সুব্রত ভৌমিক 

বিনু মাঝে মাঝে অদ্ভুত খেলার কথা তোলে। এভাবেই একদিন ঠেকে আসতে দীনেশকে হঠাৎই এক খেলার প্রস্তাব ছুঁড়ল, ‘ধুর! যে দিকে তাকাই, শুধু সেই ফাউ মানুষ! খায়-দায়-মরে।’

     ‘সত‍্যি, যা বলেছিস।’

     ‘চ না, একদিন এই মানুষের বাইরে যাই।’

     ‘কী ভাবে!’

     ‘হাঁটতে হাঁটতে কোনও নির্জন জায়গায় চলে যাব।’

     ‘কিন্তু কেন!’

     ‘এমনিই। যাওয়া যায় কিনা দেখি।’

     ‘ওকে বস্, চ।’

     অতএব পরদিনই দুই বন্ধু এক দুপুরের বাসে উঠে পড়ল। এমনি এমনি। কাঁধে ক‍্যামেরা, চোখে গ্লাস। বাসটা ছায়া ফেলা একটা সরু পিচরাস্তা ধরে অজানা এক শহরতলীর মধ‍্যে ঢুকে যাচ্ছে। 

     ভগবানতলা নামে একটা নিঝুম বাসস্টপে নামল। শুকনো পাতার মতো এদিক-ওদিক কিছু মানুষ ছিটিয়ে। জনবিরল বলা চলে। দেখে দুজনে খুশি হল। এরপরই নিশ্চয়ই তারা সেই জায়গাটা পেয়ে যাবে, যেখানে একটাও মানুষ চোখে পড়বে না। ভেবে একটা মেঠোপথ ধরে হাঁটতে লাগল তারা।

     হাঁটতে হাঁটতে একটা নির্জন কালভার্টের উপর এসে দাঁড়াল। কোত্থাও কেউ নেই। তাকিয়ে আপ্লুত হল। যাক, খেলাটায় তাহলে জিতছে তারা। এপাশ-ওপাশ ফিরে কোমর ফোটাল। তারপর নিশ্চিন্তে চারদিকে আর একবার চোখ বুলাতে যেতেই থুম, দূরে একটা বউ ক’টা কলাগাছের আড়ালে বাসন মাজছে!

     #

     না, জায়গাটা পাওয়া যাচ্ছে না। 

     কেউ-না-কেউ চোখে পড়ে যাচ্ছে। 

     দেখে বিনু এবার একটা চাষি-মতো লোককে হেঁকে জিগ‍্যেস করল, ‘হো দাদা, এখানে কোনও ফাঁকা জায়গা-টায়গা নেই?’

     ‘ফাঁকা বোলতি?’

     ‘ওই কোনও মানুষ-টানুষ চোখে পড়বে না।’

     ‘ক‍্যান! কী হবে!’

     ‘এমনিই। ছবি তুলব।’

     লোকটা খানিক অবাক হয়ে দূরের একটা জায়গার দিকে আঙুল উঁচিয়ে দিল। সেদিকে লম্বা ছায়া-পড়া একটা জঙ্গল। ধানখেতের মধ‍্যে দিয়ে যেতে হয়। দুই বন্ধু জমির আল ধরে সেইখানটায় পৌঁছাল। 

     গিয়ে মুগ্ধ! চারধারটা কী সুন্দর, শুনশান। কোথাও কোনও মানুষের চিহ্ন নেই। সামনেই একটা ছড়ানো বাঁওড়। পাড়ে কত রকম ফুল ফুটে আছে।

     যাক, এতক্ষণে তাহলে জায়গাটা পেয়েছে!

     ভেবে আনন্দে লাফিয়ে উঠল তারা। ক‍্যামেরা বার করল। তারপর লেন্সে চোখ লাগিয়ে যেই ছবি তুলতে যাবে, দেখল, ঘাসের ফাঁকে একটা ছেঁড়া ব্লাউজ পড়ে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *