচি আঁরে তিনটা ঢেউয়া দিছে। সজনা গাছের তুন হাড়ি সজনা দিই কইছে, ‘বাবুরে, তোর মারে দিস, মারে কইস নতুন ডালের সজনা, খাইতে স্বাদ লাইগব। তোর মা ভালা আছেনি, জ্বর হইছিল হুইনছিলাম। আঁর ছোট হোলা জামালের হাত দিই তিলের নাড়ু হাঠাইছিল, খাইতে কী ভালাটাই না লাইগছে। আঁই চলি আইত চাইলে কয়, আর একটু বয়।’ মোরগ আর মুরগী ঘরের চারদিকে ঘুরঘুর করের। আঁরে দেই যেন জোরে ডাকের কোঁকর কোঁ কোঁ। ঘরের মধ্যে একখানা মাচা দেইখলাম, সুয়ারি গাছ কাঢি কাঢি বানাইছে। আলমরা বই বই কী যেন হড়ের। চাচি ঢুল্লার শাকের গাছ রুইছে হেতাগো ঘরের হাশে। ছোট একটা হানাহুকুর, ডুবাই ডুবাই মাছ ধরের। ছাগলগুনরে বাঁধি রাখছে খুঁটিতে, ঘাস চিবার। দূরে দুইচারখান ঘর, আঁরে দেই মাইয়ারা দিদিরা ঘরের দরজায় খাড়াই রই বিড়বিড় করের। আঁর নজ্জা লাগি গেছে। ট্যাঁয়াগুন চাচির হাতে দিই আঁই দৌড়াই চলি আইছি।’ তুই তো এমনিতে নাজুক, আর অচেনা লোক দেইখলে তো আর মুয়ে দিই রা বার হয় না। মনে নাই বর্ষাকালে জিপসিরা বজরায় চড়ি আঙ্গ গ্ৰামে জড়িবুটি, চুড়ি হার বেইচত আইছিল, যেই না হুইনছস ওরা ধরি লই যায়, তুই তো চইয়ের নিচে হলাস, হাসির ঢল নামে তন, কত খেলনার লোভ দেখাইল, তাতেও কী তোর দেখা হায়। ক্যামনে যে তোরে দূরদেশে হাডাই, মনটা খচখচ করে।
আঁর হৌরি আগে তুন বাঁকি বইসছে কিছুতেই হাডাইত ন হেথেরে। বড় নাতি, হেথেনের নেওটা কিনা। দেশঘরের যা অবস্থা ভরসা হাই না, কন দাঙ্গাবাজরা গ্ৰামে ঢুকি আই মারি হালায়, একটা হোলারে তো আগে বাঁচাই। হেথেনেরে অনেক বুঝাইলাম কিছুতেই বুঝ মানতি চায় না। হেথেনের তো কোনও দোষ নাই, কোনোদিন তো ঘরের বার হয় ন, বড় জোর নৌকায় করি বোনের বাড়ি গেছে, মা বাপ তো হেই কোন কালে ধরাধাম ছাড়ি গেছে, তার কী কোনো হিসাব আছে। আর অন তো বয়স হইছে বলে হুইরেও চান কইরতে যায় না। বড় জোর কন ধান উইঠল, ধান মাড়ানি হইল সেদ্ধ হইল, উঠানে মেলি হুয়াইল, গোলায় উইঠল এই হর্যন্তই ওনার জগত। সকালে বিয়ালে হরিনামের মালা লই দিন কাটে। বৌগরে বকাঝকা কইরলেও ভালোবাসে না এডা ক্যামনে কই। শরীল খারাপ হইলে টোটকা জানে বিধায় জ্বরজারি সারারাত জানে। আঁইও ওনার কাছ তুন কিছু কিছু শিখছি। বাকিটা ম্যাটেরিয়া মেডিকার হাতা উলটাই উলটাই রপ্ত কইরছি। আঁর স্বামী শহর তুন এক বাক্স হ্যানিম্যানের ঔষধ আনি দিছে, কত মাইনষের কত কামে লাগে, ডাক্তার বদ্যি কবিরাজ কী চাইলেই মিলে, তন আঁই ডাক্তার, আঁই বদ্যি। আঁর জায়েদের কত কইছি, একটু আধটু শিখি টিখি নে, গায়ে লয় না কথাখান, যেদিন আঁই বিছানায় হইড়ব, হেদিন টের হাইব। আঁর হোলা আই আঁর গলা ধরি কই, ‘ মা আমনেগো ছাড়ি আঁই ক্যামনে থামু, আঁর যে হড়ান হোলে।’ আঁর কথা হোন, পুরুষ মাইনষের মন এত নরম হইলে চলে নি। জীবন বড় কঠিনরে বাপ, পদে পদে হোঁচট খাওনের সম্ভাবনা, তোর বাপেরে দেয়স না, কত কষ্ট করি রোজগারপাতি করি ভাইদের লগে লই এত বড় সংসার চালার, কত ছোট্ট বেলায় বাপ মারা গেছে, তন তুন সংসারের জোয়াল কাঁধে লইছে। সরকারের তুন কত সুযোগ হাইছিল বিনা খরচে আরও হড়নের লাই, যায় ন, নয়লে হক্বলে কন্নাই ভাসি যাইত। তোর ঠারদার কথা হুনবি, তবে হোন। ওই যে আঙ্গ বড় বাড়ি তোর দাদু সংসার বড় হই মাওয়ায় এই বাড়ি বানাইছে, তওনের দিনে পাঁচ হাজার ট্যাঁয়া খরচা হইছে, যন চালের মন ছিল তিন চার ট্যাঁয়া। তা হইলে ভাবি দেখ কোথা তুন কোথায় আইছে। বুঝতি হারলি তো, মনঢারে এমন করি শক্ত করতি হইব শত ঝড় তুফানেও আঙ্গ বাড়ির দরজায় তাল গাছের মতো উপড়াই হালাইত না হারে। শ বছরের তালগাছ, এখনও ফল দিই যার, কুটুস করি তাল হড়ে, কী মিঠা তাল, হক্বলে কুড়াই কুড়াই খায়। খেজুর গাছ দেয়ছ না, ফল দেয়, রস দেয়, কারও কাছে কিছু চায়নি, অভিযোগও করে নি, অথচ আঙ্গ মাইনষেরে দেখ কিছু না দিই, চাইতে থাকে, খালি চাই খালি চাই, শুধু খানা চাইলেও হেট ভরে না, মাইনষের রক্ত চাই। শুধু ধম্মের ছাতার নিচে থাকলে চইলত না, কে বড়, কে কতছোট এরও প্রমাণ চাই, প্রমাণের জন্য বড় জায়গা চাই, আলাদা দেশ চাই, তবে না শান্তি। কে দোষ করে, আর কে শাস্তি পায়, এর বিচার কইরব কে ? কাল যদি কোনোদিন এর বিচার করে, তবে হেদিন মাইনষের কাছে মাইনষে কৈফিয়ৎ দাবী কইরতে হাইরব।
দেশ ছাইরবার আগে একবার হোলাঢা পাগলের মতো এবাড়ি ওবাড়ি করে। দুঃখের কথা কারে কইব বুইঝত হারেন না। মনের কষ্ট মনে চাপি ক্ষেতের আল ধরি হাঁটে, খালের ধারে যাই দেয় পাল তোলা নৌকা তরতর করি চলি যার দূরগ্ৰামে। খেলার দোসরদের লাই এত যে টান কোনোদিন চিন্তাও তো করে ন। যাওনের কথা মনে হলেই ভাবে ওরা কত না আপন। কত ভাব, কত কল্পনা আই গুনগুন করে। বিয়াল হইলে হুইরে ছিপ হালায়। কি জানি বিদেশে হুইর আছে না নাই। বাইলা মাছ, মেনি মাছ, কৈ মাছ হুইরে খলবলাই উঠে, হিয়ানে দেইব নি। ইয়ানে কত আম জাম লিচু বাগান, হাইঙ্গল, গাছে গাছে মুচি, বেতইন, ডেউয়া, গুলাবজাম। কত সুঘ্রাণ। গাছে উঢি বই থায়, পা দোলায় আর টুক করি জলে ঝাঁপ মারে। কথা কইত চায় না বিশেষ। আঁই যদি জিগাই কীরে কথা কস না ক্যান, মুয়ে তালাচাবি মারি