শুভময় সরকার
(১)
‘ওটস একদম ফ্যাটলেস…’, কে যেনো কাকে বলে উঠল। কথাগুলো কানে আসতেই তাকিয়েছিলাম, নেহাতই অভ্যেসবশত। সে তাকানোর সঙ্গে ওটসের কোনোই সম্পর্ক নেই। পাশের কাউন্টারেই দাঁড়িয়েছিল মেয়েটি, বিবাহিত বলেই মনে হলো তবে চেহারায় সেরকম বউ বউ ব্যাপারটা আসেনি। জিনস আর টপ,একদম হালফিলের চেহারা। কথাবার্তার ধরণও সেরকমই। ‘ওটস’ শুনতেই একঝাঁক বহুচর্চিত শব্দমালা পরপর মনে এলো। স্কুলের টিচার্সরুমে ওটসের উপকারিতা, কার্যকারিতার যাবতীয় বর্ণনা শুনতে শুনতেও ওটস খাবার বিন্দুমাত্র শখ হয়নি, তবে জেনে গেছি এই খাদ্যটির হাজারো গুণাবলী। বুঝেছি, এটাই এই মুহূর্তের নয়া ক্রেজ! ফ্যাটলেস, এনার্জিতে ভরপুর,খিদে মেটায় চমৎকার আর দাম নাগালের মধ্যে। সুতরাং বাজার এখন তুঙ্গে। মেয়েটি কথা বলছিল পাশের বান্ধবীটির সঙ্গে, সম্ভবত আগে পরে আরও কিছু কথা ছিল। তবে সে’সবে কান পড়েনি, আটকে ছিলাম ওই ওটসেই।
সত্যি কথা বলতে কী, এইসব শপিংমলটল আমার তেমন ভালো লাগে না। কেমন অস্বস্তি হয়। পাড়ার অনন্তদার দোকানে আমি অনেক বেশি কমফোর্টেবল। সাধারণত একা এসব মলটলে আমি আসিনা। আজ এসেছি,তবে এসব ঝাঁ চকচকে জায়গায় খুব একটা কিছু খুঁজে পাই না, সবই যেনো বড় এক ছাঁচে ঢালা,একঘেয়ে। অন্যদিন দোলা থাকে সঙ্গে। দোলার সঙ্গে দীর্ঘকালীন দাম্পত্যে কোথাও কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। পারস্পরিক টান, ভালোবাসা, নিত্যনৈমিত্তিক খিটমিট এবং কখনো কখনো ক্লান্তিকর দাম্পত্য, সবই রয়েছে যেভাবে রয়ে যায় আর দশজনের। তবু দোলা সবার থেকে কোথায় যেনো আলাদা। সবার মতো নয়, সার্বজনীন দাম্পত্যের চিহ্নগুলো থাকা সত্ত্বেও। এসব আমার নতুন মনে হওয়া নয়, বিবাহিত জীবনের স্বাদে-বিস্বাদে প্রথম দিন থেকেই মনে হয়েছিল। তবে এই মলগুলোর ভেতর এলে আমি নির্ভার, দুশ্চিন্তাহীন এক অদ্ভুত জীবনকে প্রত্যক্ষ করি। কোথায় যেনো এক ফ্যাটলেস লুক। প্রথম প্রথম এসব জায়গায় আসতে চাইতাম না, নীতিগত বিরোধিতা কিছুটা, কিছুটা মধ্যবিত্ত সংকোচ। দোলাই আমাকে এসব বাধাগুলো পেরোতে সাহায্য করেছিল নানারকম অকাট্য যুক্তি খাড়া করে। দোলা বলতো, কেনাকাটা করতে হবে না, শুধুই উইন্ডো শপিং করো কিন্তু মলে গেলে অতো মানুষের মধ্যে মন ভালো হয়ে যাবে। যাবো না যাবো না করেও একসময় যাওয়া শুরু করলাম, তারপর যাকে বলে একেবারে হাতেনাতে ফল। আমার মন ভালো হওয়া শুরু হলো। মলের ভেতরে একঘেয়ে লাগলেও একটা ব্যাপার আমার বেশ ইনটারেস্টিং মনে হচ্ছিল- পাড়ায়, রাস্তাঘাটে, সকালবিকেল বাজারে দেখা মানুষগুলোকে কেমন যেনো অন্যরকম লাগে এখানে এলে, মেট্রোরেলের গর্তে ঢুকলে যেমনটা লাগে।
