মহাদেব মণ্ডল

লেখক পরিচিতি 

জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের চূড়াভান্ডার গ্রামে ১৯৯২ সালের ৪ মে মহাদেব মণ্ডল জন্মেছেন। বাবা মঙ্গল মণ্ডল, মা ভাগ্য মণ্ডল। গরুমারা অভয়ারণ্য এবং লাটাগুড়ি জঙ্গলের খুব কাছের গ্রামেই তিনি বড় হয়ে উঠেছেন। তাই প্রকৃতির প্রতি এক গভীর টান তাঁর ছোটবেলা থেকেই। তাঁর চর্চা এবং বিশেষ পছন্দের বিষয় মূলত কথাসাহিত্য এবং লোকসংস্কৃতি। বাংলা ভাষার অন্যতম প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।  পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ থেকেই তিনি কিন্নর রায়ের উপন্যাসে পরিবেশ ভাবনা নিয়ে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.ফিল ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীকালে রচনা করেন ‘কিন্নর রায়ের কথাসাহিত্যে পরিবেশ প্রসঙ্গ’ নামক নিজস্ব গ্রন্থ। এর আগে যুগ্ম-সম্পাদনায় ‘বাংলা ছোটগল্প : বিষয় ও নির্মাণ’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ‘প্রাজক্তা’ সহ নানা পত্র-পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। তিনি বর্তমানে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে  গবেষণারত।

বিষয় পরিচিতি 

( পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য বর্তমানে রীতিমত নানা আন্দোলন যেমন হচ্ছে তেমনি পরিবেশ রক্ষার জন্য সমস্ত দেশের বিজ্ঞানীরা নানা গবেষণাও করে চলেছেন। এ বিষয়ে পরিবেশবিদরা বর্তমানে ভীষণভাবেই চিন্তিত। এই মর্মেই নানারকম প্রবন্ধ নিবন্ধন প্রকাশিত হচ্ছে পত্র-পত্রিকায়। পিছিয়ে নেই সাহিত্যও। তাইতো বর্তমানে পরিবেশকেন্দ্রিক সাহিত্য রচিত হচ্ছে। কবি সাহিত্যিকরা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকাশ করছেন পরিবেশ সম্পর্কে তাদের ভাবনা-চিন্তা। পাঠককে সচেতন করতে সমসাময়িক পরিবেশকেন্দ্রিক সমস্যাকে সাহিত্যের বিষয় করে তুলেছেন তাই তাঁরা। এই ধরনের সাহিত্য পরিবেশ সচেতন সাহিত্য, পরিবেশকেন্দ্রিক সাহিত্য বা পরিবেশবাদী সাহিত্য নামে পরিচিত। এই ধরনের সাহিত্যের সাহিত্যমূলক ছাড়াও একটি পরিবেশগত বা পরিবেশবাদী মূল্য আছে। সাহিত্য সমালোচনায়, সাহিত্য পাঠের তাই নতুন এক প্রস্থান তৈরি হয়েছে পরিবেশবাদী সাহিত্য সমালোচনা বা ইকোক্রিটিসিজম। এই আলোচনায় মূলত বাংলা সাহিত্যের পরিবেশবাদী গল্প নিয়ে আলোচনা করা হবে, দেখার চেষ্টা করা হবে গল্পগুলি কীভাবে ইকো টেক্সট হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের লেখকরা কীভাবে তাঁদের গল্পের মধ্যে পরিবেশ ভাবনা সম্পৃক্ত করে পরিবেশবাদী সাহিত্য রচনা করে চলেছেন এবং পাঠককে পরিবেশ ভাবনায় মগ্ন করে পরিবেশকেন্দ্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য সচেতন করে চলেছেন সেই দিক নির্দেশ করার চেষ্টা করা হবে মূলত এই আলোচনায়। )