রাইখছস কীয়ের লাই? জবাব না দিই ঘাড় ঘুরাই চলি যাই। হোলার মনডারে তো আঁই বুঝি। কীইবা কইতাম, কওনের তো কিছু নাই। তবুও কইলাম, চিরকাল কী কেউ এক জায়গায় থায়, বড় হইলে মা বাপ ছাড়ি, গ্ৰাম ছাড়ি রাইতেই হয়। দেয়ছ না, আর কত হোলারা চলি যার। আঁই যে এই কতাখান কইছি, বুকে হাথর চাপা দিই কইছি, পোলারে হে কথা কেমনে বুঝাইয়ুম। ও ভাইবছে মা কত নিষ্ঠুর, মন বলি কিছু নাই, আসলে তো ওর ভাবগতিক আঁই সব বুঝি। আঁর হৌরি আই কয় তুই হোলাডারে যাইতে দিস নারে বউ। মইরলে হক্বলে একলগেই মরুম। যাইবার দিন মত আগাই আইয়ের আঁর নিজের মনগড়া আনচান করের। মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে হোলাডারে জড়াই ধরি কাঁদি। শীতের মধ্যে কাঁথাখান টানি দি মনে মনে কয়, হোলারে জীবনটা এমনি হয়, হক্বলরে ছাড়ি যাতি হয় ঘর ছাড়ি জগতের অন্য কোনোখানে আর না হয় এই জগৎ ছাড়ি অজানা অচেনা দেশে যিয়ানে মা বাপ নাই, আত্মীয় বান্ধব কেউ নাই, ঘোর আঁধারে হূন্যতাই হুধুই হূন্যতা। আঁর কপালটাই মন্দ, ইছামারি আঁর কপালে, যেই হোলারে হেঢে ধইরছি, হেই পোলারে ছাড়ি থাইকত হইব, কী আশ্চার্যের জীবন! হোলা আঁর বিড়বিড় করের, স্বপন দেইখছিনি কী জানি। আঁইও তো জীবনে কত স্বপন দেইখছি, হুরণ হইছে কিনা জানিনা, আঁর দেয়াটাও বাস্তবের লগে লড়াই কইরতে কইরতে ঝিমাই গেছে, নতুন নতুন স্বপন আই জায়গার দখল নিছে। যেইদিক তাকাই, দেই ভাঙিচুরি যাওয়া ঘরবাড়ি, হুইনতে পাই ভেন্ন ঢঙের গল্পগাছা। আঁর চোয়ে ঘুম নাই, হোলার দিকে চাই থাই, কেমন একটা ভয় আই জাপটাই ধরে। কী যেন কইতে চায়। এত বকস কিয়ের লাই। নাতির জন্য আঁর হৌরির দরদ উথলাই উইঠলে মাথায় আই হাত বুলায়। মোটে ত মাইঝখানে আর একটা দিন। হতে ঘাটে কী জানি কী হয়! পরদিন রাইতের আঁধারে ধান ক্ষেতের আল ধরি মাইলের পর মাইল ধরি কাকার লগে হাঁটা হুরু করে। যাইবার আগে হোলার চোখ দিই টপ টপ করি জল ঝরে। বাপেরে আরে আঁরে পেন্নাম করি কয়, ‘মা তোঙ্গরে আর কবে দেইয়ুম।’ হোলার কথা হুনি আঁই আর নিজেরে সামলাইতে পারলাম না। বাড়ির বাকি লোকজনও আঁর দেয়াদেয়ি কাঁদাকাটি হুরু করি দিল। কুত্তাগুলাও ঘেউ ঘেউ না করি চুপ মারি গেল। ওরাও যেন বুঝতে হাইরছে যাওনের সময় চেঁচাতে নাই। বিলাইগুলা উঠানের এক কোনায় ঘাপটি মারি রইল, মুয়ের তুন একটুও শব্দ বার হইল না, অন্য সময় হইলে মিউ মিউ করি, নিজেরা নিজেরা ঝগড়া করে মাইনষের মতো আওয়াজ করি বাড়ি হাডাইত। আদর লকলকাই উঠছে, কারও সোহাগ যেন বাই বাই হড়ের। শত হইলেও স্থানের টান। ওর ঠাকমার রোদন আর দেয় কে, মনে কইরল চির জনমের মতো বিদায় লর।