আজ আমি একাই মলে। দোলা মেয়ের প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত। আমি একাই এবং কিছুটা মন ভালো করতেই। সময়ের সঙ্গে আমিও অনেক সড়গড়, দোলার কথায় ‘আপডেটেড’। চলন্ত সিঁড়িতে উঠতে কিংবা কার্ড পাঞ্চ করে, সিম্বল স্ক্যান করে বিল মেটাতে আর অসুবিধে হয় না। বেসমেন্ট,পালস-বাইট, পার্কিংলট, গ্রীনকার্ড শব্দগুলো আমাকে আর অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে না। আমি এখন পার্কিংলট থেকে বহুজাতিক সিঁড়িতে চেপে যথাস্থানে পৌঁছে যেতে পারি। স্ক্যান পে করে আমি এবার বাইরে আসি। সবাই নিজের মতো ব্যস্ত। কারো দিকে কারো তাকাবার সময় নেই। সেই নিয়ম মেনেই সেই ওটস আওড়ানো মেয়েটা বান্ধবীর সঙ্গে বেরিয়ে আসে প্রায় একই সময়ে। এই কারো দিকে না তাকানো, খেয়ালহীন থাকা এখনো সেভাবে রপ্ত করে উঠতে পারিনি। চেষ্টা যে করিনি তা নয় কিন্তু এতো ভীড়ের মাঝে প্রতিটি মানুষকে দেখতে ইচ্ছে করে আমার, নেশার মতো…! শুধু এখানে নয়, শিয়ালদা স্টেশনেও লোকাল থেকে নামা মানুষের অনন্ত ঢল দেখতাম। রানাঘাট, নৈহাটি, দত্তপুকুর লোকাল যখন থামতো, মনে হতো ট্রেনগুলো যেনো বমি করে দিচ্ছে। সে’সব অনেক পুরোনো ঘটনা। কলকাতায় পড়ার সময়। বড় শহরে গিয়ে চোখের সামনের বড় আকাশটা অনেকটা ছোট হয়ে গেলো। পাহাড়হীন ধুলিধূসর কলকাতায় মানিয়ে নিতে খানিকটা অসুবিধে হলেও নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিলাম নতুন পরিবেশে। কত রকমারি মানুষ, কত বৈচিত্র্যময় জীবন। আস্তে আস্তে ভালো লাগা শুরু হয় কলকাতার নাগরিক জীবন। অবাক হয়ে শুধু মানুষ দেখতাম। আর্ট কলেজের বন্ধুরা শিয়ালদা স্টেশনে যেতো স্টাডি ক্লাসে,আমি সঙ্গে যেতাম আর অবাক হয়ে লোকাল ট্রেন থেকে পিলপিল করে নেমে আসা মানুষগুলোকে দেখতাম। তবে তখনকার মফস্বলি বিস্ময় আর নেই আমার চোখে। ভীড়ের তারতম্যটুকু ছাড়া এখন আর আলাদা করা যায় না কলকাতা আর মফস্বলকে,বিশেষত এই শহরকে। আমার শহর জুড়েও আজ শুধুই নাগরিক বিস্তার।
আমার বাবা ছিলেন বামপন্থী রাজনীতির মানুষ। চিরকাল সাধারণ জীবনযাপন করলেও স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন আমায়। তবে বাবার থেকে ছোটকাকু আমাকে বেশি আকর্ষণ করতো। ভাবনাগুলো, স্বপ্নগুলো একদম অন্যরকম । বাবার থেকে বয়েসে অনেক ছোট ছিল কাকু। ছোটোকাকুর মুখেই শোনা আরমাডিলোর গল্প, কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার, নভেম্বর বিপ্লব, চে গেভারা আর কাস্ত্রোর গল্প। সাধাসিধে চেহারার ছোটকাকুর অসম্ভব ধারালো চোখদুটো টানতো আমায়, চশমা খুললেই অন্যমানুষ একদম। কলকাতার নামী কলেজে পড়তো। ছুটির সময় বাড়ি এলে অপেক্ষা করে থাকতাম গল্প শোনার জন্য। কলকাতার গল্প শুনে শুনে ওই শহরে পড়তে যাবার স্বপ্নটাও দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। তারপর পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। একদিন হারিয়ে গেলো ছোটকাকু। বারুদের রাজনীতি করতো, সবাই ভেবেছিলো পুলিশ এনকাউন্টারে মারা গেছে। বহু খোঁজ করার পরও বেঁচে থাকার কোনোরকম সম্ভাবনা না দেখে ধরেই নেওয়া হয়েছিল কাকু আর বেঁচে নেই। কিন্তু বহুদিন পর কোনো এক অন্ধকার রাতে সবাইকে চমকে দিয়ে ফিরে এসেছিল ছোটকাকু। বাবা তখনো বেঁচে। সেই থেকে কাকু প্রায় ঘরবন্দী, নিজের মতো সময় কাটায়। সে রাতে কাকুর আচমকা ফিরে আসা এতোটাই চমকে দিয়েছিলো সবাইকে যে প্রথমটায় কেউ বিশ্বাসই করতে চায়নি। ছোটকাকুর চেহারাটা অনেক পাল্টে গিয়েছিল। একমুখ দাড়িগোঁফের আড়ালে উজ্জ্বল চোখদুটো অবশ্য একই রকম, কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফিরে আসার পর প্রথম কিছুদিন বেশিরভাগ সময়ই চুপ করে থাকতো ছোটকাকু, একলাই সময় কাটাতো নিজের ঘরে। তারপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরা। ছন্দ যদিও আসছিল না সেভাবে, তবু মনে হচ্ছিলো ফিরতে চাইছে মানুষটা। কাকুর নিখোঁজ হওয়া এবং ফিরে আসার মাঝে কেটে গেছে দীর্ঘ একটা সময়,পাল্টে গেছে অনেক কিছু। দেশ, বিশ্বের কথা ছেড়েই দিলাম, একদম ব্যক্তিগত চারপাশটাও প্রতিনিয়ত বিস্ময়ের উদ্রেক করে আমার, আর দীর্ঘদিন পর ফেরা ছোটকাকুর তো করাটাই স্বভাবিক। তবে অনুভব করছিলাম চারপাশের এই পাল্টে যাওয়াটা ছোটকাকু সেভাবে নিতে পারছে না। প্রথম অনুভব করি এক বিকেলে বেরিয়ে। আমাদের বাড়ি পেরিয়ে চাররাস্তার মোড়ে পতিতপাবন বোসের পুরোনো বাড়িটা ভেঙে এখন বিশাল এক ফ্ল্যাটবাড়ি। একদা বর্ধিষ্ণু বোসবাড়ির
তখন পড়ন্তবেলায়। ফ্ল্যাটবাড়িটার পাশ দিয়ে যেতে যেতে ঘুরে তাকিয়েছিলো ছোটকাকু,তারপর প্রশ্ন- ওরা কোথায় গেছে জানিস?
-নাহ! পাড়া ছেড়ে গেছে অনেকদিন। কোথায় কে জানে…!
এরপর আর বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে চায়নি কাকু। বাড়ি ফিরে এসেছিল। তারপর আস্তে আস্তে ছোটকাকু অদ্ভুত এক বিষণ্ণতায় থাকতো একা একাই। বাড়িতে থেকেও নেই। এরপর আরও অনেকটা সময়। দোলার এ বাড়িতে আসা বউ হয়ে, বাবার চলে যাওয়া সব কিছুতেই ছোটকাকুর সেই নির্লিপ্ত উপস্থিতি। কোনো চাহিদা নেই, অভিযোগ নেই। এতো নির্লিপ্তি সত্ত্বেও আজও ছোটকাকু আমার জীবনে এক অনিবার্য আকর্ষণ। দোলাও খুব খেয়ালে রাখে, যাকে বলে কেয়ারিং। বয়েস বেড়েছে। আমাদের দু’জনের জীবনে ছোটকাকুই অভিভাবক। কেউ নেমত্তন্ন করতে এলে আমরা কাকুর নাম আলাদা করে লিখে দিতে বলি। শুধু সেই পতিতপাবন বোসের বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট হয়ে যাওয়ায় কাকুর প্রতিক্রিয়া দেখে সেই বয়েসে মনে হয়েছিল ছোটকাকুরা তো পরিবর্তনের কথা, সব কিছু পাল্টে দেবার কথা ভাবে, নতুনকে মেনে নেবার মতো খোলা মন তৈরি করতে বলে আর সামান্য পুরোনো,বিবর্ণ, ভগ্নপ্রায় বাড়িটার জায়গায় নতুন ফ্ল্যাটবাড়িটাকে মেনে নিতে পারছে না কেনো…! প্রশ্নগুলো মনে এলেও ছোটকাকুকে জিজ্ঞেস করার সাহস পেতাম না। এর অনেকবছর পরে বাংলা স্যার শৈলেনবাবুর ক্লাসে কথাগুলো শুনে ছোটকাকুর কথা মনে হতো। স্যার বলতেন-‘ যা পুরোনো,যা জীর্ণ তাকে সরিয়ে নতুনেরে করো আহবান…’! স্যারের কথাগুলো ব্যারিটন ভয়েসে শুনতে শুনতে ততোদিনে বুঝেছি স্যারের কথা আর ছোটকাকুদের কথাগুলো আসলে একই ছিলো, একজন সুললিতভাবে আর ছোটকাকুরা চাচাছোলা, কিন্তু কথাগুলো আলাদ
(২)
বেশ রাত এখন। সন্ধেবেলা মলে দেখা মেয়েটার কথা মনে পড়ে। তন্বী সুন্দরী, স্বাস্থ্য সচেতন,লতার মতো বেড়ে ওঠা জীবন। চিন্তাহীন, শুধু নিজেকে নিয়েই বেঁচে থাকা, বাকি জগৎ নিয়ে ভাবনা নেই আর ঠিক এই জায়গাটাতেই আমার ছোটকাকু হেরে গেলো। রাত বাড়লে আমি আমার পাড়াটা দেখে নিতে পারি। তন্ময়দের পুরোনো বাড়িটা মনে পড়ে না আর। নতুনের চাপে পুরোনো স্মৃতিগুলোও সান্নিধ্য হারায়। আমি পুরোনোকে ঝাপসা করে দিয়ে নতুন সান্নিধ্যে বাঁচতে শিখে গেছি, ছোটকাকু পারেনা, তাই প্রায় ঘরবন্দী। বহুবার বলা সত্ত্বেও সেভাবে পারিবারিক আড্ডায় আসেনি। নিজের ঘরেই সময় কাটায়। দোলা জোর করে নিয়ে এসেছে কয়েকবার, কিছুক্ষণ থেকে, চা খেয়ে ফিরে গেছে নিজস্ব আস্তানায়। এখন অনেক রাত, ইচ্ছে করে ছোটকাকুর ঘরে যেতে। আমি নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি,দরজা আধবন্ধ করে,অঘোরে ঘুমোচ্ছে দোলা। গৌতম বুদ্ধ তো এভাবেই কোনো এক রাতে বেরিয়ে এসেছিলেন স্ত্রী যশোধরাকে ফেলে। আমার কোনো নির্বাণ লাভের বাসনা নেই, অভাব, অনটন, না পাওয়া কিচ্ছু নেই কিন্তু কৃচ্ছসাধন করে, স্বপ্ন দেখে সারাজীবন জাস্ট ফুঁকে দেওয়া ছোটকাকুর কাছে এতো রাতেই যেতে ইচ্ছে করে আমার। ঘর থেকে বেরিয়ে কাকুর বন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়াই। দরজার তলা দিয়ে মৃদু আলোর রেখা, টেবল ল্যাম্পের আলো। সেই ছেলেবেলার মতো দ্বিধা নিয়েই দরজায় টোকা দিই। স্যান্ডোগেঞ্জি আর পাজামায় বেরিয়ে আসে কাকু, চিন্তিত মুখ -‘এতো রাতে! শরীর খারাপ হলো নাকি?’, আমার মুখ দেখে আস্বস্ত হয়ে দরজা ছেড়ে বলে-‘আয়’। টেবলল্যাম্পের আলোয় কাকুর অবিন্যস্ত চেহারা, টেবলে ছড়িয়ে থাকা বইপত্র, রাতজাগা পেঁচার মতো চোখ। আমি ছোটবেলার সেই পরিচিত গন্ধটা আবার পাই। মুখোমুখি বসি আমরা,কাকু আমাকে ছোটবেলার মতো গল্প বলা শুরু করে- ‘ সেটা ছিলো আটষট্টির শেষদিক,পুলিশ অফিসারের তিরবিদ্ধ হওয়ার কাউন্টার অ্যাকশনে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘিরে ফেলে গোটা গ্রাম,কিন্তু প্রতিরোধ প্রস্তুত ছিলো। শয়ে শয়ে পুরুষ-মহিলা তির-ধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল…’! আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকি ক্ষয়ে যাওয়া মানুষটার মুখের দিকে আর কাকু বলে চলে বারুদগন্ধের গল্প।
অনেক রাতে ঘরে ফিরে নিশ্চুপে শুয়ে পড়ি দোলার পাশে। তারপর শেষরাতে একটা মজার স্বপ্ন দেখি আমি- সন্ধের শপিংমলের সেই তন্বী মেয়েটা ঝকঝকে একটা শোরুমের সামনে দাঁড়িয়ে ওটসের খাদ্যগুণ নিয়ে আলোচনা করছে, ভীড়ের মধ্যে আমিও মুগ্ধ হয়ে শুনছি পেশি এবং মস্তিষ্কের সুরক্ষায় ওটসের কোনো বিকল্প নেই; সেই একই মুগ্ধতায়, যে মুগ্ধতায় শুনি ছোটকাকুর কথা।
তারপর বেরিয়ে আসি মল থেকে, মলের বাইরে একটি আদিবাসী চা-শ্রমিক দম্পতির বিশাল মূর্তি। এখানেই আগে চা বাগান ছিল, মনে পড়ে আমার। মূর্তির নীচে হঠাৎ দেখতে পাই আমাদের কলেজজীবনের সেই পাগলা অনিমেষকে, আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে, আমি কাছে যাই, সেই একই স্টাইলে অনিমেষ বলে ওঠে- টোটাল কনফিউজড, বুঝলি…! যেভাবে বলে উঠতো কলেজ ইলেকশনে জেতার পর উল্লাসের বিজয় মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে। শুনেছি, অনিমেষ পরে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল।