তাপস সরকার
লেখক পরিচিতি
(পঞ্চাশ বছরের ওপর সৃজনশীল সাহিত্য কর্মে নিয়োজিত কিশোর বয়স থেকেই। প্রথম পঠিত গ্রন্থ রামায়ণ, মহাভারত ও গীতা। গদ্যসাহিত্য ও উপন্যাসেই সাবলীল। যদিও শতাধিক গল্প ও দশ-বারোটি উপন্যাসের রচয়িতা কিন্তু সেসব হারিয়ে গেছে অপ্রীতিকর কারণে। প্রিয় বিষয় মহাকাশবিদ্যা। কল্পবিজ্ঞান ও কিশোর সাহিত্য প্রিয় লেখা। অবশ্য সহস্রাধিক সুরারোপিত গানেরও রচয়িতা যেসব ইউটিউবার মেয়ে নিয়মিত আপলোডও করে চলেছে ইউটিউব চ্যানেলে। কিছু গল্প নব্বইয়ের দশকে বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত। উন্মীলন নামে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকায় নিজের গল্প ও দুটি উপন্যাস ছাপা হলেও সেই উদ্যোগ থেমে যায়। প্রতিভাস সাহিত্য ম্যাগাজিন চলছে পনের বছর যা মায়ের নামে। সেখানে মায়ের উদ্দেশ্যে নিবেদিত লেখা স্মৃতিচিত্রণ ও বেশ কিছু ছোটগল্প। নব্বইয়ের দশকে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে কিছুদিন লিটল ম্যাগাজিন গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থেকে জেলায় জেলায় সাহিত্য আসরে ঘোরাঘুরি। বিশ্বকে নিজের ঘর বলে ভাবতে অভ্যস্ত। মায়ের মৃত্যুর পর অবসাদে দীর্ঘদিন লেখায় বিরত। তারপর আবার লেখা শুরু কিশোর সাহিত্য ‘গাছবাড়ির বাসিন্দা ‘। পাঁচ বছরের প্রচেষ্টায় কোভিড পরিস্থিতিতে লেখা ইংরেজি ভাষায় ‘ইটস মাই আইল্যান্ড ‘ প্রকাশের অপেক্ষায়। স্বউদ্যোগে প্রকাশিত একমাত্র উপন্যাস ‘অন্তরালোকে ‘ নিজের জীবনের এক বিশেষ অধ্যায় ও মাকে নিয়ে লেখা। ভারতীয় প্রাচীন দর্শনের ওপর একনিষ্ঠ বিশ্বাস ও আধুনিক প্রযুক্তির ওপর বিরক্তি ‘অনন্ত জীবন ‘ উপন্যাসের পাতায় পাতায় প্রতিফলিত। এই উপন্যাসও মূল রচনা ইংরেজিতে। বঙ্গানুবাদও লেখককৃত। পেশায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত একটি কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের অধ্যাপক হলেও লেখকসত্ত্বাকে প্রথম পরিচয় বলে ভাবতে পছন্দ। )
মূলাংশ
(মরজগতে মানুষ চলেছে অমরত্বের সন্ধানে। অনাদি অতীত থেকে তার এই যাত্রারম্ভ। অনন্ত জীবন তারই এক প্রকাশ। তাই অমৃতের অধিকার নিয়ে সুরাসুরে এত অশান্তি, কারণ অমৃত নাকি অমর করে। অমরত্বের ব্যাখ্যা আবার দ্বিধাবিভক্ত, দৈহিক অমরত্ব এবং আধ্যাত্মিক অমরত্ব। দানব ও সর্বসাধারণ বোঝে প্রথম মতবাদটিকেই। কোনটি সঠিক? সবাই ছোটবেলায় হারিয়ে যায় মানুষের মেলাতে, সেখানে সে বন্ধু খুঁজে পায় যাকে সে তাকে হাত বাড়িয়ে দেয়, বোঝাতে চায় মানুষ ও বিশ্বজগতের উদ্দেশ্যবিধেয়। যে তাকে চেনে সে বোঝে সব। শৈবাঙ্কন আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতাকে অস্বীকার করে চলে যায় স্পিতি ভ্যালিতে। সেখানে সে আবিষ্কার করে সর্বজনীন ভাষা যাতে বাক্যালাপ চালাতো সনাতন মুনি-ঋষিরা কীটপতঙ্গ, পাহাড়-পর্বত, নদী-জঙ্গল, পাথর-প্রান্তর এবং অদৃশ্য দেবতাদের সঙ্গে। স্পিতি ভ্যালির পটভূমিকায় স্পিতি নদী ও প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ এবং মানুষের সঙ্গে কথোপকথনে সে খুঁজতে থাকে অনন্ত জীবন বা অমরত্ত্বের ব্যাখ্যা। কী পেল সে শেষ পর্যন্ত ? )
অধ্যায়: সাত
মেলার মানুষজন বড়োই বিচিত্রদর্শন, বাহ্যিকভাবে তো বটেই অন্তরেও। কোটিকল্প তার হাত ধরে সব দেখিয়ে দিচ্ছিল।