কত আজব আজব ঘটনার কথা হরে হরে কানে আইল। জলা জমিন বাগান আলপথ ধরি আট দশ মাইল পথ হার হই গেলে কত তো মোসলমানদের গ্ৰাম হইড়ল। ওরা ওদের কত আশ্বাস দিই কইছে, ‘ কিচ্ছু ভয় হাইয়েন না দাদা, আমরা আমনেদের আঙ্গ গ্ৰামের পথ পার করি দিমু। তার হরে কী হইব, আমরা কইতাম হাইরতাম ন । ভয়ে কাঁটা হই গেছিল আঁর দেওর আর হোলা, কোনরকমে হা টিপি টিপি গ্ৰামের পর গ্ৰাম পার হইল। কেউ গেলাসে করি জল দিল, খুদার জ্বালায় খানা চাইলে লোকজন চিড়ামুড়ি দিল। হিড়িতে বইসতে দিয়ে জিগাইল, ‘ কোন গ্ৰামে রাখবেন?’ সন্দেহ করের নাকি! ভাইবল, যদি ধরা খাই যায়। তাই মাথায় টুপি হরি নিল ওরা । নাম জিগাইলে কইল, নূর মহম্মদ। হোলা বলি হরিচয় দিই কইল, আনোয়ার। ‘ আহারে এত ছোট্ট হোলাটারে লই এত দূরের হথে যানের, শরীল টরিল যদি খারাপ হই যায়, তন কী কইরবেন।’ ‘ আল্লাহর ওয়াস্তে, আমনেগো আব্বা আম্মার দোয়ায় চলি যাইত হারুম।’ ‘তা হইলে এক কাম করুন চার মাথার হত ধরুন, তাড়াতাড়ি হৌঁছি যাইবেন।’ ওরা হাঁইটতে সুরু কইরলে হঠাৎ করি হুইনল হৈ হৈ রৈ রৈ চিৎকার। তা হইলে লোকেরা ইচ্ছা করি ভুল পথ দেয়াই দিছে। যদ্দুর জানা ভারত পাকিস্তানের সীমান্ত বেশি দূর না। শব্দটা ওদের আরও কাছাকাছি চলি আইয়ের। অনেক শব্দ ওদেরকে যেন ঘিরি ধরইল, গলার স্বর হুদুমুদু নয়, মাইনষের চোখ দেই মনে হইল, রক্তের নেশা ওদের হাবেভাবে যেন ফাটি বেইরচ্ছে। কী যেন খুঁজি বেড়ার। বিধর্মীদের দেইখলেই কল্লা নামাই দিব। থরথর করি কাঁপুনি সুরু হই গেছে। মানুষ হরি মাইনষেরে খুন কইরবে। দেওর হালায়, হোলা হালায়। একটা টিনের চালের বাড়ি সামনে দেই বুকে বল হাইল। ছুটি হলাইতে যাইব, কে যেন পানি ধরি হিছনে টান মারলাম। দেওর ভাইবল আর কারোগে দেখা হইল না বুঝি, দুইজনের জীবনই ইয়ানে শেষ। শ্বাস ঘন ঘন ওঠের আর নামের, ইচ্ছা কইরলেও ওদের কিছু করার নাই। কোনোটাই ওদের হাতের মুঠোয় নাই। চিৎকার চেঁচামেচি ‘আল্লাহু আকবার’ হক্বল কথাই কোন জাদুবলে কন দূরে চলি গেছে, ওরা বুঝতে হারেন ন। ওরা হায়াড়ের গায় অনামি গাছের নিচে হড়ি আছে। এই জায়গাটা কন্নাইয়ের, ওগো দেশ তো নয়। কারা ওগো ইয়ানে লই আইছে, বিন্দুবিসরগ জানে না। ওই সময় হুইনছিল কিছু কথা ‘আল্লার রহমতে ওগো জান বাঁচি গেছে।’ বুইঝত হাইরল, এই যাত্রায় হরানটা রক্ষা হাইছে। অনুমান কইরল জায়গাটা ইন্ডিয়া হইত হারে।
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)