বিভূতিভূষণের ছোটগল্পে প্রকৃতিচেতনা

বিভূতিভূষণের শিল্পজগৎ প্রকৃতির বিচিত্র রূপ-রস-অনুভূতির আনন্দে বিহ্বল। প্রকৃতির সাহচর্যে তাঁর শিল্পী সত্তা লালিত হয়েছিল। ব্যক্তি জীবনেও বিভূতিভূষণ শুরু থেকেই প্রকৃতির সংস্পর্শে এসেছেন। গ্রাম বাংলার নানা জায়গায়, যশোহর জেলার বারাকপুর গ্রামে, হুগলির কাছে শাগঞ্জ কেওটায় ও মুরাতিপুরে মামার বাড়িতে তাঁর শৈশব কৈশোরের অনেকগুলো দিন কেটেছে। নির্জন আকাশ, উধাও মাঠ আর নিঃসঙ্গ নদী তীরের গোপন সাহচর্যে পৃথিবীর সাথে তাঁর প্রথম পরিচয় ঘটেছিল। জীবনের প্রারম্ভেই প্রকৃতির সাথে তাঁর যে বিস্ময়কর সাক্ষাৎ ঘটেছিল তার পরিচয় ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন রচনায়। প্রকৃতির সংস্পর্শে এলে তাঁর মন থেকে জাগতিক জীবনের দুঃখ গ্লানি সব তুচ্ছ হয়ে যেত। প্রকৃতির সুবিশাল রূপের স্পর্শ শৈশব থেকেই তাঁর মনে গভীরভাবে মুদ্রিত হয়ে গিয়েছিল। তাইতো বিভূতিভূষণের সাহিত্যে প্রকৃতির অনন্য সাধারণ রূপের বর্ণনা একটা স্বতন্ত্র আসন লাভ করেছে। প্রকৃতির থেকে মানুষকে তিনি কখনো বিযুক্ত বলে ভাবেননি। ফলে কল-কারখানা ও যন্ত্র জীবনের জটিল সমস্যা প্রকৃতিপ্রেমী বিভূতিভূষণকে ব্যথিত করেছে, সেই চিত্রই আমরা দেখতে পাই ‘পথের পাঁচালী’, ‘আরণ্যক’, ও ‘অপরাজিতা’ প্রভৃতি উপন্যাসে। বনভূমি হ্রাস পাওয়া নিয়ে লেখক কতটা ভাবিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা রয়েছে ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় পাতায়। তবে শুধু উপন্যাসের মধ্যেই লেখক বিভূতিভূষণের প্রকৃতি ভাবনা সীমাবদ্ধ নয়, দিনলিপি, ভ্রমণ কাহিনি এবং ছোটগল্পেও কথাসাহিত্যিকের প্রকৃতি প্রীতি ও প্রকৃতিচেতনা অন্যতম এক বিষয় হয়ে উঠেছে। তাঁর প্রকৃতি প্রীতিমূলক গল্পগুলি হল ‘শাবলতলার মাঠ’, ‘মৌরিফুল’, ‘মেঘমল্লার’, ‘পুঁইমাচা’, ‘কুশল পাহাড়ী’ প্রভৃতি।

   ‘শাবলতলার মাঠ’ গল্পে লেখক যন্ত্র সভ্যতার আগ্রাসী প্রভাবের ফলে প্রকৃতির বিনাশের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। বর্তমান সময়ে বিপন্ন পরিবেশ বিপন্ন পৃথিবী। পৃথিবীর এই বিপন্নতার কাহিনি নিয়েই লেখক এই ‘শাবলতলার মাঠ’ গল্পটি রচনা করেছেন। যে সময়ে এই গল্পটি লেখা সে সময় পৃথিবী এতটা বিপন্ন ছিল না তবুও প্রকৃতিপ্রেমী লেখক প্রকৃতির বিপন্নতা এতদিন আগেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাইতো আজ থেকে এত বছর আগেই যন্ত্র সভ্যতার আগ্রাসনে পৃথিবীর কী করুণ পরিনিতি হতে পারে সেই চিত্র অঙ্কন করেছেন ‘শাবলতলার মাঠ’ গল্পটিতে। গল্পের শুরুতেই দেখি লেখকের ছোটবেলায় কাটানো শাবলতলার মাঠ জুড়ে মস্ত বড় কী এক কারখানা বসছে। শুধু তাই নয় মাঠের উপরে বসেছে বড় রেললাইন। এই কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে হারিয়ে গেছে লেখকের প্রিয় শাবলতলার মাঠের পুরনো প্রকৃতি ও পরিবেশ। কারখানা স্থাপনের সাথে সাথে গাছপালা, পশুপাখি সবকিছু হারিয়েছে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব। উন্নয়ন আর পরিবেশের দ্বন্দ্বে বিপন্ন মানবত্মার কাহিনি এই ‘শাবলতলার মাঠ’ গল্পটিতে পরিস্ফুটিত হয়েছে। পৃথিবীতে যন্ত্র যত বৃদ্ধি পাচ্ছে যন্ত্রণাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যন্ত্রের দানবীয় গর্জন, গগনচুম্বি চিমনি থেকে গল গল করে বেরিয়ে আসা দৈত্যকার কালো ধোঁয়া কেবল মানুষ নয় সর্ব শ্রেণির প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করছে। গল্পে আমরা দেখতে পাই গ্রাম মাঠ দখল করে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার কাহিন—

‘কলকারখানা বসছে বোধ হয়।

কতদূর নিয়ে?

তা বাবু অনেক দূর নিয়ে উই বাজিতপুর, মনসাতলা, ছাওয়াল-মারি, বেদে-পোতা হাঁসখালির চড়া পর্যন্ত।

গ্রামগুলো সব কোথায়?

সব উঠিয়ে দিয়েছে।’

ঠিক একই চিত্র আমরা দেখি অমর মিত্রের ‘কৃষ্ণগহ্বর’ উপন্যাসে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য গ্রামের পর গ্রাম উঠিয়ে দিয়ে জমি গ্রাস করে নিচ্ছে কোম্পানির প্রয়োজনে। প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনিষ্ট করে তৈরি হচ্ছে পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি—“উত্তর কাঁঠাল বেড়ের সবটা নেবে, মণ্ডল পাড়া, কুমোর পাড়া, জেলে পাড়া, ধান জমি।” এভাবেই কারখানার প্রয়োজনে চলছে জমি অধিগ্রহণ। অমর মিত্র ১৯৯৮ সালে কারখানার বৃদ্ধির ফলে জমি অধিগ্রহণের চিত্র এঁকেছেন তাঁর ‘কৃষ্ণগব্বর’ উপন্যাসে। আর বিভূতিবাবু তার বহু আগেই ‘শাবলতলার মাঠ’ গল্পে কারখানার বৃদ্ধির ফলে প্রকৃতি ধ্বংসের চিত্র অঙ্কন করে গেছেন। সুকান্তি দত্ত তাঁর ‘যুধান কথা’ উপন্যাসেও অনুরূপ সমস্যার চিত্র তুলে ধরেছেন। বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেমন প্রয়োজন হয়ে পড়ছে বসতবাড়ির তেমনি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটাতে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে কলকারখানা। এসব কলকারখানা নির্মাণ করতে যেমন ফাঁকা জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে তেমনি দূষণ করছে প্রকৃতি ও পরিবেশকে। ‘যুধান কথা’ উপন্যাসে লেখক বলেছেন—“কর্কশ পাথুরে প্রান্তর উধাও। উধাও সেই বিকৃত জলাশয়।” এভাবেই মাঠ, ঘাট, প্রান্তর, জলাশয় সমস্ত কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে কলকারখানা নির্মাণের প্রয়োজনে। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। ধ্বংস হচ্ছে ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স। তাইতো বর্তমানে পশুপাখি তাদের বাসস্থানের পরিবেশ হারিয়েছে। যে ‘শাবলতলার মাঠ’ ঝোপ ঝাড়ে পূর্ণ ছিল তা আজ ইট-কাট-পাথরে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাইতো লেখক আক্ষেপ করে বলেছেন— ‘আমার সেই ছেলেবেলাকার শাবলতলার মাঠ কোথায় গেল? সত্যিই তা নেই। তার বদলে কতগুলো তাঁবুর সারি ইটখোলা, পাথুরে কয়লার স্তুপ, চুনের ঢিপি, লোকজনের হৈ চৈ লরির ভিড়।’ গাছপালা হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে গেছে পশু-পাখিও। তাই গল্প শেষে লেখক দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন—‘দুঃখ হলো দেখে-সে শাবলতলার মাঠ একেবারে ধংস হয়ে গিয়েছে। মুছে গিয়েছে সে সৌন্দর্য সে নির্জনতা।’ গল্পে শিল্প কারখানা তৈরির এবং তার ভয়াল পরিণীতির চিত্র পরিস্ফুটিত হয়েছে। শিল্প সভ্যতার উন্নয়ন প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে এই গল্পে সেই দৃশ্য সচেতন পাঠককে ভাবাতে বাধ্য করে।

    ‘মৌরীফুল’ গল্পটির প্রকৃতিও বিভূতিভূষণের চির পরিচিত জগতের এক টুকরো চিত্র। গল্পটি ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ১৩৩০ বঙ্গাব্দের অগ্রায়ন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। গল্পের মূল উপজীব্য হল প্রকৃতি হতে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিসত্তা প্রকৃতির বিপুল প্রান সত্তার মধ্যে এসে আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়ে। ভালো লাগার এক চিরস্থায়ী দাগ তার হৃদয়ে আঁকা হয়ে যায়। ডেপুটিবাবুর স্ত্রীর এমনই হয়েছিল গ্রামের বধু সুশীলাকে দেখে। উভয়ের বন্ধুত্বের স্মারক হয়ে রইল মৌরীফুল। রামতনু, মোক্ষদা কিশোরীরা সুশিলার বিপরীত পক্ষ। প্রকৃতি বিনষ্ট হচ্ছে জাগতিক প্রয়োজনে। আর এই জাগতিক কামনা বাসনার যুপকাষ্ঠে সুশীলা বলি হয়ে গেল। সুশীলাও পারলোনা প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন অতিবাহিত করতে।

    বিভূতিবাবুর ‘মেঘমল্লার’ গল্পে প্রকৃতি একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। বিভূতিভূষণের অন্তর প্রকৃতি অনেকটা শান্ত ও সমাহিত তাঁর লেখার প্রকৃতিও আমাদের চোখে শান্ত ও স্থির। সেই প্রকৃতি একটু যেন নির্জন। ‘মেঘমল্লার’ গল্পে বর্ণিত বৌদ্ধ বিহারের আশেপাশের প্রকৃতিও নির্জন। কিশোর অপুর মত এই গল্পে প্রদ্যুম্নও প্রকৃতিকে ভালোবাসে এবং সে নিজে সুর সাধক। যিনি শিল্পী মানুষ তিনি তো প্রকৃতিপ্রেমিক হবেই। এই গল্পে আমরা দেখি আসন্ন বর্ষার প্রকৃতি খুব সুন্দর ভাবে চিত্রিত। জৈষ্ঠ্য মাসের সংক্রান্তি তিথিতে মন্দিরে উৎসব তাই ঐ অঞ্চলের মেয়ে পুরুষ সবাই ভিড় করেছে সেখানে। প্রদ্যুম্নও সেখানে গেছে ভালো বিন বাজিয়ের সন্ধানে। মন্দির থেকে নেমে আসার সময় ভেসে ওঠে আসন্ন বর্ষার এক টুকরো ছবি—‘প্রদ্যুম্ন দেখলে দূরে নদীর ধারে মন্দিরটার চূড়া দেখা যাচ্ছে। চূড়ার মাথার উপরকার ছায়াছন্দ আকাশ বেয়ে ঝাপসা ঝাপসা পাখীর দল ডানা মেলে বাসায় ফিরছিল। আরও দূরে একখানা সাদা মেঘের প্রান্ত পশ্চিমদিকের পড়ন্ত রোদে সিঁদুরের মত রাঙা হয়ে আসছিল, চারিধারে তার শীতোজ্জ্বল মেঘের কাঁচুলি হালকা করে টানা।’

     গল্পশেষে দেখি  প্রদ্যুম্নর প্রিয়া সুনন্দা প্রদ্যুম্নকে পাওয়ার জন্য ‘কুমারশ্রেণীর বিহারে’ প্রবজ্রা গ্রহণ করে। প্রদ্যুম্ন যখন দেবীর সন্ধানে যায় তখন সে বলেছিল ফিরে আসবে। তাই সুনন্দা প্রতিদিনই অপেক্ষায় থাকে। সে তো জানে না তার প্রিয়তম পাষানবৎ হয়ে উরুবিল্ব গ্রামে রয়েছে। সে আর কোনদিনও ফিরবে না।