তার তখন বোঝার মত বয়সই হয়নি। কে মানুষ, কে দানব সেটা হয়তো চিনতে পারত যদি তারা স্বমূর্তিতে থাকত। তবে মানুষের মধ্যেওতো চরিত্রে কেউ মানুষ বা দানব হতে পারে ? তাদের আলাদা করে বোঝার বিদ্যে তখনও তার আয়ত্ত্বাধীন হয়নি। মানুষের আবার নানান ইচ্ছে, স্বভাবের নানান প্রকার-প্রকৃতি। সেসব সে ভাবতেই জানত না। সে কী চায় বা কে কী সেসবও তার মাথাব্যথার কারণ ছিল না। সে যা দেখত তা সোজাসুজিই দেখত। দেখার জিনিস তো অনেককিছুই, কোন্ টা ছেড়ে কোন্ টা দেখবে তা বুঝতে হিমশিম খেয়ে যেত প্রথম প্রথম। কী দেখা উচিত বা কী দেখা অনুচিত সেটাও একটা ব্যাপার। তো সেসব নিয়ে তাকে ততটা ব্যতিব্যস্ত হতে হচ্ছিল না। ভাগ্যিস কোটিকল্প তার হাত ধরেছিল।
মেলাতে কেউ গায়ক, কেউ লেখক, কেউ নেতা, কেউ দার্শনিক, কেউ বিজ্ঞানী, কেউ গবেষক কেউ বা অন্যকিছু।কেউ খেলে, কেউ চাকরি করে, কেউ দোকানদার, কেউ রাজা, কেউ প্রজা, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ হাঙ্গামাকারী, কেউ চোর, কেউ ডাকাত, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল, কেউ বিচারক, কেউ প্রশাসক, কেউ সৈন্য, কেউ পুলিশ, কেউ রাজনীতিবিদ ইত্যাদি কত হাজার হাজার পেশায় ব্যস্ত সব মানুষ। এই ভিড়ের মধ্যে কাকে ছেড়ে কাকে দেখা দরকার ? কী পেশার কী মানুষকে ? এসব কি সে একা ঠিক করতে পারত ? পাগল না মাথাখারাপ ! সেই ব্যাপারটা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল কোটিকল্প।
একদিন সে একজনকে দেখিয়ে তাকে বলল,
‘ওই লোকটাকে দ্যাখ্।’
সে তাকাল। দেখতে পেল একটা ভিড়। মেলার বহুমুখী জনতা একত্র হয়ে যাচ্ছে সেখানে এসে এবং এভাবেই একটা ভিড় তৈরি করেছে, আর সেই জনসমাগম বেড়েই চলেছে। ভিড়ের মধ্যমণি একজন মানুষ এবং তার জন্যই লোকের এমন উন্মাদনা। বর্ণাঢ্য তার উপস্থিতি, দেখেই স্পষ্ট যে জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সে একজন গায়ক, মেলা পরিদর্শনে তার আগমন। অথবা এমনও হতে পারে যে মেলাতে আসার পর এখানে থাকতে থাকতেই গায়ক হিসেবে তার পরিচিতি। এই যে মেলা, এতো আর এক-দু’দিনের নয়। কবে থেকে চলছে বা কবে সাঙ্গ হবে তা কেউই জানে না। মানুষরা কেবল জানে, মেলাটা যখন চলছে আর চলছে হাজির তো হতেই হবে চাও বা না চাও। যাই হোক, সেই গায়কও যেভাবেই হোক মেলাতে আছে আর তাকে ঘিরেই লোকজনের এমন আয়োজন। কোটিকল্প এই গায়ককেই দেখতে বলল।
দেখল সে, দেখতেই লাগল। দেখে তার বিশেষ কিছুই মনে হল না। কোন একজন বিশ্ববিখ্যাত গায়ক এবং অসম্ভব তার জনপ্রিয়তা, এই যা ! সাধারণ লোকরা তো এমন একজনকে ঘিরে ভিড় বানাবেই, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে ? তার টাকাপয়সা ? হাজার হাজার কোটি টাকার সে মালিক। তার গাড়ির সংখ্যা গোণার চেষ্টা না করে সেসব দিয়ে বরং অনায়াসে একটা শোরুম খোলা যেতে পারে। বাড়ির সংখ্যা অত না হলেও একদিনে সবগুলি দেখা একেবারেই সম্ভব নয়, কারণ সেক্ষেত্রে কাউকে পৃথিবীর নানা শহরে ঘুরে বেড়াতে হবে। এমনিতে সে বসবাস করে তার এক নিজস্ব দ্বীপে, সেখানে আছে তার রাজপ্রাসাদ আর অগণিত ভক্তজনের আনাগোনা। বহু ভক্ত ওই দ্বীপে তার সম্মতিক্রমে পাকাপাকি ভাবে থাকারও সুযোগ পেয়েছে। তারা তার প্রজা আর সে নিজে ওই দ্বীপের সম্রাট। যাতায়াতের জন্য রয়েছে নিজস্ব জাহাজ, প্লেন বা হেলিকপ্টার। তার ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তা দেখে বোধহয় বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও ঈর্ষান্বিত হবে।
তা এসব আছে তার ভালোকথা, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে ? সে যদি অন্য গ্রহের অন্য কোন প্রাণি হত তাহলেও নাহয় কথা ছিল। পৃথিবীর মানুষ হলেও তাকে দেখে অবাক হওয়া যেত যদি তার ব্রহ্মার মত চারটি মুখ বা শিবের মত পাঁচটি মুখ থাকত। মাথাটাথা না থাকলেও অবাক হওয়ার কারণ ছিল তাকে দেখে যদি সে এযাবৎ অনাবিষ্কৃত কোন প্রজাতির কোন অভিনব আচার-আচরণ-দর্শনের প্রাণি হত। এই লোকটা সেসব কিছুই নয়। সে কেবল গান গায়, সে ট্রেনে বা রাস্তায় ভিখিরিরাও গাইতে পারে। তাতে অবাক হওয়ার কী আছে ? জনপ্রিয়তা ? সেটাও কি অদেখা কোন বস্তু ? পৃথিবীতে বহু লোক জনপ্রিয় হয়েছিল, হচ্ছে, হবে। ধর্মপ্রচারক, জননেতা, খেলোয়াড় ইত্যাদি বহু ব্যক্তি জনপ্রিয় হয় এবং তাদের কোটি কোটি ভক্ত থাকে। জগতে ভক্ত হওয়ার লোকের কোন অভাব নেই, অভাব নেই কীট-পতঙ্গেরও। তাতে বিস্মিত হতে হবে কেন ? লোকটা এত এত ধনসম্পত্তি ও টাকার মালিক ? সেটাও তার মনে হল না আশ্চর্য হওয়ার কোন বিষয় বলে। পৃথিবীতে কেউ আফিং বিক্রি করেও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়। অবৈধ পাচারকারীরাও বহু অর্থ ও সম্পদের অধীশ্বর। তেল বিক্রি করে ধনকুবের হয়ে বসে আছে আরব শেখরা। এই লোকটা ধনকুবের হয়েছে তার গলার গান বিক্রি করে। এতে কি সত্যি কোন আশ্চর্য হওয়ার মত উপাদান আছে ?
লোকটাকে অনেক সময় ধরে দেখে এই কথাগুলিই সে বলল। সবশেষে সে প্রশ্ন তুলল,
‘একে দেখে অবাক হবে কেন ?’
কোটিকল্প তার দিকে তাকিয়ে রইল সম্পূর্ণ চোখ মেলে। তারপর বলল,
‘তোকে কি আমি অবাক হতে বলেছি ?’
‘তাহলে দেখতে বললে কেন ?’
তার পাল্টা প্রশ্নের উত্তরে সে জানাল,
‘তোকে দেখতে বলেছি জানার জন্য বোঝার জন্য। তুই মেলাতে এলি কেন ? এখানে যারা আছে তাদের স্বভাব-চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত হবি বলে। এই যে এত জন কোলাহল, এত মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে মেলাতে তারা কী চায় বা কী তাদের উদ্দেশ্য সেটা তো বোঝা দরকার। এমনি এমনি কেউ তো বেকার ঘুরে বেড়াবার জন্য মেলায় আসেনি। প্রত্যেকেই এখানে আসে কিছু না কিছু একটা লক্ষ্য নিয়ে। কিছু না কিছু পেতে চায় আর সেই কারণে সারাজীবন ঘুরে বেড়ায়। মেলাতে এত লোকের ঘোরাঘুরি অনর্থক নয়। সবাই চায় কিছু না কিছু নিজের জন্য কিনতে, কারণ এখানে কেনার মত সমস্ত জিনিসই আছে। তাই এখানে আসা আর যতদিন সম্ভব থেকে যাওয়া। তবে যে যাই কিনতে ইচ্ছে করুক না কেন, তুই দেখবি সবারই ইচ্ছে একটা জায়গায় এসে অভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এটা কেন হয় কিভাবে হয় সেসব জানতে হলে মেলায় উপস্থিত লোকগুলিকে তোর একটানা দেখে যেতে হবে। মুশকিল হল, এই দেখাটা একদিন-দু’দিনের হলে চলবে না। বছরের পর বছর, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মেলাতে যারা যাতায়াত করে বা থাকে তাদের দেখে যেতে হয়। তোর একটা মাত্র জীবনে তুই এত লম্বা সময় পাবি কোথায় ?’
সে নিরুত্তর তাকিয়ে রইল। তার চোখেও অনুচ্চারিত একই প্রশ্ন। একটু থেমে কোটিকল্প তাকে জানাল,
‘তার জন্য আছে একটা বিশেষ উপায়। সেইটা তোকে জানতে হবে। আছে একটা অন্য জগৎ আর অন্য পদ্ধতি। সেই পদ্ধতি মেনে সেই অন্য জগতে যাওয়ার দরজাটা চেনা দরকার। দরজা চিনলেও সব যে হাতের মুঠোয় চলে আসবে তাও নয়। সেই দরজাটা খোলার উপায় জানা চাই। ইচ্ছে হলেই কেউ এসব জেনে নিয়ে সেই জগতে যেতে পারে না। সেটা এক জাদুজগৎ, জাদুবিদ্যাতেই তাকে পাওয়া যায়। আর সেই জাদু জানি জগতে একমাত্র আমি। আমার হাত ধরে থাকতে পারবে যে তাকে আমি চাইলেই সে জগতে নিয়ে যেতে পারি, সেখানে সে তখন যতদিন খুশি থাকার সুযোগ পাবে। সে একটা অন্য পৃথিবী, এই পৃথিবীর নিয়মকানুন সেখানে অচল। আয়, তাহলে তোকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছি। আমি হাত ধরে আছি যখন তোর কোন চিন্তা নেই।’
এবার সে সত্যিই বিস্মিত হতে লাগল। যে হাত ধরে আছে তার এতটাই ক্ষমতা ? সে তো তাকে সাধারণ কেউ একজন ভেবেছিল যে কোন একদিন তার মতই এই মেলাতে হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন বুঝল, আসলে তা নয় একদম। সে একজন অসম্ভব ক্ষমতাশালী কেউ। কে ? সে এই প্রথম সম্পূর্ণ চোখ মেলে কোটিকল্পকে দেখতে লাগল। সে কে তা বুঝতে চেষ্টা করল।
বুঝতে পারল না অবশ্য কিছুই। এমন এক সাদামাটা চেহারার একজনের এত ক্ষমতা হয় কি ? ধাপ্পাবাজ কিনা এমন সন্দেহ মাথায় এলো। দেখতে লাগল সে। দেখতে দেখতে তার মনে হল, বোধহয় সে সত্যিই অন্যরকম। আগে সে ভালো করে দেখেনি বলে টের পায়নি। এবার চোখ খুলে মনোযোগ দিয়ে দেখতে গিয়ে অসাধারণ কিছু ব্যাপার-স্যাপার নজরে পড়ল, তার ওই আপাত সাধারণ চেহারার আড়ালে।
সে দেখতে পেল যে কোটিকল্পের চোখগুলি আবর্তনশীল, এদিক থেকে ওদিক বা ওদিক থেকে এদিক। এভাবে কোন মানুষের চোখ কি ঘূর্ণায়মান হয় ? তাকে আরও অবাক হতে হল যখন সে নজর আরেকটু গভীর করে বুঝতে পারল কেবল চোখই নয়, কোটিকল্পের সমস্ত শরীরটাই আবর্তনশীল। তারপর সে বুঝল, চোখ বা দেহই নয়, আসলে তার গোটা অস্তিত্বটাই অস্থির ও চক্রাকারে আবর্তন ঘটিয়েই চলেছে। অথবা অন্য কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, ক্রমাগত আবর্তনশীল উপাদানের অস্থির সমন্বয় তার সমগ্র উপস্থিতি, কোথাও কোন স্থিরতাই নেই। সে দেখল, তার ওই অদ্ভুত অপার্থিব দেহকাঠামোর আবর্তনে একের পর এক অতীত আর বর্তমান আর ভবিষ্যৎ অবিরাম ঘুরেই চলেছে হাত ধরাধরি করে এবং সেখানে হাজির থাকছে ও মিলিয়ে যাচ্ছে অবিশ্বাস্য কতসব জাগতিক পরিকাঠামো। এবার এতক্ষণে সে সত্যিই অবাক হল। এত বিস্মিত সে আর কোনদিনও হয়নি। কিছুটা হতভম্ব গলায় প্রশ্ন করল,
‘তুমি কি জাদুকর ?’
কোটিকল্পের মুখে কি মৃদু হাসি দেখা গেল ? বোঝার উপায় নেই, কারণ সেই হাসিও আবর্তনশীল। তার উত্তর শোনা গেল,
‘বলতে পারিস। জাদুকর না হলে জাদুবিদ্যার জগতে কে প্রবেশাধিকার পায় ? আবার তোকেও নিয়ে যেতে পারছি কিসের ক্ষমতায় ? এবার তুই জিজ্ঞেস করতে পারিস, ওই জাদুজগতে গিয়ে কী লাভ। ওখানে গেলে তোর দৃষ্টিক্ষমতা বেড়ে যাবে। তুই বলতে গেলে, দিব্যদৃষ্টি লাভ করবি আর তাই দিয়ে কোন একজন মানুষের সারাজীবন কেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাকে দেখে যেতে পারবি। কোন একটি মানুষ জন্মের সময় কী ছিল বা কেমন তার বড় হওয়ার প্রক্রিয়া বা কিভাবে ভবিষ্যতের গর্ভে সে বিলীন হয়ে যাবে সবই তুই দেখতে পাবি এক পলকে। শুধু কি তাই ? দেখতে পাবি ওই মানুষটির পিতা ও প্রপিতামহদের বিবরণ এবং অনাগত উত্তরপুরুষদের বৃত্তান্ত। একশ’ বছরের গোটাটাকে তুই দেখতে পারবি হয়তো এক মিনিট বা চাইলে এক সেকেন্ডের পরিসরে। টাইম ট্র্যাভেল বা সময় ভ্রমণ-টোমন নয়, এটা একেবারে অন্য ব্যাপার। বলতে পারিস, বিন্দুতে সিন্ধু পরিদর্শন। কিভাবে ঘটবে ওটা বোঝার দরকার নেই, ঘটলে কী হবে সেটুকুই কেবল দেখবি। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকেও ইচ্ছে হলে পেয়ে যাবি নাগালে।’
শুনতে শুনতে তার প্রায় খাবি খাওয়ার মত অবস্থা। নিজেকে কেমন অসহায় বলে মনে হচ্ছিল। বুঝি সে অকুল সমুদ্রে হাবুডুবু খেয়ে যাচ্ছে আর তাকে কোন এক নিয়ন্ত্রণকারী নিজের খেয়ালখুশি মত চালাচ্ছে। তবুও সে যে একেবারেই সব বিস্মরণ হয়ে গেল এমন নয়। তাই সে পাল্টা প্রশ্ন করতে পারল,
‘কিভাবে ঘটল যদি না জানি ঘটলে কী হবে বুঝব কিভাবে ?’
কোটিকল্প উত্তর দিতে বিশেষ দেরি করল না। বুঝিয়ে বলল,
‘এই যে পৃথিবীটাতে তুই আছিস এটা এল কোত্থেকে তুই দেখেছিস না জানিস ? পৃথিবীর কিভাবে জন্ম হল সেটা না জেনেও তোর কি পৃথিবীতে থাকতে বা একে বুঝতে কোনও সমস্যা হচ্ছে ? অবশ্যই হচ্ছে না। হলে তুই নিশ্চিন্তে এখানে আছিস কী করে ? ব্যাপারটা অনেকটা ওইরকম। কোন বস্তুর জন্মকাহিনী না জানলেও বা তার জন্মটা না দেখলেও তাকে বুঝতে অসুবিধে হয় না। যদি হত তাহলে নিজের বাবা-মাকেও তুই চিনতে পারতিস না। এখানেও ঘটনাটা তেমনই। প্রক্রিয়া জেনে কাজ নেই, কী ঘটল সেটুকু জানলেই অনেক।’
মনে হচ্ছিল, বোধহয় সব দ্বিধাদ্বন্দ কেটে গেছে। প্রথম প্রথম সব যতটা দুর্বোধ্য লাগছিল এখন যেন বেশ সরল-সহজ। তার এখন বিশ্বাস হতে শুরু করেছে, কোটিকল্প সত্যিই এক জাদুকর। যদি তাই না হবে তো অত জটিল ব্যাপারটা কিভাবে এতটাই বোধগম্য হয়ে যাবে ? সব তো ঘটাল সে কথা বলে বলে বুঝিয়ে। যে অত সুন্দর বোঝাতে পারে সে জাদুকর নয়তো কী ?
