অমিত বসাক
লেখক পরিচিতি
লেখক ২২ বছর ধরে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত। কিছুদিন অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন অন্য কলেজে। সমবায় ব্যাঙ্ক ও অকৃষি সমবায় সমিতির ওপর গবেষণাধর্মী তার দুটি বই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা নতুন আঙ্গিকের একটি বই আমি মলে ঘুচিবে জজ্ঞাল। ভ্রমণ ও সমবায় বিষয়ক কিছু লেখা আজকাল ও গণশক্তি পত্রিকাতে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। দুর্বার এ্যাডভেঞ্চারের আকর্ষণে পাহাড়প্রেমী লেখক বারবারই ছুটে গেছেন হিমালয়ে:কেদারনাথ,তুঙ্গনা্থ,রূপকুন্ড,বৈজনাথ,যজ্ঞেশ্বর,হর কি দুন, পিন্ডারী, কাফনি, মুন্সিয়ারি, প্যাংগং, সান্দাকফু এবং এরকম আরো অনেক জায়গায়।
(প্রতিবছর ভাদ্র্র মাসের নন্দাষ্টমী তিথিতে উৎসবের সাজে সেজে ওঠে বৈদিনী। কুমায়ুন গাড়োয়ালের ধর্মপ্রাণ মাানুষেরা দুর্গম কান্তার পেরিয়ে আসে এই বুগিয়ালে। বৈদিনী কুন্ডে ডুব দিয়ে তাারা পবিত্র হয়। পুণ্য কামনার জন্য তারা নন্দা মাকে পূজা দেয়। কুমায়ুন-গাড়োয়ালের সবচেয়ে বড় উৎসব হল বড়িনন্দজাত। ঠিক প্রত্যেক ১২ বছর অন্তর এই অঙ্কলের কোথাও-না-কোথাও একটি চার শিঙা ভেড়ার জন্ম হয়। শেষে পাহাড় থেকে পাহাড়,গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে এই খবর লোকমুখে পৌঁছে যায়; প্রত্যেকেই প্রস্তুত হয় উৎসব পালনের জন্য। নির্দিষ্ট দিনে দলে দলে পুণ্যার্থী শোভাযাত্রা সহকারে পাহাড়ের পথ বেয়ে এগিয়ে চলে-সামনে থাকে সুসজ্জিত সেই অলৌকিক চার শিঙার ভেড়া। এইভাবে শত সহস্র মানব মানবী এগিয়ে চলেন ওয়ান-বৈদিনী-পাতরনাচুনি-বগুয়াবাসা-রূপকুন্ড হয়ে হোমকুন্ডে। আশ্চর্যের বিষয় হল সেই চার শিঙাওয়ালা ভেড়াটাকে পরবর্তীকালে আর কেহউ দেখতে পায় না। সেই যে বড়াহোমকুন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয় তারপর নাকি সে নিজ পথে এগিয়ে চলে তার লক্ষে।)
তৃতীয় পর্ব
পাহাড়ে যখন উঠি তখন প্রতিবারই মনে হয় এটাই বুঝি শেষ,আর আসবো না। কি দরকার এত কষ্ট করার? কিন্তু নিচে আসলেই আর মন মানে না। আবার শুরু হয় পরের পরিকল্পনা পাহাড়ে যাবার-তুষারমৌলি হিমালয় আবার ডাকে-বেরিয়ে পড়ি। এ নেশা ড্রাগের নেশার থেকেও ভয়ঙ্কর-ঠিক টেনে নিয়ে যাবেই যাবে।
এবায় আমরাা চলেছি কোলকাতার CLIFF & CLARK ক্লাবের তত্ত্বাবধানে ১২ সদস্যের একটি দল দুর্গম গাড়োয়াল হিমালয়ের ১৭,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত রন্টি স্যাাডলের উদ্দেশ্যে। আমরা যাব রূপকুন্ড হয়ে রন্টি স্যাডল। স্যাডল হল দুই পর্বতের সংযোগস্থলে ঘোড়ার জিনের মত একটা জায়গা। বাঁ-দিকে উঠে গেছে নন্দাঘুন্টি(২০,০০০ ফুট) এবং ডানদিক থেকে এসে মিলেছে ২৩,৩৬০ ফুট উঁচু ত্রিশূলের গিরিশিরা। ১৭,৭০০ ফুট উঁচুতে দুই পর্বতের এই মিলনভূমিই হল বিখ্যাত রন্টি স্যাডল। সামনে রন্টি হিমবাহ আর কাছেই ঋষিগঙ্গার গিরিখাত। অন্যদিকে চানোনিয়াকোট পাহাড়ের কোলে ১৬,৩০০ ফুট উচ্চতায় রূপকুন্ড একটি ছোট্ট প্রাকৃতিক হ্রদ। জিউরাঁগলি গিরিপথ থেকে নেমে আসা হিমিবাহ রূপকুন্ডকে ঢেকে রাখে প্রায় সারাটা বছর।
১৬ই অক্টোবর হাওড়া থেকে রওনা দিলাম হরিদ্বারের উদ্দেশ্যে। ১৮ তারিখ সকাল ঠিক পাঁচটায় হরিদ্বারে ট্রেন থেকে নামতেই সামনে পেলাম সদা হাস্যময় পর্বতপ্রেমী সেই মানুষটিকে-সকলের প্রিয় রবীনদা (রবীন ব্যানার্জী);সঙ্গে গাইড কাম পোর্টার লাল সিং ও রাজীন্দ্রর সিং। সকাল সাতটায় বাস ছাড়লো-গন্তব্য লোহাজঙ্গ। একে একে পথে পড়ল ঋষিকেশ-দেবপ্রয়াগ-শ্রীনগর-রুদ্রপ্রয়াগ-গোচর-কর্ণপ্রয়াগ-থরালীী-দেবল। প্রকৃতপক্ষে কর্ণপ্রয়াগের পর থেকে পিন্ডারের পাড় ধরেই গাড়ীর রাস্তা চলে গেছে। দেবল ফরেষ্ট বাংলোর নিচে গাড়োয়ালের কোয়েল ঝাঁপিয়ে পড়েছে কুমাঁউ এর পিন্ডারের বুকে। দেবল থেকে রাস্তাটি এঁকে বেঁকে ক্রমশঃ চলে গেছে বগরিগড়,মান্দোলী হয়ে লোহাজঙ্গ (৯,০০০ ফুট) পর্যন্ত। লোহাজঙ্গ পৌঁছালাম সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ। বাংলো আগেই বুক করা ছিল।
১৯ তারিখ;বাংলোর বাইরে মন ভরে গেল-চোখের সামনে উত্তর দিকে নন্দাঘুন্টি-সাদা তুষার শৃঙ্গ। বাংলোর লনের দক্ষিণপ্রান্তে দাঁড়ালে নিচে দেখা যাচ্ছে বগরিগড়,পূর্ব আর পশ্চিমে সবুজ পাহাড়-মাঝে উপত্যকা-নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অনেকটা দূরে কোয়েল গঙ্গা। এ যেন ক্যানভাসে আঁকা ছবি-অপূর্ব সুন্দর। বাংলোর পিছনে দক্ষিণে দূরে দেখা যাচ্ছে গোয়ালদাম। অগ্নিকোণে লোহাজং এর সর্বোচ্চ বিন্দু-সবুজ ঘাসে ঢাকা সমতল পর্বতশীর্ষ আজিনটপ (১০,৫০০ ফুট)। পশ্চিমে ঘন অরণ্যে ঢাকা ১০-১২ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের ঢেউ। আকাশ রেখায় তারই দক্ষিণ বাহুটি দেবল হয়ে চলে গেছে থারালি। উত্তরের বাহুটি বিগুনতাল,ব্রহ্মতাল হয়ে প্রসারিত ওয়ানের দিকে। পাহাড়ের উচ্চতা,আবহাওয়া ইত্যাদির সাথে মানিয়ে নেবার জন্য (যাকে পরিভাষায় বলে Acclimatization) ১৯ তারিখ আমরা লোহাজং ই থেকে গেলাম। সকালে জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।বাংলোর ঠিক পিছনে নন্দাদেবীর মন্দিরের পাশ দিয়ে আড়াআড়িভাবে রাস্তা চলে গেছে আজিন টপে। সামনে একটি ছোট্ট মন্দির। প্রায়ান্ধকার গর্ভগৃহের মাঝখানে চকচক করছে একটি শিবলিঙ্গ।
পরদিন ২০ তারিখ সকাল সাতটায় খচ্চরের পিঠে মালমত্র চাপিয়ে রওনা দিলাম ৮ কিমি দূরের দিদনা (৯,০০০ ফুট) গ্রামের উদ্দেশ্যে। লোহাজং বাংলোর সামনে দিয়ে উত্তর পশ্চিম দিক দিয়ে রাস্তা এঁকে বেঁকে ক্রমশঃ নিচে নেমে গেছে। প্রায় দেড় কিমি যাবার পর একটা লোহার ব্রীজ পেলাম। আরও কিছুটা যাবার পর সামনে পড়লো কুলীন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর ডানপাশ দিয়ে ঝুড়ো পাথরের রাস্তা ক্রমশঃ নিচের দিকে নেমে গেছে। চির-পাইন-ওক গাছের ছায়াঘেরা পথ। আরও কছুটা যাবার পর রাস্তাটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে একটা উপরের দিকে উঠে ক্রমশঃ ওয়ানের দকে চলে গেছে। অপর পথটি ক্রমশঃ নিচের দিকে নীলগঙ্গার দিকে নেমে গেছে। এরপর একটা লোহার সাঁকো পেরিয়ে রাস্তা ক্রমশঃ উপরের দিকে উঠে গেছে দিদনা গ্রামের দিকে। দেখলাম পাহাড়ের ঢালে রামদানার চাষ হয়েছে-চারদিক লালে লাল হয়ে আছে। আমরা গিয়ে উঠলাম গ্রামের স্কুলে। গ্রামটি দেখতে যেন অনেকটা বাটির মতো-মাঝখানে গ্রামটি আর চারদিকে একে ঘিরে রেখেছে পাহাড়ের সাড়ি।
২১ তারিখ ভোর পাঁচটায় “সাব বেড টি রেডী ”,পোর্টার রাজীন্দ্ররের এই ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। ব্রেকফাস্ট সেরে সকাল আটটা নাগাদ আমাদের দ্বিতীয় দিনের ট্রেক শুরু হল। আজ আমরা যাব আলি বুগিয়াল হয়ে বৈদিনী বুগিয়াল;প্রায় ১২ কিমি পথ। পৌছাতে পৌছাতে বিকাল হয়ে যাবে;তাই প্রত্যেকে প্যাক লাঞ্চ নিয়ে নিলাম। দিদনা গ্রামের স্কুল বাড়িটির পিছন দিক দিয়ে সরু পাহাড়ী রাস্তা এঁকে বেঁকে ক্রমশঃ উপরে উঠে গেছে। পথে শুরুতেই একটা ঝরণা পড়লো। আমরা চলেছি উত্তরমুখো-চির পাইন রোডোড্রেনডেনের ছায়াঘেরা পথ দিয়ে। প্রায় দুই ঘন্টা পর একটা সবুজ মাঠের মতো জায়গায় এসে পৌছালাম। চারদিকে বড় বড় গাছ;আর সামনে বেশ কয়েকটা পাথর দিয়ে তৈরী ঘর। পাহাড়ের ধার (Ridge)বরাবর ক্রমশঃ উত্তরদিকে যেতে লাগলাম। গাছপালার গভীরতা ক্রমশঃ বাড়তে লাগলো-গাছের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে উঁকি মারছে নন্দাঘুন্টি ও ত্রিশূল ।।এইভাবে যেতে যেতে প্রায় একটা নাগাদ এসে পৌছালাম এক সবুজ প্রান্তরে-গাছপালার রাজত্ব প্রায় শেষ-শুধু ঘাস আর গুল্ম। যেদিকে তাকাই শুধুই ঢেউ খেলানো প্রান্তর-অপূর্ব। বুঝতে পারি আমরা চলে এসেছি গাড়োয়াল হিমালয়ের এক নম্বর বুগিয়াল আলি বুগিয়ালে। হিমালয়ে গিয়ে বুগিয়াল দেখা নতুন কিছু নয়। পঞ্চকেদারের (কেদারনাথ,তুঙ্গনাথ,রুদ্রনাথ,কল্পেশ্বর,মদমহেশ্বর) অন্যতম তুঙ্গনাথে যাবার সৌভাগ্য আমার তিনবার হয়েছে। তুঙ্গনাথের পথেও দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বুগিয়াল দেখেছি। কিন্তু আলি বুগিয়ালের সৌন্দর্য অসাধারণ;শুধুই সবুজ-দিগন্ত বিস্তৃত- যেদিকেই তাকাই শুধুই সবুজের ঢেউ। মাঝে একটা পাথরের ঘরে লাঞ্চ করলাম। এই পাথরের ঘরগুলি ভেরাপালকদের থাকবার জন্যই মূলত ব্যবহৃত হয়। প্রায় আধঘন্টা পর আবার হাঁটা শুরু করলাম। আলি বুগিয়াল দিয়ে সরু পথ পাহাড়ের গা দিয়ে চলে গেছে ৩ কিমি দূরের বৈদিনীর দিকে। এইভাবে বেশ কয়েকটা বাঁক ঘুরতেই সামনে ঘন খয়েরি রঙ্গের উষর পর্বত চোখে পড়লো। তার নিচ পর্যন্ত প্রসারিত সমুদ্রতরঙ্গের মত সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ। পিছনে উত্তর দিকে নন্দাঘুন্টি ও ত্রিশূলের তুষার ধবল শৃঙ্গ ঝকঝক করছে। বৈদিনী ক্রমশঃ ঢালু হয়ে পশ্চিমদিকে নেমে গেছে-অনেক নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে বৈদিনী গঙ্গা;ওপারের পাহাড়ে ঘন জঙ্গল। বুগিয়ালে দেখলাম তিনটি পাথরের ঘর-সম্ভবত ওখানে ভেড়াওয়ালারা থাকে। যাহোক রবীনদার নির্দেশমতো পরপর চারটি ট্রেন্ট খাটানো হল। ইতিমধ্যে কফি রেডী;সঙ্গে বিস্কুট চানাচূর। পশ্চিম দিগন্তে সূর্য ডুবে যাচ্ছে;আর তার লাল রঙ রাঙ্গিয়ে দিচ্ছে একে একে নন্দাঘুন্টি ও ত্রিশূলের মাথাকে। রাতের ডিনার খিচুরি,ঘী আর ডিমভাজা খেয়ে তাড়াতাড়ি তাঁবুর মধ্যে ঢুকে পড়লাম। রাতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে।
২২ তারিখ-অরূপমদার ডাকে ঘুম ভেঙ্গে তাঁবুর বাইরে এসে আনন্দে পাগল হয়ে যাবার উপক্রম। এ কোথায় এসে পড়লাম-এই কি স্বর্গ। আস্তে আস্তে চারদিক আআলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে-তুষার হিমালয়ের অঙ্গনে ঢুকে পড়েছে সূর্যের সোনার রথ। আর সেই আলোয় এক এক করে উদ্ভাসিত হতে লাগলো সব তুষারশৃঙ্গ-পশ্চিম দিক থেকে উত্তরে এক এক