    এই সময় সুনন্দা একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখত, যা গল্পের কাহিনি অনুযায়ী সত্য বলেই প্রতিভাত হয় আমাদের সামনে। এই অংশেও প্রকৃতি চিত্রই প্রধান হয়ে ওঠে-‘এক এক রাতে সে বড় অদ্ভুত স্বপ্ন দেখত। কোথাকার যেন কোন এক পাহাড়ের ঘন বেতের জঙ্গল আর বাঁশের বনের মধ্যে লুকানো এক অর্ধভগ্ন পাষাণমূর্তি। নিঝুমরাতে সে পাহাড়ের বেতগাছ হাওয়ায় দুলছে, বাঁশবনে শিরশির শব্দ হচ্ছে, দীর্ঘ দীর্ঘ বেতডাটার ছায়ায় পাষাণমূর্তিটার মুখ ঢাকা পড়ে গেছে। সে অন্ধকার অর্ধরাত্রে জনহীন পাহাড়টার বাঁশগুলোর মধ্যে ঝোড়ো হাওয়া ঢুকে কেবল বাজছে মেঘমল্লার…।’ এই প্রকৃতিচিত্রণের মধ্য দিয়ে বোঝানো হয় প্রদ্যুম্ন আর জীবিত নেই। বেতের আর বাঁশের জঙ্গলের মাঝে ‘অর্ধভগ্ন পাষাণমূর্তি’ যে পদ্যুম্নই সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রকৃতির এই বর্ণনায় আমাদের হৃদয়ও রসার্ত হয়ে ওঠে। যে মেঘমল্লার ধ্বনিত হয় প্রদ্যুম্নর বাঁশিতে এবং তা তুফান তুলত সুনন্দার হৃদয়েও সেই রাগই ধ্বনিত হয়ে ফিরছে প্রদ্যুম্নর পাষাণমূর্তির কাছে। এই গল্পের ঘটনা সংস্থান ও চরিত্রের টানাপোড়েনও আন্দোলিত হয় বিভূতিভূষণের অসাধারণ প্রকৃতি বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে।

    ‘পুঁইমাচা’ গল্পের প্রথম প্রকাশ ‘প্রবাসী’ পত্রিকার ১৩৩১ সালের মাঘ সংখ্যায়। প্রকৃতিপ্রেমী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রায় দ্বিশতাধিক গল্পের মধ্যে অন্যতম প্রকৃতি নিবিড় গল্প হল ‘পুঁইমাচা’। মূলত ক্ষেন্তির জীবন বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে গল্পে, আর সেই সূত্রেই গল্পে প্রকাশিত হয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে মানবের নাড়ীর টানের চিত্র। প্রকৃতির কোলে বড় হয়ে ওঠা ক্ষেন্তির প্রকৃতি বিচ্ছিন্নতার করুণ পরিণতির চিত্র গল্পের শেষে প্রকাশিত‌। ‘পুঁইমাচা’ গল্পটি ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের আগে লেখা। এই গল্প ও উপন্যাসে আছে বাংলার গ্রামজীবন, সহজ-সরল শান্ত প্রকৃতি আর তীব্র দারিদ্র-লাঞ্চিত পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বাঁধা মানব-মানবীর জীবনের উজ্জ্বল প্রেক্ষিত।

    ‘পুঁইমাচা’ গল্পে আমরা দেখি গ্রাম বাংলার প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা এক দুরন্ত বালিকাকে তার নাম ক্ষেন্তি। সে যেমন পুঁইশাক মানুষের পুকুরপাড় থেকে তুলে এনেছে তেমনি তার বাবার সঙ্গে বরোজপোতার বনে গিয়ে মানুষের মেটে আলু চুরি করে এনেছে। শুধু তাই নয় নিজের প্রিয় শাক পুঁইয়ের চারা পুতেছে নিজের হাতেই। লেখকের বর্ণনায়— ‘…পাঁচিলের ধারে যে ছোট খোলা জমিতে কতগুলো পাথরকুচি ও কন্টিকারীর জঙ্গল হইয়াছিল, ক্ষেন্তি ছোট বোনটিকে লইয়া সেখানে মহা উৎসাহে তরকারির আওলাত করিবার আয়োজন করিতেছে এবং ভবিষ্যসম্ভাবী নানাবিধ কাল্পনিক ফলমূলের অগ্রদূত স্বরূপ বর্তমানে কেবল একটিমাত্র শির্ণকায় পুঁইশাকের চারা কাপড়ের ফালির গন্থিবদ্ধ হইয়া ফাঁসি হইয়া যাওয়া আসামীর মতন ঊর্ধ্বমুখে একখণ্ড শুষ্ক কঞ্চির গায়ে ঝুলিয়া রহিয়াছে।’ ক্ষেন্তির মা বলেছে এই খরার সময় পুঁইচারা বাঁচবে না তবুও ক্ষেন্তি প্রতিদিন জল ঢেলে এই পুঁইশাকের চারাকে বাঁচিয়ে তুলেছে। এভাবেই প্রকৃতির কোলে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ক্ষেন্তি দুরন্ত জীবন অতিবাহিত করেছে। কিন্তু মেয়েদের জীবন বৈশিষ্ট্যকে মেনে চিরকাল ক্ষেন্তি প্রকৃতির কোলে তার পিতার গৃহে কাটাতে পারেনি। কোনো এক বৈশাখ মাসে তার বিয়ে হয়েছে শহরের ধনী পাত্রের সঙ্গে —‘কিন্তু পাত্রটি সংগতিপন্ন, শহর অঞ্চলে বাড়ী, সিলেট, চু্ন, ইটের ব্যবসায় দু’পয়সা নাকি করিয়াছে, এরকম পাত্র হঠাৎ মেলাও বড় দুর্ঘটনা কিনা!’ গ্রাম থেকে উচ্ছিষ্ট হয়ে ইট কাঠ পাথরে ঘেরা বড় লোকের বাড়িতে ক্ষেন্তি অসহায় হয়ে পরে। শুধু তাই নয় প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা দুরন্ত বালিকা বড়লোক শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে নিতেও পারেনা। তাই একটি তরতাজা প্রাণ হারিয়ে যায় অকালে। এই একই দৃশ্য আমরা দেখেছি রবীন্দ্রনাথের ‘সুভা’ গল্পে সুভা কথা বলতে পারেনা, কিন্তু প্রকৃতি তার ভাষার অভাব পূরণ করে দিয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে সুভারও ছিল  ক্ষেন্তির মতোই সখ্যর সম্পর্ক সুভাও প্রকৃতিমাতাকে ছেড়ে কলকাতায় যেতে চাইনি। কিন্তু তার পিতা তাকে কলকাতায় নিয়ে বিবাহ দেয় এবং প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা প্রকৃতির কন্যা সুভা প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। তাইতো কলকাতা যাওয়ার আগের রাত্রে সুভা প্রকৃতিকে আঁকড়ে ধরে বলে—“সুভা শয়নগৃহ হইতে বাহির হইয়া তাহার সেই চির পরিচিত নদীতটে পুষ্পশয্যায় লুটাইয়া পড়িল -যেন ধরনীকে, এই প্রকাণ্ড মৃগ মানব মাতাকে দুই বাহুতে ধরিয়া বলিতে চাহে, তুমি আমাকে যাইতে দিও না মা। আমার মত দুটি বাহু বাড়াইয়া তুমিও আমাকে ধরিয়া রাখো।” ক্ষেন্তিও চেয়েছিল প্রকৃতির কোলে এইভাবে বেঁচে থাকতে কিন্তু পারেনি। একইভাবে পারেনি রবীন্দ্রনাথের ফটিক, প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে ফটিক যখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তখন সে তার মাকে বলে—“এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।” ফটিক গ্রামে প্রকৃতির মাঝে বড় হয়েছে তাইতো প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি, পারেনি শহরে মামীর কাছে প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঁচে থাকতে। সুভা ও ফটিকের মত ক্ষেন্তিও প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঁচে থাকতে পারেনি।