সে দেখল মেলায় সার্কাস আছে। কেন আছে বা থাকলে কী হয় বা হবে সেটুকু জানলেই চলবে, বড়জোর জানা দরকার কী উদ্দেশ্যে আছে। কোত্থেকে এলো কিভাবে এই সার্কাস সেটা জানার দরকার নেই, অন্তত এখন। নাগরদোলা ঘুরছে—- সেখানে কারা ঘুরছে কেন ঘুরছে সেটুকু জানাই উদ্দেশ্য, কিভাবে কোত্থেকে এলো নাগরদোলা আপাতত তা নিয়ে মাথা না ঘামালেও ক্ষতি নেই। মেলায় আছে ম্যাজিশিয়ান, সে ম্যাজিক দেখাচ্ছে। কী কী ম্যাজিক কী কারণে দেখাচ্ছে প্রশ্ন এখানেই। কারা সেই ম্যাজিক দেখছে, দেখে কী ভাবছে বা তাদের কী পরিণাম ঘটছে তাও দেখা যেতে পারে। মেলা তো একটা মিলনস্থল, সেখানে সব জিনিস আর ঘটনাবলীর একত্রীকরণ ঘটে। গোটা জগতের এটা এক অবিকৃত অবিকল সংস্করণ। সেখানে কেন আসে সবাই, কেনই বা থাকে, কী উদ্দেশ্যে জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড একত্রিত করে প্রদর্শনী সাজায় সেসব দেখা আর জানাই মূল আকর্ষণ। যারা মেলা দেখতে আসে, ঘুরে বেড়ায় তাদের চিত্ত বিনোদন ঘটে এভাবেই। ভুলে গেলে চলবে না যে মেলা এক বিনোদন ক্ষেত্র। যে যাই করুক এখানে সেসব করে তার আনন্দবিধান হলেই। নিরানন্দে কে থাকে মেলায় ? যে উদ্দেশ্যে যে যাই করে আনন্দ আর উৎসাহ থাকে বলেই করে। ওই যে চিত্রকর প্রদর্শনীর আয়োজন করে তার ছবি সবাইকে দেখাবার ব্যবস্থা করেছে এখানেই তার আনন্দ। কেন কী উদ্দেশ্যে তা যদিও জানা দরকার তবুও সেই প্রাথমিক বিষয়টা তো দেখতে হবে। বিজ্ঞানী এখানে উপস্থিত তার নানা উদ্ভাবনের মডেল নিয়ে। উৎসাহ আর প্রেরণা না থাকলে আসত না। উদ্দেশ্য তার অনেকরকম, সেখান থেকে বাছাই করে জানা যাবে মূল কী উদ্দেশ্য। মেলাতে এইভাবে কবি আছে, গায়ক আছে, লেখক আছে, ব্যবসায়ী আছে, ডাক্তার আছে, নেতা আছে, উকিল আছে, শিক্ষক আছে, অভিনেতা আছে, রুগী আছে, চোর আছে, শাসক আছে, ডাকাত আছে, শাসিত আছে—- কে নেই ? সবাই থাকতে বাধ্য মেলাতে। না থাকলে মেলা হবে না। সবাই আছে জীবনের নানা প্রয়োজনে। জীবিকা উপার্জন যদিওবা বড় লক্ষ্য, তা আনন্দ বা উৎসাহ বাদ দিয়ে হয় না। তবে আরও একটা বড় লক্ষ্য থাকে সব কিছুর চালিকাশক্তি হয়ে, বলতে গেলে সেটাই আসল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যটা দেখাবার জন্যই কোটিকল্প তার হাত ধরল, জাদুজগতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিল।
জাদুজগত কোথায় আছে সাধারণ মানুষ না জানলেও তা অবশ্যই আছে। সাধারণ চোখে সাধারণ জগতে থেকে তা বোঝার উপায় নেই। আমাদের এই জগৎ চারটি মাত্রা নির্ভর, তার গোটা কাঠামো গড়ে উঠেছে এই চারটি মূল স্তম্ভকে ভিত্তি করে। মানুষের উপলব্ধির জগৎ পঞ্চমাত্রিক, তার গোটা জগৎ সে দেখে আর বোঝে এই পাঁচটি মূল উপাদানের সম্মিলিত ক্রিয়াকলাপে। জাদুজগতের সীমানা এই চারটি মাত্রা ও পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের বেড়াজালে সীমাবদ্ধ নয়। ওই জগতে অতিরিক্ত অন্য মাত্রার রাজত্ব, চেতনালোক ও অনুভব প্রাণিত অন্য ইন্দ্রিয়ের সরব সক্রিয় উপস্থিতিতে। সেখানেই সময়সিন্ধুকে দেখা যাবে বিন্দুতে। শতাব্দীর সম্পূর্ণ ব্যাপ্তিকালের পুরোটাই দেখা যাবে হয়তো এক ঘন্টায় বা এক মিনিটে বা এক সেকেন্ডে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এই স্বল্প পরিসরের দর্শন ওই একশ’ বছরের কোন বিষয়, কোন ঘটনা বা তার প্রক্রিয়া, কোন বিবরণ বাদ রাখবে না। এ এক অত্যাশ্চর্য উপায় বা কলাকৌশল বা প্রযুক্তি যাকে বস্তুনির্ভর আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করা যায় না, কারণ একেই বলে দিব্যজ্ঞান। পাঁচ হাজার বছরের আধুনিক মানবসভ্যতাকে এভাবেই দেখা সম্ভব সুবিধেমত যেমন খুশি ক্ষুদ্র সময়ের পরিসরে। বলাই বাহুল্য যে পৃথিবীতে প্রাণিজগতের সমগ্র ব্যাপ্তিকাল এবং পৃথিবী গ্রহের জন্ম ও বিবর্তন প্রক্রিয়ায় বর্তমান অবস্থাপ্রাপ্তিকেও দেখা সম্ভব এই উপায়ে। তবে তা নির্ভর করে কতটা দিব্যজ্ঞান কার করায়ত্ত আছে তার ওপর। তাকেই বোধহয় ব্রহ্মজ্ঞানীও বলা হত। যার দিব্যজ্ঞানের পরিধি ব্যাখ্যাতীত সে ইচ্ছে করলে সমগ্র বিশ্বজগতের সৃষ্টি ও বিবর্তন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে পারে, এমনকি অন্যসব জগতের উপস্থিতি এবং বিবরণও তার আয়ত্তাধীন। কোটিকল্প তেমনই একজন, যদিও তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা কতটা হতে পারে তা জানা নেই। সে জাদুজগতে যেতে জানে, সেখানে যাওয়ার দরজা খোলার চাবিকাঠি আছে তার হাতে, যেখানে কালসিন্ধু বিন্দুতে উপস্থিত হতে পারে। অন্যকথায়, সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল সে জানে। কিন্তু সময়েরও তো প্রকারভেদ আছে ? কালকে বশীভূত করলে যে মহাকালও বশে থাকবে তা নাও হতে পারে। আবার এমনও জগৎ থাকতে পারে যেখানে কালের কোন ভূমিকাই নেই। দেশকালের ধারণাই অচল। কোন ঘটনাই ঘটে না। সমস্ত চলাচলও অনুপস্থিত। নিশ্চল প্রশান্তি অথবা স্তম্ভিত অপেক্ষা। সেখানে কি কোটিকল্প যেতে পারবে নাকি সেই জগৎ সে চেনে ? তবে এখন সে প্রশ্ন অবান্তর। সে অন্য একটা জাদুজগৎ চেনে এবং যেতে পারে এটাই প্রাসঙ্গিক। সে প্রশ্ন করল,
‘কী, যেতে চাস তো সেই জগতে ? সেখানে গেলে তবেই তুই দেখতে পাবি মেলাতে এইসব লোকজনের প্রকৃত চেহারা। এখানে তুই যাদের যে চেহারায় দেখছিস তারা আসলে অন্য এক চেহারার। প্রত্যেকেই পরিচিত একটা সাধারণ চেহারায়, কারণ তাদের সবারই রয়েছে এক অভিন্ন লক্ষ্য। যাকে দেখছিস গায়ক সে আসলে গায়ক নয়, যে সবার চোখে নায়ক সে আসলে নায়ক নয়, এবং এমনি করেই লেখক, দার্শনিক, চোর-ডাকাত থেকে শুরু করে জ্ঞানী-বিজ্ঞানী-সাধু-ভণ্ড-মূর্খ-নেতা-বিদ্বান-অভিনেতা ইত্যাদি আপাতদৃষ্টিতে যে পরিচয়ে যে আছে সে আসলে সেই পরিচয়ের কেউ না হয়ে অন্য কেউ বা অন্যকিছু। স্বরূপে থাকছে না কেউ, সবাই আছে ছদ্মরূপে। এখানে যাকে তুই গায়ক হিসেবে দেখছিস, দেখে মনে হচ্ছে বুঝি সঙ্গীতচর্চাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য, তার প্রাণ আর গান এক অভিন্ন বিষয়। এই সংগীতসর্বস্ব ব্যক্তি, যাকে দেখে অন্য কিছু মনে হয় না, তারও কিন্তু অন্য একটা চেহারা আছে যেটা তার সুপ্ত অথচ আসল চেহারা। আর সেই গুপ্ত বা সুপ্ত পরিচয়ের মধ্যেই দেখতে পাবি তার প্রকৃত লক্ষ্য। এটা এই পৃথিবীর চলতি চেতনালোকে বসে বুঝতেই পারবি না, দেখবি দূরের কথা। তার জন্য তোকে যেতে হবে সেই জাদুজগতে। আসলে কী জানিস, ওই জাদুজগৎটাই হল প্রকৃত জগৎ। আর এই যে জগৎটাতে তোর বসবাস, অহরহ চলাচল আর ওঠাবসা এটা হল এক মায়াপ্রকল্প, যেখানে সবই সাজানো, সবই ঢেকেঢুকে রাখা, সত্যি গোপন রাখার আপ্রাণ চেষ্টা, নিজের প্রকৃত চেহারা ও চরিত্র লুকিয়ে রাখার প্রাণান্তকর ঘোষণা ও কার্যকলাপ। এখানে কে তুমি তা আমিতো জানিই না, এমনকি তুমি নিজেও জানো না যেমন তোমার কাছে বা আমার কাছে স্পষ্ট বা পরিষ্কার নয় আমার পরিচয়। এ প্রকৃত অর্থেই এক অদ্ভুত ও আশ্চর্য মায়াপ্রকল্প যেখানে মানুষরা ঘুরে বেড়াচ্ছে একাধিক নানা অসত্য চেহারায় প্রকৃত পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মবেশে। এই মায়াপ্রকল্পের অধীন এই মানব সভ্যতা, মানুষের বাসযোগ্য এই পৃথিবী। তারই প্রতিরূপ আর প্রতিফলন তোর চোখের সামনে। জানবি, মিথ্যে দিয়ে সাজানো এই প্রতিফলন সর্ব অর্থেই নকল ও মেকি। এখানে যা ঘটমান তা হয়তো পুরাঘটিত বা আদৌ ঘটছেই না, অলীক অথবা কাল্পনিক। তাই যা তোর চোখের সামনে দেখছিস কোনোটারই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। যা প্রকৃত যা সত্যি তা যদি দেখতে চাস যেতে হবে ওই জাদুজগতে, যেখানে রয়েছে এই কাল্পনিক জগৎ বা মায়াপ্রকল্পের বাস্তব রূপ। যাবি কি ? আমি তোর হাত ধরেই আছি। সেই জগতে যাওয়ার চাবি আমার কাছেই। যেতে চাস নিশ্চয় ?’
তার তো এতক্ষণ মাথার ভিতরটা চক্কর দিয়ে যাচ্ছিল। কী দেখছে যেমন তা দেখছিল না, কী শুনছে তাও বুঝতে পারছিল না। বোঝার বয়স হয়নি তার তখনও সেটাও অবশ্য সত্যিকথা। তবুও তার আপ্রাণ ইচ্ছে ও চেষ্টা ছিল যা শুনছে তা বুঝে নেওয়ার, কারণ সে কোটিকল্প নামের এই সঙ্গীটিকে ততক্ষণে বিশ্বাস করে ফেলেছে। সে হতে পারে জাদুকর, ভেলকি দেখাবার ক্ষমতা হয়তো আছে তার, তবুও তার ওপর আস্থা রাখা চলে। এই সুবিশাল মেলার ভিড়ে সবাই চলছে নিজের নিজের পথে, কেউ কাউকে দেখার প্রয়োজন বোধ করছে না। সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। একমাত্র সে এসে ভরসা দিয়ে তার হাত ধরেছে। নাহলে বিপুল এই জনতার ভিড়ে তার কী হাল হত ? কেউ তো তার দিকে আর ফিরেও তাকায়নি। এই একজনই কেবল তাকে বন্ধুর মত বুকে টেনে নিয়েছে। তাকে নিশ্চয় ভরসা করা যায়। এজন্যই সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল আর মুখে বলল,
‘হ্যাঁ, আমাকে দেখাও সেই জাদুজগৎটা। আমি এই মেলার মানুষগুলির আসল চেহারাটা দেখতে চাই। জানতে চাই কী তাদের আসল ও অভিন্ন উদ্দেশ্য। কী লক্ষ্যে চলছে সবাই নিশির ডাকে।’
মৃদু হাসল কোটিকল্প, হাসি বা সেই হাসির আবর্তন। সেই অপার্থিব কণ্ঠস্বরে অন্তরের মধ্যে অনুরণন তুলল তার বক্তব্য, ‘তাহলে আয়, দেখি এই গায়কটিকেই। দেখা যাক কেন তার এতো গান, এতো সাজ, এতো আয়োজন। সে আসলে কী চায়। সেজন্য তার গোটা জীবনটাকে দেখতে হবে, কেবল বর্তমানটাকেই নয়। ভূতপূর্বজীবনের পাশাপাশি ভবিষ্যৎটাকেও, তার আমৃত্যু জীবনযাপন প্রক্রিয়া। তাহলেই তার প্রকৃত উদ্দেশ্যটা বোঝা যাবে, স্পষ্ট হবে কেন সে বেঁচে আছে। সেসব বুঝতে হলে তোকে আমার সঙ্গে যেতে হবে জাদুজগতে। আয়, এই মায়াপ্রকল্পাধীন পৃথিবী থেকে সেই জাদুজগতের প্রকৃত পৃথিবীটার দরজার সামনে। আয়, দরজাটা খুলি। ভিতরে যাই।’
কোটিকল্প তার হাত ধরে জাদুজগতের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। দরজাটা বন্ধ। সে চাবি নিয়ে তালা খুলল। পাল্লা ঠেলে ঢুকল তাকে নিয়ে সেই অপরূপ জাদুপুরীতে। তার দু’চোখে তখন থৈ-থৈ বিস্ময়।
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)