করে বন্দরপুঞ্ছ,চৌখাম্বা,হাতিপর্বত,নীলকন্ঠ,নন্দাঘুন্টি,ত্রিশূল। আজ আমাদের ট্রেকিং এর বিরতি। এখানে এসে জানা গেল এ বছর আগষ্টের পরে কোনো টীমই রন্টি স্যাডল তো দূরের কথা রূপকুন্ডই যেতে পারেনি-সামনে একেবারে বরফের সমুদ্র। রবীনদার নির্দেশানুসারে অরূপমদা লাল সিং কে নিয়ে বগুয়াবাসার দিকে ফেরী করতে গেল। ঠিক হলো ওরা ফিরে আসার পর আগামীকালের পরকল্পনা ঠিক হবে। আমরা বৈদিনীর আশে-পাশে ঘুরতে লাগলাম। বুগিয়ালের ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডের পিছনেই দেখলাম একটা কুন্ড রয়েছে-বৈদিনী কুন্ড। কুন্ডের উত্তর-পূর্ব দিকে নন্দাদেবীর মন্দির। প্রতিবছর ভাদ্র্র মাসের নন্দাষ্টমী তিথিতে উৎসবের সাজে সেজে ওঠে বৈদিনী। কুমায়ুন গাড়োয়ালের ধর্মপ্রাণ মাানুষেরা দুর্গম কান্তার পেরিয়ে আসে এই বুগিয়ালে। বৈদিনী কুন্ডে ডুব দিয়ে তাারা পবিত্র হয়। পুণ্য কামনার জন্য তারা নন্দা মাকে পূজা দেয়। কুমায়ুন-গাড়োয়ালের সবচেয়ে বড় উৎসব হল বড়িনন্দজাত। ঠিক প্রত্যেক ১২ বছর অন্তর এই অঙ্কলের কোথাও-না-কোথাও একটি চার শিঙা ভেড়ার জন্ম হয়। শেষে পাহাড় থেকে পাহাড়,গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে এই খবর লোকমুখে পৌঁছে যায়। প্রত্যেকেই প্রস্তুত হয় উৎসব পালনের জন্য। নির্দিষ্ট দিনে দলে দলে পুণ্যার্থী শোভাযাত্রা সহকারে পাহাড়ের পথ বেয়ে এগিয়ে চলে-সামনে থাকে সুসজ্জিত সেই অলৌকিক চার শিঙার ভেড়া। এইভাবে শত সহস্র মানব মানবী এগিয়ে চলেন ওয়ান-বৈদিনী-পাতরনাচুনি-বগুয়াবাসা-রূপকুন্ড হয়ে হোমকুন্ডে। আশ্চর্যের বিষয় হল সেই চার শিঙাওয়ালা ভেড়াটাকে পরবর্তীকালে আর কেহউ দেখতে পায় না। সেই যে বড়াহোমকুন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয় তারপর নাকি সে নিজ পথে এগিয়ে চলে তার লক্ষে।
দুপুর ২টা নাগাদ দেখলাম দূরে পাহাড়ের গা দিয়ে ছয়-সাতজন মানুষ এগিয়ে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা আমাদের তাঁবুর কাছে চলে আসলো। ওরা বগুয়াবাসার পর আর এগোতে পারে নি। কৈলু বিনায়কের পর শুধুই বরফ আর বরফ। পথ বলে আর কিছুই নেই। এরপর এগোতে হলে রোপ,আইস এ্যাক্স ইত্যাদি সরঞ্জাম প্রয়োজন। ইতিমধ্যে অরূপমদারাও ফিরে আসলো। তার কাছে বিস্তারিত সব শুনে রবীনদার নির্দেশানুসারে ঠিক হল আগামীকাল আমি,রঞ্জনদা,উত্তমদা,তাপসদা,অরূপমদা রূপকুন্ডের পথে এগিয়ে যাব। বাদবাকী সবাই বৈদিনীতে থেকে যাবে।