    ‘কুশল পাহাড়ী’ গল্পে লেখক বিভূতিভূষণ প্রকৃতির অপরূপ চিত্র যেমন এঁকেছেন তেমনি প্রকৃতির মাঝে মানুষ কতটা সুস্থ স্বাভাবিক ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেই চিত্রও অঙ্কন করেছেন। এই গল্প আরণ্যক উপন্যাসের ক্ষুদ্র রূপ বলা যায়। বন্য জীবজন্তু ও জলপ্রপাত এবং বনভূমির অপরূপ দৃশ্যে ভরপুর অরণ্যময় সুন্দরগড় স্টেট্। সেই স্থানে ঘুরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাই লেখক এখানে ব্যক্ত করেছেন। গল্পে লেখক বলেছেন—‘সুন্দরগড় অরণ্য প্রকৃতির লীলানিকেতন।’ প্রকৃতির এই লীলানিকেতনের এক টুকরো চিত্র লেখক এই গল্পে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। প্রকৃতির এই রূপ ও সৌন্দর্য যাতে হারিয়ে না যায় লেখক সেই কামনা করেছেন—‘বর্ষার দিনে পথের এই সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। সেদিন ভাবছিলুম, আজ এ বন যেন শেষ না হয়। শেষ হলেই তো মায়া ফুরিয়ে যাবে। আবার পড়বে লোকালয়, তখুনি শুরু হবে ব্ল্যাকমার্কেট খবরের কাগজ, হপ্তায়-একদিন-ভাত-খেও না উপদেশ, উদ্বাস্তু-সমস্যা। এই রকম মায়াজগতের মধ্যে দিয়ে যতদিন চলে চলুক গাড়ি।’ নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার নানা ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্ত হয়ে লেখক প্রকৃতির মাঝে দিন কাটাতে চেয়েছেন। প্রকৃতির রূপ-লাবণ্যে বিলীন হতে চেয়েছেন।

     পাহাড়ি জল অনেক উপকারী হয়, লেখক সে কথাও গল্পে বলেছেন—‘এ দেশের জলের গুন আছে বটে। আগ্নিমান্দ্যে ভুগছিলাম গত এক বছর, ক্ষুধাবোধ একেবারে ছিল না। বেশ পেট ভরে চিড়ে দই ও ফল খেয়ে ঝর্নার নির্মল জল পান করে আবার গাড়ী ছেড়ে দিলাম।’ বিশুদ্ধ পানীয় জল মানুষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে যে জলের বর্তমানে বড়ই অভাব। পাহাড়ের বিশুদ্ধ জল লেখকের পেটের সমস্যা দূর করে খিদে সঞ্চার করেছিল। ঠিক এই একই দৃশ্য আমরা অমর মিত্রের ‘হাঁসপাহাড়ি’ উপন্যাসেও দেখতে পাই। এই উপন্যাসের শুরুতেই দেখি অফিসের কেরানি রবিলোচন অসুস্থ কিছুতেই রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। ডাক্তার কবিরাজ একের পর এক বদল করেও যখন কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না তখন তার অফিসের এক বন্ধু বলে— “তুমি হাঁসপাহাড়ি চলে যাও রবিলোচন, ওখানকার জল মানেই আয়ু।” পাহাড়ের এই জল কত বিশুদ্ধ তার প্রমাণ এই গল্পেও পাওয়া যায়। তাইতো লেখক উন্নত সভ্যতা আমাদের শরীর ও মন নিস্তেজ করে দিচ্ছে বলে আক্ষেপ করেছেন আর থেকে যেতে চেয়েছেন সুপ্রাচীন প্রকৃতির কোলে—‘সব যেন এখানে সুপ্রাচীন-প্রাচীন সাধু, প্রাচীন শালবৃক্ষ, প্রাচীন শিলাসন, প্রাচীন অরণ্য-ভূমি। মনে হলো এ পরিবেশ ছেড়ে আর কোথাও যাচ্ছি নে, থেকে যাই এখানেই।’ লেখক আধুনিক শহরের সভ্যতার বৈষয়িক হিসাব, ভোটের আগের হাঙ্গামায় ফিরে না এসে থেকে যেতে চেয়েছেন প্রকৃতির কোলে। লেখক নিজেকে এই বৈষয়িক জীবনে নিজেকে বাঁধতে চাননি তাই গল্প শেষে বলেছেন—‘মানুষ মুক্ত। সে-ই নিজেকে নিজে বেঁধেচে। সে-ই অনুভব করুক সে মুক্ত। সে মানুষ, সে মুক্ত।’ মুক্ত পৃথিবী মুক্ত প্রকৃতিই মানবের বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান লেখক সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন ‘কুশল পাহাড়ী’ গল্পের মধ্য দিয়ে।

    বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদ্যন্ত একজন প্রকৃতিপ্রেমিক। তাঁর প্রত্যেকটি রচনায় প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে উপস্থিত থাকে। শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয় সেই সঙ্গে থাকে প্রকৃতি হারিয়ে যাওয়ার যন্ত্রনা। ‘আরণ্যক’-এ সত্যচরনের কাছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যেমন ধরা দিয়েছে তেমনি অরণ্য প্রকৃতিকে ধ্বংস করার জন্য বারবার সত্যচরণ ধিক্কার দিতে থাকে নিজেই নিজেকে। শেষ পর্যন্ত উপন্যাসের কথক এই কাজ ছেড়ে চলেও আসে। একইভাবে আমরা দেখি যন্ত্রসভ্যতার আগ্রাসন শাবলতলার মাঠকে গ্রাস করেছে দেখে লেখকের হৃদয় যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠেছে। কলকারখানার বৃদ্ধি কীভাবে প্রকৃতি ধ্বংস করছে সেই চিত্রই গল্পে লেখক দেখিয়েছেন কতকাল আগেই। ‘মৌরীফুল’ গল্পে প্রকৃতির অপরূপ চিত্র চিত্রিত হয়েছে। ‘মেঘমল্লার’ গল্পে প্রকৃতি ও প্রদ্যুম্ন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ‘বলাই’ গল্পে একটি গাছ যেমন বলাইয়ের প্রতিরূপ হয়ে উঠেছিল এখানেও প্রকৃতি প্রদ্যুম্নের প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে। ‘পুঁইমাচা’ গল্পে পুঁইলতার বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে গল্পের প্রধান চরিত্র ক্ষেন্তির বেড়ে ওঠাকে আশ্চর্যভাবে মিলিয়েছেন বিভূতিভূষণ। আর ‘কুশল পাহাড়ী’ গল্পে প্রকৃতির অপরূপ চিত্র যেমন প্রকাশিত, তেমনি প্রকৃতির বিশুদ্ধ জল মানবের কত উপকারি তা যেমন বর্ণিত, এই জলের অভাব মানুষের কত ক্ষতি করছে তাও বর্ণিত হয়েছে। তারসঙ্গে যন্ত্রসভ্যতা মানব জাতিকে কীভাবে বিকল করে তুলছে সে কথাও লেখক পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন‌। তাইতো গল্পগুলির মধ্যে বিভূতিবাবু শুধু প্রকৃতির চিত্র আঁকেননি, এঁকেছেন প্রকৃতি বিনষ্ট হওয়ার চিত্র। কারন তিনি জানতেন প্রকৃতি হারা হয়ে মানব একদিন বিপন্ন পরিবেশের সম্মুখীন হবে। তাই তিনি মানবজাতিকে প্রকৃতি রক্ষা করার শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁর  গল্পগুলির মধ্য দিয়ে।

 তথ্যসূত্র:

১.মিত্র, অমর: ‘কৃষ্ণগহ্বর’, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা-০৯, প্রথম প্রকাশ ১৯৯৮,পৃ-৯

২.দত্ত, সুকান্তি: ‘যুধান কথা’, শিল্পভাষা একাদেমি, কলকাতা-২৭, প্রথম প্রকাশ- ডিসেম্বর,২০০১, পৃ-১২

৩. ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ: গল্পগুচ্ছ, প্রথম খন্ড, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, বিশ্বভারতী সংস্করণ ১৩১৩, ‘সুভা’,পৃ-১৪৬

৪. ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ: গল্পগুচ্ছ, প্রথম খন্ড, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, বিশ্বভারতী সংস্করণ ১৩১৩, ‘ছুটি’,পৃ-১৪১

৫.মিত্র, অমর: ‘হাঁসপাহাড়ি’, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা-০৯, প্রথম প্রকাশ: বইমেলা জানুয়ারি ১৯৯২, প্রথম করুণা মুদ্রণ বইমেলা ২০০৬, পৃ-৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *